ড্রামে বাজারজাত ভোজ্য তেলের ৫৯ শতাংশ ভিটামিন ‘এ’-সমৃদ্ধ নয়
স্বাস্থ্যবিষয়ক কর্মশালায় বক্তারা
জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় সবার জন্য ভিটামিনসমৃদ্ধ নিরাপদ ভোজ্য তেল নিশ্চিতকরণ জরুরি বলে মতপ্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেছেন, আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণাকেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর,বি) ২০১৭ সালের গবেষণায় দেখা গেছে, মোট ভোজ্য তেলের ৬৫ শতাংশ ড্রামে বাজারজাত করা হয়। যার ৫৯ শতাংশই ভিটামিন ‘এ’-সমৃদ্ধ নয় এবং ৩৪ শতাংশে সঠিকমাত্রায় ভিটামিন ‘এ’ নেই। মাত্র ৭ শতাংশ ড্রামের খোলা তেলে আইনে নির্ধারিত ন্যূনতম মাত্রায় ভিটামিন ‘এ’ পাওয়া গেছে। গতকাল বুধবার রাজধানীর বিএমএ ভবনে ‘সবার জন্য ভিটামিন সমৃদ্ধ নিরাপদ ভোজ্য তেল : অগ্রগতি, বাধা ও করণীয়’—বিষয়ক কর্মশালায় বক্তারা এসব কথা বলেন। গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) এবং ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ এই কর্মশালার আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে বক্তারা জানান, ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধকরণ ছাড়া ভোজ্য তেল বাজারজাতকরণ দণ্ডনীয় অপরাধ, একই সঙ্গে জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর উপকরণ দিয়ে তৈরি প্যাকেটে বা পাত্রে ভোজ্য তেল বাজারজাতকরণ সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। জাতীয় মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট জরিপ-২০১১-১২ অনুযায়ী, প্রাক্-বিদ্যালয়গামী প্রতি পাঁচ জন শিশুর মধ্যে এক জন ভিটামিন ‘এ’ এবং দুই জন ভিটামিন ডি-এর ঘাটতিতে ভুগছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার ভোজ্য তেলে ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধকরণ আইন প্রণয়ন করেছে। তবে ড্রামে বাজারজাতকৃত খোলা ভোজ্য তেল এক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করছে।
আলোচকরা আরো জানান, নন-ফুড গ্রেডেড উপকরণে তৈরি কেমিক্যাল, লুব্রিকেন্ট/মবিল বা অন্যান্য পণ্য সংরক্ষণে ব্যবহৃত ড্রাম ভোজ্য তেল পরিবহনে ব্যবহার করা হয়। তাই ড্রামে বাজারজাতকৃত খোলা ভোজ্য তেল অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর এবং ভেজাল মেশানোর সুযোগ থাকে। এছাড়া এসব পুরাতন ড্রামে কোনো প্রকার লেবেল এবং উত্স শনাক্তকরণ তথ্য যুক্ত না করায় তেল সরবরাহের উৎস চিহ্নিত করা সম্ভব হয় না। যা আইনের কার্যকর বাস্তবায়নেও বাধা সৃষ্টি করে। অস্বাস্থ্যকর ভোজ্য তেল মানুষের মধ্যে নানা ধরনের অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ড্রামে ভোজ্য তেল বাজারজাতকরণ বন্ধ করতে হবে। ড্রামে বাজারজাতকৃত ভোজ্য তেলের ক্ষতিকর দিকগুলো চিহ্নিত করে শিল্প মন্ত্রণালয় এক নির্বাহী আদেশে জুলাই ২০২২-এর পর থেকে ড্রামে খোলা সয়াবিন তেল এবং ডিসেম্বর ২০২২ এর পর থেকে খোলা পাম তেল বাজারজাতকরণ বন্ধের নির্দেশনা প্রদান করেছে। তবে এই নির্দেশনার কার্যকর বাস্তবায়ন এখনো দেখা যায়নি। ভোজ্য তেল খাদ্যপণ্য বিধায় এটি নিরাপদভাবে (প্যাকেজিং, মোড়কাবদ্ধভাবে) ভোক্তার কাছে পৌঁছাতে সংশ্লিষ্ট নিরাপদ খাদ্য আইন, বিএসটিআই আইন, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, মোড়কাবদ্ধ খাদ্য লেবেলিং প্রবিধানমালা প্রভৃতির যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে শিল্প মন্ত্রণালয়, বিএসটিআই, ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরকে একযোগে কাজ করতে হবে। ড্রামের অস্বাস্থ্যকর খোলা ভোজ্য তেল পরিহার করতে ভোক্তাদের মধ্যে জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। একই সঙ্গে, দেশে অসংক্রামক রোগের প্রকোপ মোকাবিলায় ভোজ্য তেলে ভিটামিন ‘ডি’-সমৃদ্ধকরণের বিষয়েও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। ভিটামিন এ-এর অভাবে অন্ধত্ব, গর্ভকালীন মাতৃমৃত্যুসহ নানাবিধ শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি রিকেটস-এর পাশাপাশি হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিসের মতো অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
অনুষ্ঠানে আলোচক ছিলেন বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউট (বিএসটিআই)-এর ডেপুটি ডিরেক্টর রিয়াজুল হক, গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ইমপ্রুভড নিউট্রিশন (গেইন)-এর লার্জ স্কেল ফুড ফর্টিফিকেশন প্রোগ্রামের পোর্টফোলিও লিড আশেক মাহফুজ, সাংবাদিক মো. শফিকুল ইসলাম এবং প্রজ্ঞা’র নির্বাহী পরিচালক এ বি এম জুবায়ের। বিষয়ভিত্তিক উপস্থাপনা তুলে ধরেন ব্র্যাক জেমস পি গ্রান্টস স্কুল অব পাবলিক হেলথ-এর অ্যাসোসিয়েট সায়েন্টিস্ট আবু আহমেদ শামীম, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের কনসালট্যান্ট সাবেক অতিরিক্ত সচিব মুশতাক হাসান মুহাম্মদ ইফতিখার ও প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. রীনা রাণী পাল এবং কর্মসূচি প্রধান হাসান শাহরিয়ার।