Bangladesh

সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের কাজ পাচ্ছে শেভরন

মার্কিন প্রতিষ্ঠান শেভরনের বিনিয়োগ আগ্রহকে ইতিবাচক বলছেন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী

বঙ্গোপসাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান আগামী মার্চের প্রথম সপ্তাহে করা প্রস্তুতি নিয়েছে সরকার। এর আগে মার্কিন কোম্পানি এক্সন মবিলের দেওয়া প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছিল জ্বালানি মন্ত্রণালয়। স্থলভাগের পর এবার সমুদ্রে গ্যাস অনুসন্ধানে বিনিয়োগ করতে চায় যুক্তরাষ্ট্রের বহুজাতিক কোম্পানি শেভরন। এরইমধ্যে সাগরের জরিপের তথ্য-উপাত্ত কিনেছে প্রতিষ্ঠানটি। আগামী মার্চে সাগরে গ্যাস অনুসন্ধানে দরপত্র ডাকা হলে তাতে অংশ নেবে শেভরন। বাংলাদেশে মার্কিন প্রতিষ্ঠান শেভরনের বিনিয়োগ আগ্রহকে ইতিবাচক বলছেন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। গতকাল মঙ্গলবার শেভরনের বিবিয়ানা গ্যাস ফিল্ড পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এক ব্রিফিংয়ে প্রতিমন্ত্রী এতথ্য জানান।

এর আগের বিএনপি সরকারের আমলে স্বাক্ষরিত ১৯৯৩ সালে পিএসসি (উৎপাদন বণ্টন চুক্তি) অনুসারেই এ বাস্তবায়ন হবে নাকি নতুন পিএসসি করা হবে তা বিশ্লেষণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার। দেশে প্রাকৃতিক গ্যাসের সবচে বড় যোগানদাতা মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানি শেভরন বাংলাদেশ। হবিগঞ্জের বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্র পরিচালনার দায়িত্বে থাকা মার্কিনি প্রতিষ্ঠানটির বিনিয়োগ চার বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। সমুদ্রের তথ্য বিশ্লেষণের কথা জানিয়ে শেভরন বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট এরিক এম ওয়াকার বলেন, গ্যাস অনুসন্ধানে অংশ নিতে চান তারা। সমুদ্রে গ্যাস অনুসন্ধান এবং শেভরনের বিনিয়োগ আগ্রহ প্রসঙ্গে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী বলেন, ভালো সম্ভাবনা নিয়ে কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি। সিলেট গ্যাসফিল্ডসহ দেশি কোম্পানিগুলোকে শেভরনের সাথে সমন্বয় করে প্রযুক্তি ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। গ্যাস উৎপাদনে শেভরনকে নতুন করে ৬০ কিলোমিটার এলাকা বরাদ্দ দিয়েছে পেট্রোবাংলা। সেখান থেকে উত্তোলনযোগ্য গ্যাসের দাম কতো হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যান জানান, কমিটি গঠনের মাধ্যমে বিষয়টি যাচাই করা হচ্ছে। বিবিয়ানা, জালালাবাদ ও মৌলভীবাজার – দেশের এই তিনটি গ্যাসক্ষেত্র পরিচালনা করছে শেভরন। জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী বলেন, শেভরন বাংলাদেশে দীর্ঘসময় ধরে কাজ করছে। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ উন্নয়ন পরিকল্পনায় তারা থাকতে চায়। তারা আরো গ্যাস অনুসন্ধান করতে চায়। অনুসন্ধানের বিষয়টি নিয়ে খুবই উদগ্রীব শেভরন।’ শেভরনের অধিভুক্ত এলাকায় নতুন করে গ্যাস পাওয়ার বিষয়টি নিয়ে নসরুল হামিদ বলেন, ‘তারা যেভাবে বুস্টার কম্প্রেসার বসাচ্ছে, নতুন প্লান্টের দিকে যাচ্ছে, তাতে একটা ভালো সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে নতুন এলাকা থেকে গ্যাস পেতে আরো দু-তিন বছর লাগবে। সেই পরিকল্পনা আমরা দেখেছি, আমরা আশাবাদী। বিবিয়ানায় নতুন করে ২৭ ও ২৮ নম্বর কূপ খনন করছে শেভরন।

সেখানে ভালো সম্ভাবনার কথা এরই মধ্যে পেট্রোবাংলাকে জানিয়েছে মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানিটি। সেটি পেলে দেশে গ্যাসের মজুদ আরো বেড়ে যাবে। শেভরনকে নতুন করে ৬০ বর্গকিলোমিটার এলাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সেখানে ১ দশমিক ৬ ট্রিলিয়ন ঘনফুট (টিসিএফ) গ্যাস থাকতে পারে। এখানে গ্যাসের দাম কি আগের চুক্তি অনুসারেই হবে নাকি নতুন করে চুক্তি হবে এমন প্রশ্নের জবাবে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার বলেন, এ বিষয়ে একটা কমিটি গঠন করে দেয়া হয়েছে, তারা এটি যাচাই-বাছাই করছে। শেভরনকেও একটি পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনা জমা দিতে বলা হয়েছে। শেভরন ও পেট্রোবাংলার আইনজীবীরা বিষয়গুলো বিশ্লেষণ করে দেখবে। আগের স্বাক্ষরিত (১৯৯৩) পিএসসি (উৎপাদন বণ্টন চুক্তি) অনুসারেই এ বাস্তবায়ন হবে নাকি নতুন পিএসসি করা হবে তা বিশ্লেষণ চলছে। দেশে গ্যাস সরবরাহ ব্যবস্থাপনায় শেভরন বাংলাদেশের বড় অংশীদার। এখানে কোম্পানিটির প্রায় ৪ বিলিয়ন (৩ দশমিক ৯ বিলিয়ন) ডলারের বিনিয়োগ রয়েছে। পিএসসি (উৎপাদন বণ্টন অংশীদারত্ব) চুক্তির আওতায় তারা এ দেশে ২৮ বছরের বেশি সময় ধরে কাজ করছে। দেশের তিনটি গ্যাস ফিল্ডের পরিচালনায় থাকা শেভরনের নিরাপত্তার বিষয়টি উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, শেভরন বিশ্বমানের কোম্পানি। তারা অত্যাধুনিক সেফটি ও সিকিউরিটি নিয়ে আমাদের গ্যাস ফিল্ডগুলো পরিচালনা করছে। শেভরন গ্যাসের নতুন মজুদ নিয়ে পেট্রোবাংলার কাছে একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।

পেট্রোবাংলা এখনো তা প্রকাশ করেনি। নতুন মজুদ সম্পর্কিত তথ্য পেট্রোবাংলা কবে নাগাদ প্রকাশ করবে এমন প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, নতুন মজুদের বিষয়টি নিয়ে পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যান বলতে পারবেন। তারা এটা নিয়ে বসে আছে। এটা নিয়ে কাজ করার জন্য আমরা তাদের জানিয়েছি। মার্চের প্রথম সপ্তাহে বঙ্গোপসাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হবে। মার্কিন কোম্পানি এক্সন মবিলের দেওয়া প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছে জ্বালানি মন্ত্রণালয়। তাদের আন্তর্জাতিক দরপত্রে অংশ নিতে বলা হয়েছে। গত ২০ ফেব্রুয়ারি বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের সঙ্গে বৈঠক করেন এক্সন মবিলের কর্মকর্তারা। এ সময় নসরুল হামিদ বলেন, আগামী মার্চের প্রথম সপ্তাহে সমুদ্রে ২৬টি ব্লকের জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হবে। তাই এ মুহূর্তে এক্সন মবিলের প্রস্তাব গ্রহণ করা হচ্ছে না। তিনি জানান, এক্সন মবিল প্রথমে সাগরে ব্লক ইজারা চেয়ে চিঠি দিয়েছিল। তার কিছুদিন পর তারা ২ডি সিসমিক জরিপ করার আগ্রহের কথা জানায়। তাদের বিডিং রাউন্ডে অংশ নেওয়ার বিষয়ে আগ্রহ আছে কি না, জানতে চেয়েছি। এক্সন মবিলের প্রতিনিধি দল কথা বলে জানাতে চেয়েছে। বঙ্গোপসাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে গত বছরের মার্চে প্রথম আগ্রহ প্রকাশ করে এক্সন মবিল। সে সময় তারা গভীর সমুদ্রের ১৫টি ব্লক ইজারা চেয়েছিল। গত ১৬ জুলাই আরেকটি চিঠি দেয় মার্কিন কোম্পানিটি। সেই চিঠিতে ২৫ থেকে ৩০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব দেওয়া হয়। এদিকে মার্কিন কোম্পানি শেভরন বাংলাদেশেও গভীর সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের আগ্রহের কথা জানিয়েছে।

Show More

7 Comments

  1. Unquestionably consider that which you said.
    Your favorite reason appeared to be at the internet
    the simplest thing to be mindful of. I say to you, I definitely get irked while folks consider concerns that they just don’t know about.

    You managed to hit the nail upon the top and outlined out the whole
    thing with no need side-effects , folks can take a signal.
    Will likely be again to get more. Thanks

    My blog post – vpn coupon code ucecf

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button