যুদ্ধ হলে নাগরিকদের নিরাপত্তায় প্রস্তুত ফিনল্যান্ডের ‘পাতাল জগৎ’
মাত্র আধ মিনিটেই একেবারে ভিন্ন এক জগতে পৌঁছানো যায়। ফিনল্যান্ডের রাজধানী হেলসিংকি শহরের ৩০ মিটার নীচে সেই পাতাল জগত। সুড়ঙ্গ ও ঘরের বিশাল এক গোলকধাঁধা নয় লাখ মানুষকে সুরক্ষা দিতে পারে। যুদ্ধের সময় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, রাসায়নিক অস্ত্র ও তেজস্ক্রিয় বিকিরণ থেকে বাঁচতে তারা সেখানে আশ্রয় নিতে পারেন।
হেলসিংকির অন্যতম জনপ্রিয় প্লেগ্রাউন্ডে ছোট-বড় সবার জন্য হকির মাঠ, জিম, ক্যান্টিন, গাড়ির পার্কিং রয়েছে। অনেকে আবার সেখানে জন্মদিন পালন করতেও আসে। শহরের হাকেনিমি এলাকায় সবচেয়ে বড় বাংকার রয়েছে। তার মধ্যে দু-দু’টি ফুটবল স্টেডিয়াম ঢুকে যেতে পারে। যুদ্ধ ঘটলে খুব কম সময়ের মধ্যে সেটি পুরোপুলি চালু এয়ার রেড শেল্টারে রূপান্তরিত করা সম্ভব।
হেলসিংকি সিটি রেসকিউ ডিপার্টমেন্টের টোনি রাস্ক বলেন, ‘স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে একটি বাংকার কয়েক ঘণ্টা থেকে কয়েক দিন পর্যন্ত কাজে লাগানোর ব্যবস্থা রয়েছে। বেশিরভাগ শেল্টারে আমরা প্রয়োজনে সেই সময়সীমা আরও বাড়াতে পারি। তবে সেখানে মানুষ থাকলে অনেক সমস্যাও হবে। মানুষের শরীরের উষ্ণতা একটা সমস্যা। আমি একাই যেমন সব সময়ে প্রায় একশো ওয়াট উত্তাপ সৃষ্টি করছি।’
জরুরি পরিস্থিতিতে প্রায় ছয় হাজার মানুষ এমন এক বাংকারে আশ্রয় নিলে সমস্যা দেখা দেবে। এমন সমস্যা অবশ্য শুধু হেলসিংকিতেই সীমাবদ্ধ নয়। বাংকারটি মাটির নীচে পাথুরে কাঠামোর মধ্যে রয়েছে। সেই পাথর স্থিতিশীলতা দিলেও খুবই শীতল।
সেই বাংকারে অনেক ব্যবস্থা করতে হয়। যুদ্ধ ঘটলে বিশাল হল প্রয়োজন অনুযায়ী অনেক ছোট ঘরে ভাগ করতে হবে। হাজার হাজার মানুষ পাতাল জগতেও যাতে অনেক সময়ের জন্য বাস করতে পারেন, সেই ব্যবস্থা রাখা জরুরি।
টোনি রাস্ক বলেন, ‘এখানে কিছু মানুষের মৃত্যু হবে। শিশু জন্মগ্রহণ করবে। অসুস্থ মানুষ, মনে সুখ-দুঃখওলা মানুষও থাকবেন। একেবারে স্বাভাবিক সমাজ শেল্টারের মধ্যেও চলতে থাকবে।’
ফিনল্যান্ডের সঙ্গে রাশিয়ার প্রায় ১,৩০০ কিলোমিটার স্থলসীমান্ত রয়েছে। অনেক বছর ধরে দেশটি সামরিক জোট ন্যাটোর অংশ হতে চায়নি। সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশটি ন্যাটোরও সদস্য হয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধ ফিনল্যান্ডের মানুষের মনোভাব বদলে দিয়েছে। বেশিরভাগ মানুষ আরও সুরক্ষা এ নিরাপত্তা চাইছেন।
হেলসিংকি সিটি রেসকিউ ডিপার্টমেন্টের টোনি রাস্ক বলেন, ‘আমরা এই আশা নিয়ে আমাদের কাজ করে চলেছি, যে কোনোদিন এই সব বাংকার ব্যবহার করতে হবে না। তা সত্ত্বেও আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। এমনটা যে ঘটতে পারে, ইতিহাস আমাদের সেই শিক্ষা দিয়েছে।’
হেলসিংকির মানুষ এমন পরিস্থিতির জন্য প্রস্তু00 ত00 থাকতে চান। প্রয়োজনে তারা রাজধানী শহরের ৩০ মিটির নীচে বাংকারগুলির মধ্যে আশ্রয় নিতে পারেন।./