মেগা প্রকল্প নয় কর্মসংস্থান বাড়ান
আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটকে সামনে রেখে দেশের বেশ কয়েকজন অর্থনীতিবিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। বৈঠকে শুধু প্রবৃদ্ধির ওপর জোর না দিয়ে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা জোরদারের পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা। তারা অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমানো ও মেগা প্রকল্প না নিয়ে শিক্ষা স্বাস্থ্য ও কর্মসংস্থানমূলক কর্মকান্ড বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। এ ছাড়া ঋণখেলাপিদের তালিকা প্রকাশের আহ্বান জানিয়েছেন।
গতকাল রবিবার রাজধানীর ইস্কাটনে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় এ বৈঠক হয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) চেয়ারম্যান ড. রেহমান সোবহান, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবুল বারকাত, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা রহমাতুল মুনিমসহ ২০ জনের মতো অতিথি।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সবাই প্রশংসা করেছেন যে আমরা সঠিক পথে আছি। ভালোভাবে অর্থনীতি হ্যান্ডেল করছি। কিন্তু কিছু সমস্যা আছে সেগুলো সবাই জানি।’
অর্থমন্ত্রী জানান, অর্থনীতিবিদরা বলেছেন যে এখন পর্যন্ত সব ভালো আছে, কিন্তু ভবিষ্যতে সমস্যা তৈরি হবে। এজন্য আগে থেকেই চেষ্টা করতে হবে। তারা বলেছেন, সমস্যাগুলো সম্পর্কে সজাগ থাকতে হবে। তিনি বলেন, যেসব খাতে সংস্কার দরকার সেগুলো অবশ্যই করতে হবে। তবে খেলাপি ঋণ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি কোনো জবাব দেননি।
বৈঠকে সিপিডির দেওয়া পরামর্শ সম্পর্কে জানতে চাইলে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, প্রবৃদ্ধির ওপর জোর না দিয়ে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতায় জোর দেওয়ার কথা বলেছেন তারা। এ ছাড়া বাজেটের ঘাটতি মেটাতে কর আদায় বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। কর আদায়ে অটোমেশনের প্রস্তাব দিয়েছেন, তবে সেখানে যেন ম্যানুয়াল সিস্টেম না থাকে। কর নীতিমালা প্রণয়ন ও আদায় আলাদা করতে হবে। কর কর্মকর্তাদের ক্ষমতা কমাতে হবে।
এবারের বাজেটকে সংকোচনমূলক করারও পরামর্শ দিয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘একদিকে আমরা মূল্যস্ফীতির চাপে রয়েছি, অন্যদিকে রিজার্ভ ঘাটতি রয়েছে। সামগ্রিকভাবে প্রশাসনিক ব্যয় কমানোর প্রস্তাব দিয়েছি।’
ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘আমরা পরোক্ষ করের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে প্রত্যক্ষ কর বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছি। শুধু শিল্পে নয়, কৃষিতে বৈচিত্র্যায়ণে সহায়তা দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। আমাদের প্রবৃদ্ধি বাড়লেও কর্মসংস্থান বাড়ছে না, এক খাতে বড় বিনিয়োগ দরকার। মানবসম্পদের ওপর বিনিয়োগ দরকার, শিক্ষার গুণগত মান বাড়ানো প্রয়োজন। কারণ লেখাপড়া করেও অনেকেই চাকরি পাচ্ছে না। কারিগরি শিক্ষায় কর্মসংস্থান হচ্ছে বেশি, তাই এ খাতেও গুরুত্ব দেওয়া দরকার।’
তিনি বলেন, খেলাপি ঋণের যে চিত্র তুলে ধরা হচ্ছে, বাস্তবে তা আরও বেশি। আমরা পরামর্শ দিয়েছি কারা কারা খেলাপি তাদের নাম প্রকাশ করা হোক। স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ কম হওয়ায় সেবা অপর্যাপ্ত থেকে যাচ্ছে। বিপরীতে মানুষ দেশের বাইরে যাচ্ছে। ফলে ডলার অপচয় হচ্ছে। তারা না গেলে রিজার্ভ স্থিতিশীল থাকত।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বাজেটে আমরা সামষ্টিক অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখতে বলেছি। শুধু প্রবৃদ্ধি দেখলে হবে না। সুদহার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। মেগা প্রকল্প কম নিতে হবে। খেলাপি ঋণ বাড়তে দেওয়া যাবে না।’
বৈঠকে অংশ নেওয়া একজন নাম প্রকাশের শর্তে বলেন, আগামী অর্থবছরে মেগা প্রকল্প বা অবকাঠামোতে কম বিনিয়োগ করে স্বাস্থ্য ও শিক্ষায় বেশি বিনিয়োগের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।