Science & Tech

নিউট্রন স্টারের জন্মকথা

একটা নক্ষত্র কতকাল জ্বলবে, তা নির্ভর করে নক্ষত্রের ভেতরকার হাইড্রোজেনের মোট পরিমাণের ওপর। যে নক্ষত্রের ভেতর হাইড্রোজেন যত বেশি, তার ভরও তত বেশি, তার নিউক্লিয়ার বিক্রিয়ার হারও তত দ্রুত। ফলে কেন্দ্রীয় অঞ্চলের হাইড্রোজেনের ওপর আরও বেশি মাত্রায় চাপ পড়ে। তাই হাইড্রোজেন নিউক্লিয়াসগুলো দ্রুত পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত হয়।

সেই অনুপাতে তাপমাত্রাও বৃদ্ধি পায় প্রচণ্ডভাবে। সে কারণে হাইড্রোজেন নিউক্লিয়াসের দহন চলে খুবই দ্রুততালে। ফলে দ্রুত ভেতরের হাইড্রোজেন জ্বালানি ফুরিয়ে আসে। বাড়তে থাকে হিলিয়াম পরমাণুর সংখ্যা।

সেসব হিলিয়াম মহাকর্ষীয় টানে পরস্পরের কাছে আসতে চাইবে। তাদের মধ্যে সংঘর্ষ হবে, তৈরি হবে বিপুল পরিমাণ তাপ। সেই নক্ষত্রটা অত্যন্ত উজ্জ্বল হয়ে উঠবে। এতে কেন্দ্রীয় অঞ্চলের বহিরাবরণটা প্রসারিত হতে থাকে। প্রসারণের কারণে কমতে থাকবে তাপমাত্রাও।

যেহেতু তাপমাত্রা অনেকটাই খুয়ে ফেলবে, তাই এর উজ্জ্বলতা অনেকটাই ফিকে হয়ে যাবে। সেই নক্ষত্রকে আর উজ্জ্বল জ্যোতিষ্কের মতো দেখাবে না। দেখাবে টকটকে লাল একটা গোলকের মতো। লাল রঙের সেই অতিকায় নক্ষত্রের নাম রেড জায়ান্ট বা লোহিত দানব। এরপর সেই নক্ষত্রে কেন্দ্রীয় অঞ্চলের হিলিয়াম নিউক্লিয়াস মহাকর্ষীয় টানে সংকুচিত হতে থাকবে। তাদের ভেতরও সংঘর্ষ হবে, তৈরি হবে তাপ। সেই তাপশক্তি হিলিয়ামের নিউক্লিয়ার বিক্রিয়া ঘটাবে। নিউক্লিয়ার বিক্রিয়া এবং তা থেকে তৈরি হওয়া তাপশক্তি বাড়িয়ে দেবে লাল দানবের তাপমাত্রা ও উজ্জ্বলতা। কেন্দ্রীয় তাপমাত্রা উঠে যাবে ১০ কোটি কেলভিনে।

একসময় হিলিয়াম নিউক্লিয়াসজুড়ে কার্বন নিউক্লিয়াস জন্ম দেবে। সেই কার্বন নিউক্লিয়াস কমিয়ে দেবে লোহিত দানবের তাপমাত্রা। তাই এতক্ষণ তাপশক্তি আর মহাকর্ষ শক্তির যে লড়াই দেখেছি, সেটাতে জয়ী হবে মহাকর্ষ। কিন্তু তখন আসবে নতুন বাধা। লোহিত দানবে পরিণত হওয়া সূর্যের কেন্দ্রে জমা হবে ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন মুক্ত ইলেকট্রন। ইলেকট্রন পরস্পরকে বিকর্ষণ করে। আর আছে কোয়ান্টাম মেকানিকসের বাধা। পাউলির অপবর্জন নীতি বলে একই সঙ্গে দুটো ইলেকট্রন কখনো একই অবস্থায় থাকতে পারবে না। তাই বাইরের দিকে একটা চাপ তৈরি করবে। ইলেকট্রনগুলো বেরিয়ে আসতে চাইবে কেন্দ্র ছেড়ে। কিন্তু তা হতে দেবে না মহাকর্ষীয় বল। গোটা সূর্যের হিলিয়াম পরস্পরকে আকর্ষণ করে চুপসে যেতে চাইবে। এ জন্য বাড়বে সূর্যের লোহিত দানবের ঘনত্ব। প্রবল একটা কেন্দ্রমুখী আকর্ষণ বল তৈরি হবে। কেন্দ্রবিন্দুর দিকে চুপসে যেতে চাইবে গোটা নক্ষত্রের দেহ। কিন্তু পুরোপুরি চুপসে যেতে পারবে না ইলেকট্রনের বিকর্ষণজনিত বহির্মুখী চাপের ফলে। ফলে দুই চাপের একটা মরিয়া লড়াই জমবে মরে যাওয়া নক্ষত্রের কেন্দ্রের দিকে। এভাবে চলতে চলতেই শেষ পর্যন্ত হিলিয়াম নিউক্লিয়াসগুলো ফিউশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কার্বনে পরিণত হয়।

তারপর কি কার্বনের নিউক্লিয়াসেরও ফিউশন হওয়া সম্ভব? সম্ভব যদি পর্যাপ্ত তাপমাত্রার জন্ম দিতে পারে। সে জন্য নক্ষত্রের ভর হতে হবে খুব বেশি। সেটাই যদি হয় তখন মহাকর্ষীয় সংকোচন ঠেকানোর উপায় থাকবে না নক্ষত্রের। ভেতরের ইলেকট্রনের চাপ তখন মহাকর্ষীয় সংকোচন রোখার মতো যথেষ্ট নয়। তখন হুড়মুড় করে কেন্দ্রের দিকে ছুটতে থাকবে নক্ষত্রের পরমাণুগুলো। আবার পরস্পরের ধাক্কা। ফলে বেড়ে যাবে তাপমাত্রা। কেন্দ্রের তাপমাত্রা তখন উঠে যাবে ৬০ কোটি ডিগ্রিতে। এ অবস্থায় আবার শুরু হবে নিউক্লিয়ার বিক্রিয়া। কেন্দ্রের দিকে নিউক্লিয়ার ফিউশনের মাধ্যমে কার্বন পরমাণু পরিণত হবে ম্যাগনেশিয়ামে। এভাবে ধীরে ধীরে লোহা আর নিকেলের নিউক্লিয়াস জমা হবে কেন্দ্রের দিকে। এতে কেন্দ্রের দিকে তাপমাত্রা কমতে থাকবে দ্রুত। কিন্তু নিউক্লিয়ার বিক্রিয়া আর হবে না বলে ক্রমেই জমাট বাঁধতে থাকবে নক্ষত্রের কেন্দ্রীয় অঞ্চল। সেখানে মহাকর্ষীয় প্রভাবও বাড়বে। সেই প্রভাবকে ঠেকিয়ে রাখার জন্য থাকবে না ইলেকট্রনের কোয়ান্টাম চাপও। এতে একটা অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটবে। কেন্দ্রের লোহা আর নিকেলের নিউক্লিয়াসগুলো আস্ত থাকবে না। প্রচণ্ড সংকোচনের কারণে একটা নিউক্লিয়াস আরেকটা নিউক্লিয়াসের খুব কাছে চলে আসবে। আবার প্রচণ্ড মহাকর্ষীয় চাপে ইলেকট্রনগুলোও প্রোটনের খুব কাছে চলে আসতে পারবে। তখন মৌলের নিউক্লিয়াস বলে আর কিছুই থাকবে না। বরং আলাদা প্রোটন, নিউট্রন আর ইলেকট্রনগুলো পরস্পরের খুব কাছে এসে পড়বে। প্রচণ্ড চাপ আর শক্তিতে প্রোটন ও ইলেকট্রন যুক্ত হয়ে জন্ম দেবে নতুন নতুন নিউট্রনের। সঙ্গে জন্ম নেমে নিউট্রিনো।

অন্যদিকে নক্ষত্রের বাইরের দিকের অঞ্চলে তখনো হাইড্রোজেন আর হিলিয়ামের নিউক্লিয়ার বিক্রিয়া চলবে। বাইরের অঞ্চল আর কেন্দ্রীয় অঞ্চলের মধ্যে ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাবে। তখন একটা প্রচণ্ড বিস্ফোরণ ঘটবে সেই নক্ষত্রের। সেই বিস্ফোরণের তীব্রতা এতই বেশি যে কিছুক্ষণের জন্য মাত্র একটা নক্ষত্রের উজ্জ্বলতা গোটা গ্যালাক্সির উজ্জ্বলতার সমান হবে। এ ধরনের বিস্ফোরণকে জ্যোতির্বিদ্যার ভাষায় বলে সুপারনোভা বিস্ফোরণ।

১৯৬৭ সাল। দুই মার্কিন জ্যোতির্বিদ জেসোলিন বেল এবং তাঁর ছাত্রী অ্যান্টনি হিউয়িশ মহাকাশে সম্পূর্ণ নতুন ধরনের এক নক্ষত্র আবিষ্কার করলেন। সূর্যের মতো সাধারণ নক্ষত্রে ইলেকট্রন ও প্রোটন, তার সঙ্গে কিছু নিউট্রন থাকে। নতুন এই নক্ষত্রের হিসাব একদম আলাদা। নিউট্রনে ঠাসা এর ভেতরটায় ইলেকট্রন আর প্রোটন নেই বললেই চলে। তাই এর নাম দেওয়া হয় নিউট্রন তারা। তবে নিউট্রন তারার প্রবক্তা তাঁরা নন। সেই ১৯৩০-এর দশকেই এই তারা অস্তিত্বের ভবিষ্যদ্বাণী সুইস মার্কিন জ্যোতির্বিদ ফ্রিত্জ জুইকির।

সুপারনোভা বিস্ফোরণের পর নক্ষত্রের বহিরাবরণটা ছড়িয়ে–ছিটিয়ে পড়ে মহাকাশে। বাকি থাকে কেবল কেন্দ্রীয় অঞ্চল। এখন পুরোনো প্রশ্ন আবার দেখা দেবে, এই অবস্থায় নক্ষত্রটা আরও সংকুচিত হবে, নাকি স্থিতিশীল হবে। জুইকি বললেন, নক্ষত্রটা একটা স্থিতিশীল অবস্থায় আসবে। অবশ্য এর জন্যও একটা শর্ত আছে। শর্তটার কথায় পরে আসি। জুইকির হিসাব থেকে পাওয়া যায়, এ অবস্থায় ভেতরে নিউট্রনগুলোর মধ্যে পাউলির অপবর্জন নীতি কাজ করবে। অর্থাৎ একই স্থানে দুটো একই ধরনের কণা পাশাপাশি থাকতে পারে না। নক্ষত্রের এ অবস্থার ঘনত্ব অকল্পনীয়। অতি ঘনত্বের এই নক্ষত্রের ভেতর ঠাসাঠাসি করে থাকা নিউট্রনগুলো বহির্মুখী কোয়ান্টাম চাপ তৈরি করবে। যদিও নিউট্রন চার্জ নিরপেক্ষ। বৈদ্যুতিকভাবে পরস্পরের আকর্ষণ কিংবা বিকর্ষণ কিছুই করে না। কিন্তু অপবর্জন নীতিই এই চাপটা তৈরি করবে। অন্যদিকে নিউট্রনগুলোর ভেতরে মহাকর্ষীয় আকর্ষণ কিন্তু বিরাট। কারণ অতি ঘনত্বের কণাগুলো যত কাছাকাছি হবে, তত তাদের মধ্যে মহাকর্ষীয় ক্রিয়াও শক্তিশালী হবে। এতে নিউট্রনগুলো সংকুচিত হতে আরও কাছাকাছি আসতে চাইবে। ফলে গোটা নক্ষত্রটিই সংকুচিত হতে চাইবে। অর্থাৎ অপবর্জন নীতির কারণে নিউট্রনদের বহির্মুখী চাপ আর মহাকর্ষীয় বলের প্রভাবে সংকুচিত হওয়ার প্রবণতা পরস্পর বিপরীতমুখী দুই ধরনের চাপের শক্তি যদি সমান হয়, তাহলে কেউ কাউকে হারাতে পারবে না। নক্ষত্রটি তখন স্থিতিশীল অবস্থায় চলে আসবে। নিউট্রনে ভরা এ ধরনের নক্ষত্রকে জুইকি নাম দিলেন নিউট্রন স্টার বা নিউট্রন তারা।

জুইকির সমসাময়িক রুশ বিজ্ঞানী লেভ ল্যান্দাও। ১৯৩২ সালে তিনি গাণিতিকভাবে নিউট্রন তারার একটা তত্ত্ব দাঁড় করেন। এরপরই তারাদের মৃত্যুর জগতে আবির্ভাব দুই বিজ্ঞানীর—রবার্ট ওপেনহাইমার আর জর্জ ভলকফের। তাঁরা হিসাব করে দেখান, নিউট্রন নক্ষত্রের ব্যাস মাত্র ১০ কিলোমিটার। মজার বিষয়, নিউট্রন তার বুক থেকে তুলে নেওয়া এক চা-চামচ পদার্থের ভর ১ কোটি টন! এমনই অকল্পনীয় ভর নিউট্রন নক্ষত্রের। সেটা তার অতি ঘনত্বের কারণে। সেই ঘনত্বটার জন্য দায়ী অতি মহাকর্ষীয় টান।

ওপেনহাইমার আর ভলকফ বলেছিলেন, নক্ষত্রকে নিউট্রন তারা হতে হলে সুপারনোভা বিস্ফোরণের পরও তার অবশিষ্ট কেন্দ্রীয় অঞ্চলে ভর হতে হবে সূর্যের ভরের ০.৭ গুণ। আধুনিক বিজ্ঞান বলে, সেটা দুই থেকে তিন সৌরভরের সমান।

১৯৬৭ সালে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক অ্যান্টনি হিউয়িশ তাঁর ছাত্রী জেসোলিন বেলকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন মহাকাশ থেকে আসা বেতার তরঙ্গ শনাক্তের। সেটা করতে গিয়েই এক অদ্ভুত বেতার তরঙ্গের সন্ধান পান তিনি। একটা বেতার সিগন্যাল কিছুক্ষণ পরপর। একই তরঙ্গ বারবার। এই আবিষ্কারে বেল আর হিউয়িশ একটু রোমাঞ্চিত হয়েছিলেন বোধ হয়। তখন বিশ্বজুড়ে চলছে ভিনগ্রহীদের খোঁজার চেষ্টা। বেল-হিউয়িশ ভেবেছিলেন, ভিনগ্রহীদের সংকেত পেয়েছেন। কিন্তু পরে প্রমাণ হয়, মহাকাশের কোনো এক নিউট্রন তারা থেকে আসছে ওই বেতার সংকেত। বেল-হিউয়িশের নিউট্রন তারা আবিষ্কারে নড়েচড়ে বসেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। নিউট্রন নক্ষত্র থেকে দৃশ্যমান আলো বের হয় না বললেই হয়। বের হয় আরও লম্বা তরঙ্গদৈর্ঘ্যের রেডিও বা বেতার তরঙ্গ।

সূর্য থেকে পৃথিবীতে আলো আসে নিরবচ্ছিন্নভাবে। কিন্তু নিউট্রন তারা থেকে রেডিও তরঙ্গ নিরবচ্ছিন্নভাবে আসে না। আসে ঘুরে ঘুরে। বিমানবন্দরে সার্চলাইট কিংবা ঘুরন্ত টর্চের মতো। ঘুরতে ঘুরতে যখন আলো আমাদের গায়ে এসে পড়বে, তখন আমরা দেখতে পাব, নইলে নয়। অর্থাৎ নিউট্রন তারার রেডিও সংকেত পাব ঝলকে ঝলকে। ঝলকের ইংরেজি হলো ‘পালস’। তাই নিউট্রন তারার নাম দেওয়া হলো পালসার। এই আবিষ্কারের জন্য ১৯৭৪ সালে নোবেল পুরস্কার পান হিউয়িশ। নিশ্চিতভাবেই প্রমাণিত হয়, এক ধরনের তারা মৃত্যুর আগে নিউট্রনে ভর্তি দানবে পরিণত হয়।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
Situs Toto
toto togel
slot toto
Toto slot gacor
bacan4d
totoslotgacor
bacan4d
bacan4d slot gacor
bacan4d login
Bacan4d
bacan4d
bacan4d bonus
Toto gacor
Toto gacor
slot gacor hari ini
bacan4d toto
bacan4d toto
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d link alternatif
slot gacor bett 200
situs toto
SITUS TOTO
toto 4d
toto gacor
Slot Toto
Slot Toto
Slot Toto
Situs toto
Slot toto
Slot Dana
Slot Dana
Judi Bola
Judi Bola
Slot Gacor
toto slot
bacan4d toto
bacan4d akun demo slot
bacantogel
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacantoto
bacan4d
Bacan4d Login
slot demo
Bacan4d Toto
toto gacor
Slot Gacor
Live Draw
Live Draw Hk
toto slot
Bacan4d slot gacor
toto macau
toto slot
Toto Gacor
slot dana
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
Slot Dp Pulsa
Bacan4d Login
toto slot
Bacansports/a>
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
slot gacor
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
slot demo
toto slot gacor
bacansports Slot toto toto slot Slot toto Slot dana Slot toto slot maxwin slot maxwin toto slot toto slot slot dana
Toto Bola
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
bacan4d
ts77casino
situs toto
slot pulsa
bacansports
situs toto
slot toto
situs toto
slot toto
situs toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansports
slot toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
situs toto
situs toto
xx1toto
toto slot
xx1toto
xx1toto
slot qriss
Slot Toto
slot dana
situs toto
slot toto
slot dana
Situs Toto Slot Gacor
xx1toto
xx1toto
bacan4d
xx1toto
xx1toto
toto slot
situs toto slot gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
situs toto
Slot Toto
Toto Slot
Slot Gacor
Slot Gacor
Slot Gacor
slot toto
Toto Slot