Hot

রপ্তানি আয়ে ৭শ কোটি মার্কিন ডলার গরমিল: তদন্ত কমিটি গঠন

রপ্তানি আয়ে গরমিলের অঙ্ক অস্বাভাবিক ভাবে বাড়ছে। গেল অর্থবছরে এটা ৮৪৮ কোটি ডলারের (৮.৪৮ বিলিয়ন) সীমা ছুঁয়েছে। শুধু তাই নয়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগের ৬ মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) গরমিলের ব্যবধান স্পর্শ করেছে ৭০০ কোটি মার্কিন ডলারে। ধারণা করা হচ্ছে, অর্থবছর (২০২৩-২৪) শেষে এটি অতীতের সব রের্কড অতিক্রম করবে। বিদেশে পণ্যসামগ্রীর রপ্তানির বিপরীতে আয়ের মোট হিসাব প্রতি অর্থবছর শেষে ইপিবি এবং বাংলাদেশ ব্যাংক তৈরি করে। দুটি সংস্থার হিসাবে পর্যায়ক্রমে অস্বাভাবিক গরমিল বিষয়টি ধরা পড়ে। পর্যায়ক্রমে অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে। 

বড় ধরনের গরমিল কি রপ্তানির অন্তরালে বিদেশে অর্থ পাচারের ইঙ্গিত বহন করছে কিনা এ নিয়ে অনেকটা উদ্বেগ রয়েছে সরকারের নীতিনির্ধারণী মহলে। বিষয়টি খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। সম্প্রতি এ বিষয়ে তদন্ত করতে অর্থ বিভাগের নেতৃত্বে তিনটি সংস্থাকে নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটি ৩১ মার্চের মধ্যে এ সংক্রান্ত তদন্ত প্রতিবেদন দেবে অর্থমন্ত্রীর কাছে। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য। বাংলাদেশ ব্যাংক এবং ইপিবির গত ৭ অর্থবছরের (২০১৭-২০১৮ থেকে ২০২৩-২৪) রপ্তানি আয়ের নথি পর্যালোচনায় দেখা গেছে, প্রতি অর্থবছরই ইপিবি রপ্তানি আয় হিসাবে যা গ্রহণ করছে বিপরীতে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে কিছুটা কম। গত কয়েক বছর এভাবে চলে আসছে। 

কিন্তু সম্প্রতি দুটি সংস্থার হিসাবের গরমিল বড় ব্যবধান হওয়ায় সন্দেহ দানা বাঁধছে। রপ্তানি আয়ে অস্বাভাবিক গরমিল নিয়ে প্রথম প্রশ্ন তুলেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। চলতি মাসে অনুষ্ঠিত দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক অবস্থা পর্যালোচনাসংক্রান্ত বৈঠকে তিনি বলেন, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ইপিবির তথ্যমতে ৫৫.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানি হলেও কাস্টমসের তথ্যমতে ৪৯ বিলিয়ন ডলার এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে ৪৮ বিলিয়ন ডলার। অপরদিকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের এ পর্যন্ত ইপিবির তথ্যমতে ২৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্যসামগ্রী রপ্তানি হলেও বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০ বিলিয়ন ডলার। তিনি রপ্তানি আয়ের তথ্যের এ গরমিল নিষ্পত্তি প্রয়োজন বলে ওই বৈঠকে মত ব্যক্ত করেছেন।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ যুগান্তরকে জানান, অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত কমিটি হয়েছে। ওই কমিটি এ বিষয়ে কাজ করছে। তবে এর আগে দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক অবস্থা পর্যালোচনা সংক্রান্ত বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন বাণিজ্য সচিব। সেখানে তিনি বলেছিলেন, ‘রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো ও বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যে রপ্তানি সংক্রান্ত তথ্যের যে গরমিল রয়েছে সে বিষয়ে একটি কমিটি গঠন করে খতিয়ে দেখা যেতে পারে।’ 

ইপিবি এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের নথি পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যসামগ্রী রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৫ হাজার ৫৫০ কোটি মার্কিন ডলার। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে ৪ হাজার ৮শ কোটি ডলার। আয়ের গরমিল ৭৫০ কোটি মার্কিন ডলার। ইপিবি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানের মধ্যে ব্যবধান আগে কিছুটা কম ছিল। যেমন ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এ আয়ের গরমিলের অঙ্ক ছিল ৪১৪ কোটি মার্কিন ডলার এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৫১৯ কোটি ডলার, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ২৩৫ কোটি ডলার এবং ২০২০-২১ অর্থবছরে ছিল ৪৭৮ কোটি ডলার। কিন্তু ২০২১-২২ অর্থবছরে এই ব্যবধান অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে ৮৪৮ কোটি মার্কিন ডলারে উঠে। ওই বছর ইপিবির হিসাবে বিদেশে পণ্যসামগ্রী রপ্তানি হয়েছে ৫ হাজার ২০৮ কোটি ডলার। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে ৪ হাজার ৩৬০ কোটি ডলার।

আরও দেখা গেছে, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) গরমিলের অঙ্ক ৭০০ কোটি মার্কিন ডলার। ধারণা করা হচ্ছে, অর্থবছর শেষে যে অঙ্ক দাঁড়াবে তা বিগত সব রেকর্ড অতিক্রম করবে। বিগত কয়েক অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে এত বেশি রপ্তানি আয়ে গরমিল পাওয়া যায়নি। অবশ্য এই ৬ মাস হচ্ছে জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঠিক আগে। নির্বাচনের আগ মুহূর্তে রপ্তানি জাহাজিকরণের তথ্য ও বিদেশ থেকে পাওয়া অর্থের মধ্যে বড় অঙ্কের ব্যবধান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। 

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এতবড় ব্যবধান কোনো স্বাভাবিক ঘটনা হতে পারে না। রপ্তানি আয়ে দুটি সংস্থার হিসাবে বড় অঙ্কের ব্যবধানের বিষয়টি খতিয়ে দেখা দরকার বলে মনে করছেন সাবেক বাণিজ্য ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাহবুব আহমেদ। তিনি যুগান্তরকে জানান, ব্যংকের হিসাব সমন্বয়ের কারণে রপ্তানি আয়ের তথ্যের গরমিল সামান্য হতে পারে। এটা প্রতিবছরই হয়। প্রথমে দেখতে হবে দুটি সংস্থার হিসাবে গরমিলের অঙ্ক কত। সেটি খুবই কম হলে সমন্বয়ের মাধ্যমে ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু পার্থক্যের অঙ্ক বেশি হলে সেখানে একটি সন্দেহ সৃষ্টি হয়। কারণ রপ্তানি যে পরিমাণ হয়েছে অর্থ সেভাবে না আসলে আন্ডার বা অভার ইনভেসিং হতে পারে। কিন্তু বিষয়টি এখনো পরিষ্কার নয়। গরমিল বড় হলে সেখানে কারসাজি হচ্ছে কিনা সেটিও দেখা দরকার।

অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এই গরমিলের বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখা হচ্ছে। অর্থ বিভাগের সমন্বয়ে ১৯ মার্চ ইপিবি, এনবিআর, বাংলাদেশ ব্যাংককে নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়। এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা যুগান্তরকে জানান, গঠিত কমিটি শিগগিরই একত্রে কাজ শুরু করবে। এ কমিটি দেখবে ইপিবি কোনো উৎস থেকে কিভাবে রপ্তানি আয়ের তথ্য নিচ্ছে এবং একই ভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের উৎস যাচাই করা হবে। এরপর গরমিলের প্রকৃত কারণ বের করা হবে। 

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, তৈরি পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে কিছু কাঁচামাল কিনতে হয় রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল ইপিজেড থেকে। এটি অভ্যন্তরীণ কেনাকাটা হলে রপ্তানি আয় হিসাবে ইপিজিডের হিসাবে দেখানো হয় । একই পণ্য পুরোপুরি তৈরি হয়ে বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। একই পণ্য আয় একবার ইপিজেডে আরেকবার সংশ্লিষ্ট পোশাক শিল্পের তালিকায় রপ্তানি হিসাবে যোগ হচ্ছে। এছাড়া রপ্তানির শিপমেন্ট এবং রপ্তানি আয় ডলার হিসাবে হাতে আসছে এরমধ্যে পার্থক্য হতে পারে। কিন্তু প্রতিবছরই রপ্তানি আয়ের গরমিল যেভাবে বাড়ছে এতে মনে হয়, হয়তো রপ্তানিকারকরা ডলার আনছেন না বা আনলেও সেটি ভিন্নভাবে। অর্থ পাচারের কারণেই কি পার্থক্য বেশি হচ্ছে তাও খতিয়ে দেখা দরকার। 

বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম মনে করেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ও ইপিবির দেওয়া তথ্যের মধ্যে সব সময়ই কিছু পার্থক্য থাকে। কিন্তু বড় অঙ্কের পার্থক্য মানি লন্ডারিং কিনা এটি মানতে নারাজ। তিনি বলেন, ১২০ দিনের মধ্যে রপ্তানি আয় না এলে রপ্তানিকারকের নাম কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ড্যাশবোর্ডে প্রদর্শিত হয়। তারপর, রপ্তানিকারক ব্যাংক থেকে কোনো সেবা পান না। ব্যাংকিং সেবা অব্যাহত রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে মেয়াদ বাড়াতে হবে এবং রপ্তানিকারক যদি মনে করেন তিনি আয় পাবেন না, তাহলে অনুমোদনের আগে এটি বিশ্লেষণকারী বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিসকাউন্ট কমিটিকে অবহিত করতে হয়।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
Situs Toto
toto togel
slot toto
Toto slot gacor
bacan4d
totoslotgacor
bacan4d
bacan4d slot gacor
bacan4d login
Bacan4d
bacan4d
bacan4d bonus
Toto gacor
Toto gacor
slot gacor hari ini
bacan4d toto
bacan4d toto
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d link alternatif
slot gacor bett 200
situs toto
SITUS TOTO
toto 4d
toto gacor
Slot Toto
Slot Toto
Slot Toto
Situs toto
Slot toto
Slot Dana
Slot Dana
Judi Bola
Judi Bola
Slot Gacor
toto slot
bacan4d toto
bacan4d akun demo slot
bacantogel
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacantoto
bacan4d
Bacan4d Login
slot demo
Bacan4d Toto
toto gacor
Slot Gacor
Live Draw
Live Draw Hk
toto slot
Bacan4d slot gacor
toto macau
toto slot
Toto Gacor
slot dana
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
Slot Dp Pulsa
Bacan4d Login
toto slot
Bacansports/a>
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
slot gacor
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
slot demo
toto slot gacor
bacansports Slot toto toto slot Slot toto Slot dana Slot toto slot maxwin slot maxwin toto slot toto slot slot dana
Toto Bola
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
bacan4d
ts77casino
situs toto
slot pulsa
bacansports
situs toto
slot toto
situs toto
slot toto
situs toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansports
slot toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
situs toto
situs toto
xx1toto
toto slot
xx1toto
xx1toto
slot qriss
Slot Toto
slot dana
situs toto
slot toto
slot dana
Situs Toto Slot Gacor
xx1toto
xx1toto
bacan4d
xx1toto
xx1toto
toto slot
situs toto slot gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
situs toto
Slot Toto
Toto Slot
Slot Gacor
Slot Gacor
Slot Gacor
slot toto
Toto Slot
slot gacor