Bangladesh

কিছু পণ্যের দাম নির্ধারণ কাজে আসছে না

বাজারে কিছু পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হলেও তা কার্যকর হচ্ছে না। তবে আমদানি করা পণ্যের ক্ষেত্রে দাম নির্ধারণ অনেক ক্ষেত্রে সফল হয়েছে। দীর্ঘ মেয়াদে বাজার ঠিক করতে হলে পণ্যের জোগান ও সরবরাহ ঠিক রাখতে হবে। চাহিদার বিপরীতে জোগান ঠিক থাকলে বাজারে সিন্ডিকেটের কোনো প্রভাব থাকে না।

আজ রবিবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম অব বাংলাদেশ (আইবিএফবি) আয়োজিত ‘সিন্ডিকেটের প্রভাব ও নিত্যপণ্যের দামে প্রতিযোগিতা’ শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন বক্তারা।

বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, পণ্যের দাম নির্ধারণ করে বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা পুরোপুরি কাজে আসছে না। তেল ও চিনির মতো পুরো আমদানিনির্ভর পণ্যের ক্ষেত্রে দাম নির্ধারণ কিছুটা সফল হলেও অন্য পণ্যের ক্ষেত্রে দাম নির্ধারণ কাজ করছে না।

বাণিজ্য সচিব বলেন, কৃষিপণ্যের দাম নির্ধারণ করে বাজার নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। কারণ, এ ক্ষেত্রে অনেক সরবরাহকারী থাকেন। আবার দাম নির্ধারণ করে দিলে প্রতিযোগিতা কমিশনের কোনো কাজ থাকে না। বরং দাম নির্ধারণ না করে প্রতিযোগিতা কমিশনকে আরও কার্যকর করে বাজারে স্থিতিশীলতা আনতে হবে। প্রয়োজনে নীতিতে পরিবর্তন আনতে হবে।

তবে সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম মত দেন, পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দিয়ে যে সাফল্য পাওয়া যায়, তা দেখা গেছে। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘রমজানের আগে সয়াবিন তেলের যে দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছিল, সেই দামে তেল পাওয়া যাচ্ছে। তবে দু-একজন স্মার্ট সরবরাহকারী আছেন, যারা তেলের নিয়ন্ত্রিত সরবরাহ করে থাকেন। তাদের ব্যাপারে আমাদের নজরদারি আছে।’

বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা তিন ধরনের পণ্য নিয়ে কাজ করছি। এর মধ্যে একটি আমদানি করা পণ্য। আরেকটা দেশে উৎপাদিত শিল্পপণ্য। অন্যটি পচনশীল পণ্য। এই তিন ধরনের পণ্যের বাজারের গতি আলাদা।’

ভারত পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা অনির্দিষ্টকালের জন্য বাড়িয়েছে। সেমিনার শেষে আহসানুল ইসলামকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘দেশে পেঁয়াজ নিয়ে কোনো সংকট হবে না। ভারত থেকে ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ আসার কথা ছিল। সেই পেঁয়াজ আসবে। নতুন করে ভারত সরকার যে নীতি নিয়েছে, সেটা তাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। এর জন্য আমাদের দেশে বড় কোনো প্রভাব পড়বে না। কারণ, আমাদের এখানে ইতিমধ্যে পেঁয়াজের মূল মৌসুম শুরু হয়েছে।’

এবার রমজান মাসে বাজারে চিনি ও তেলের মতো পণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে বলে মন্তব্য করেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক হেলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ভোক্তা ও উৎপাদক দুই পক্ষের স্বার্থ দেখতে হবে। কোনো এক পক্ষের স্বার্থ দেখলে বাজারে স্থিতিশীলতা আসবে না। সুতরাং বাজারে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা ছাড়া যদি কোনো পণ্যের দাম কমেও আসে, তাহলে ভবিষ্যতে তা আরও বাড়তি দামে কিনতে হতে পারে। সব পক্ষের স্বার্থরক্ষা করে চাহিদা ও জোগানের ভিত্তিতে বাজার পরিচালিত হলে সমস্যা থাকবে না। বাজারে সিন্ডিকেট আছে বলতে চাই না। তবে বাজারে কার্টেলের সংখ্যা তখন কমে আসবে।

হেলাল উদ্দিন আহমেদের এ বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের বাজারে অদৃশ্য অনেক বিষয় আছে। অনেক সময় সরবরাহে বড় সংকট না থাকলেও দাম বাড়ে। দেখা যায়, বাজারে ১০০ টাকার বেশি দামে বেগুন কিনতে হচ্ছে। লেবু কিনতে হচ্ছে চড়া দামে। চাহিদাসংক্রান্ত তথ্যের বড় ঘাটতি রয়েছে।’

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ বলেন, বাজারে সিন্ডিকেট থাকতে পারে। দেশে দেশে এমন সিন্ডিকেট আছেও। আমাদের দেশেও আছে। কিন্তু এই সিন্ডিকেট যেন নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকে। সিন্ডিকেট যেন উল্টো সবাইকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে। সব সমস্যা সমাধান করা সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়। সবাই একসঙ্গে কাজ করলে সমাধানের দিকে এগুনো সম্ভব।’

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

bacan4d slot toto