চিকিৎসা ও কৃষিক্ষেত্রে বিপ্লব আনছে কোয়ান্টাম কম্পিউটার
প্রযুক্তির বিকাশ মানুষের জীবনযাত্রা দ্রুত বদলে দিচ্ছে। কোয়ান্টাম কম্পিউটার সেই প্রবণতা আরো জোরালো করে তুলতে পারে। বাইরে থেকে দেখলে কোয়ান্টাম কম্পিউটারের কোনো অভিনবত্ব বোঝা যায় না। কিন্তু ভেতরেই তার আসল রহস্য লুকিয়ে রয়েছে। কারণ একমাত্র নির্দিষ্ট পরিবেশেই কোয়ান্টাম কম্পিউটার চলে।
কোয়ান্টাম বিটস বা কিউবিট নামের অতি দ্রুত গতির কণা চলাচলের জন্য তাপমাত্রা অসম্ভব শীতল রাখতে হয়। তার জন্য কুলিং সিস্টেম, লেজার ইমপাল্স, কনট্রোল টেকনোলজির প্রয়োজন হয়। অফিসের টেবিলের নীচে এমন কম্পিউটার রাখা সম্ভব নয়। তবে এটাও মনে রাখতে হবে, যে সাধারণ বিটের তুলনায় কিউবিটের ক্ষমতা অনেক বেশি।
সুইজারল্যান্ডে আইবিএম কোম্পানির গবেষণা কেন্দ্রে এমনই এক কম্পিউটার কাছ থেকে দেখার সুযোগ পাওয়া গেল। সেই কম্পিউটার সব সময়ে মোড়কবন্দি থাকে। কোম্পানির প্রতিনিধি আন্দ্রেয়াস ফুয়রার সেটি দেখিয়ে বলেন, ‘‘এটা এক কোয়ান্টাম কম্পিউটার। এই মুহূর্তে সেটির মধ্যে কোনো প্রসেসর নেই। নীচে থেকে সেটা বসাতে হয়। সেটাই মূল কোয়ান্টাম প্রসেসর। এখনে আসলে এক রেফ্রিজারেটর দেখা যাচ্ছে যা মাইনাস ২৭৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, অর্থাৎ সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বজায় রাখতে পারে।”
এভাবে প্রসেসরগুলিকে বাহ্যিক প্রভাব থেকে সুরক্ষা দেয়া যায়। কোয়ান্টাম কম্পিউটার কীভাবে কাজ করে, সেটা জানতে ক্ষুদ্রতম কণা, অর্থাৎ কোয়ান্টাম মেকানিক্সের জগতে ডুব দিতে হবে। অত্যন্ত অদ্ভুত ও প্রায় অস্বস্তিকর সেই জগত একই সঙ্গে আকর্ষণীয়ও বটে।
পরমাণুর সেই সাম্রাজ্যে সব কিছুই অন্যরকম। সবই গতিময়, একে অপরের উপরে অবস্থিত। প্রায় একই সঙ্গে একাধিক জায়গায় সেটা ঘটে। এমন এক চিত্র সম্পর্কে সঠিক ধারণা পাওয়া বেশ কঠিন। কারণ মানুষের পক্ষে সেই জগত পর্যবেক্ষণ করাই সম্ভব নয়। যখনই কিছু পরিমাপ করার চেষ্টা হয়, কোয়ান্টাম উধাও হয়ে যায়। সেই জগত বোঝার জন্যও শিক্ষা চাই।
এখনো পর্যন্ত মানুষ প্রচলিত বিট চিনতো। ট্রানজিস্টরের মাধ্যমে বৈদ্যুতিক সেই সার্কিট হিসেবে বিট হয় এক বা শূন্য হতে পারে। সেই ডিজিটাল জগতের মধ্যে সংযোগের পেছনে একটা যুক্তি রয়েছে। ফলে সেই প্রক্রিয়ায় প্রত্যেক সার্কিট পর পর চলে। তার গতি অত্যন্ত দ্রুত হলেও সব সময়ে ক্রমান্বয়ে, অর্থাৎ একের পর এক ছন্দে ঘটে।
কোয়ান্টাম কম্পিউটারে সেই বিট কিউবিট হয়ে যায়। মাইক্রোওয়েভ বা লেজার পাল্সের মাধ্যমে তার মধ্যে রদবদল ঘটিয়ে শুধু এক বা শূন্যের বদলে আরো বেশি অবস্থা সৃষ্টি করা সম্ভব।
তথাকথিত ‘সুপার পোজিশন’ অবস্থায় কোনো কিউবিট একই সঙ্গে এক ও শূন্য হতে পারে এবং দুইয়ের মাঝের সব অবস্থাও ধারণ করতে পারে। অনেকটা ঘূর্ণীয়মান পয়সার সঙ্গে সেই অবস্থার তুলনা করা যায়। যতক্ষণ সেটি ঘুরে চলেছে, ততক্ষণ কিছুই বলা যায় না। একমাত্র পরিমাপ করলে তবেই কিউবিট দুটি মূল অবস্থার মধ্যে একটি বেছে নেয়।
একটি উদাহরণের মাধ্যমে বিষয়টি ফুটিয়ে তোলা যায়। ধরা যাক, জটিল সিস্টেমের মধ্যে একটি কম্পিউটারকে সবচেয়ে সরাসরি পথ বেছে নিতে হবে। প্রচলিত কম্পিউটার একের পর এক ধাপে সব সম্ভাব্য পথ খতিয়ে দেখে। ফলে সেই কাজ যত জটিল হয়, সেটা করতে তত বেশি সময় লাগে।
অন্যদিকে কোয়ান্টাম কম্পিউটার পরস্পরের সঙ্গে সংযুক্ত কিউবিটের মাধ্যমে এমন এক সমস্যা একই সময়ে সমাধানের চেষ্টা করে এবং অনেক দ্রুত আদর্শ পথ খুঁজে পায়।
কিন্তু ঠিক কোন কাজের জন্য এমন কোয়ান্টাম কম্পিউটার কাজে লাগানো যেতে পারে? চিকিৎসাবিদ্যার ক্ষেত্রে প্রতিটি মানুষের জন্য তার নির্দিষ্ট রোগ অনুযায়ী আলাদা করে ওষুধ সৃষ্টি করা যাবে।
কোয়ান্টাম কম্পিউটারের কল্যাণে কৃষিক্ষেত্রও আরো টেকসই করে তোলা সম্ভব। যেমন সেই কম্পিউটার আরো টেকসইভাবে সার উৎপাদনের পথ বাতলে দিতে পারে। অ্যামোনিয়া উৎপাদন আরো আদর্শ করে তুলতে সেই প্রযুক্তি সাহায্য করতে পারে। এখনো বিশাল ক্ষমতার কোয়ান্টাম কম্পিউটার গড়ে তোলা হয় নি বটে, তবে এ ক্ষেত্রে অভীবনীয় সম্ভাবনা রয়েছে।