অপারেশনের ঝুঁকি কমাচ্ছে এআই প্রযুক্তি
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ এখনো সীমিত রয়েছে। চিকিৎসাবিদ্যা, বিশেষ করে সার্জারির সময় এই প্রযুক্তি অনেক ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে৷ জার্মানিতে পরীক্ষামূলকভাবে সেই উদ্যোগ চলছে৷
জার্মানির সারব্রুকেন শহরের হাসপাতালে জীবন-মরণের লড়াই চলছে৷ এক নারীর লালা গ্রন্থি থেকে প্রায় হাতের মুঠার আকারের এক টিউমার কেটে বাদ দিতে হবে৷ অপারেশন থিয়েটারে জোরাল প্রস্তুতি চলছে৷
সার্জন গ্রেগর স্তাভরু অপারেশনের জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন৷ তিনি আজকের অপারেশনের জন্য ডেটা গগলস ও সদ্য উদ্ভাবিত এক আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স সিস্টেম ব্যবহার করছেন৷
ড. স্তাভরু বলেন, ‘কেন্দ্রীয় শিরার এই অংশই অপারেশনের সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জ৷ সেখানে ভুলভ্রান্তির কোনো অবকাশ নেই৷ হেপটিক আর্টারি কেটে দিলে তা রোগীর জন্য বিপর্যয় বয়ে আনবে।’
অর্থাৎ সেক্ষেত্রে রক্তক্ষরণের ফলে রোগীর মৃত্যু হবে৷ নিরাপত্তার বাড়তি পদক্ষেপ হিসেবে এআই কাজে লাগানো হচ্ছে৷ সেই প্রযুক্তির সাহায্যে চারিদিক থেকে টিউমারের থ্রিডি ছবি দেখা যাবে৷ ফলে সঠিকভাবে ছুরি চালানোর প্রস্তুতি এবং স্পর্শকাতর অংশগুলো শনাক্ত করতে সুবিধা হবে৷
টিউমার অত্যন্ত বড় হওয়ায় সেই অপারেশন সত্যি এক চ্যালেঞ্জ৷ কাছেই লিভারের রক্ত পাঠানোর দায়িত্বপ্রাপ্ত গুরুত্বপূর্ণ শিরা রয়েছে৷
চিকিৎসাবিদ্যার ক্ষেত্রে এআই প্রায় কখনোই প্রয়োগ করা হয়নি৷ হামরাজ জাভাহেরি নামের এক তরুণ প্রোগ্রামারের মাথায় অপারেশন থিয়েটারে লার্নিং সফ্টওয়্যার ব্যবহারের আইডিয়া এসেছিল৷ জার্মান এআই গবেষণা কেন্দ্রের এই গবেষক এই প্রযুক্তির পেছনে চালিকা শক্তি হিসেবে ভূমিকা রেখেছেন৷
তিনি বলেন, ‘আমার মতে, ব্যক্তিগত শখের কারণেই আমি চিকিৎসাবিদ্যার ক্ষেত্রে পা রেখেছি৷ প্রযুক্তির সাথে চিকিৎসাবিদ্যার মধ্যে যথেষ্ট সংযোগ না থাকা সত্যি লজ্জার বিষয়৷ এই প্রযুক্তি অত্যন্ত উন্নত হলেও মেডিক্যাল ক্ষেত্র এখনো সেক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছে৷ প্রযুক্তি প্রয়োগ করতে ডিভাইস কাজে লাগাতে হয়৷ আমার মনে হলো, চিকিৎসাবিদ্যার ক্ষেত্রে সেটা থাকলে কেমন হয়?’
গ্রেগর স্তাভরু নামের এই সার্জেন অত্যন্ত অভিজ্ঞ মানুষ৷ ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি অসংখ্য টিউমার দূর করেছেন৷ তা সত্ত্বেও অপারেশন থিয়েটারে নতুন প্রযুক্তির প্রয়োগের বিষয়টি তিনি খোলামনে দেখছেন৷
তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সেখানে উপস্থিত থেকে সফটওয়্যার মনিটার করছেন৷ এই মুহূর্তে এআই পরীক্ষামূলক স্তরে রয়েছে৷ প্রতিটি অপারেশনের মাধ্যমে সেই প্রযুক্তির উন্নতি ঘটছে৷
অপারেশনের সময়ে সহকারী ডাক্তারও ডেটা গগলস পরে আছেন৷ অর্থাৎ প্রক্রিয়াটি দু’জন ডাক্তারের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে৷ টিউমার কেটে বাদ দেয়ার সময়ে কয়েক মিলিমিটার এদিক-ওদিক হলেই রোগীর জীবন-মরণ নির্ধারণ হতে পারে৷
অপারেশনের সময় কোনো গুরুত্বপূর্ণ শিরা কাটলে চলবে না৷ ঠিক কোথায় ছুরি চালাতে হবে, এআই তার আরো সুনির্দিষ্ট নিয়ন্ত্রণ সম্ভব করছে৷ কম্পিউটার-নিয়ন্ত্রিত চশমার সাহায্যে টিউমারের থ্রিডি ইমেজ এবং রক্ত চলাচলের শিরা ফুটিয়ে তোলা হয়৷
হামরাজ জাভাহেরি বলেন, ‘এখন তিনি সেই সব শিরা ও সেগুলোর অবস্থান দেখতে পাচ্ছেন৷ ফলে আর্টারি ভুল করে না আরো সতর্কভাবে কাটতে সুবিধা হচ্ছে৷ দুর্ঘটনা এড়ানো যাচ্ছে।’
তিন ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে অপারেশনের মাধ্যমে টিউমার কেটে বাদ দেয়া হলো৷ রোগীও ভালো আছেন৷ প্রতিটি অপারেশন থেকে এআই শিক্ষা নেয়৷ সার্জেনের দক্ষতার সাথে সাথে সফটওয়্যারের অবিরাম বিকাশ ঘটছে৷ অপারেশন থিয়েটারে মানুষের ভুল মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনতে পারে৷ প্রযুক্তি সেই ঝুঁকি কমিয়ে দেয়৷
গ্রেগর স্তাভরু বলেন, ‘সত্যি বলতে আমি বেশ সন্তুষ্ট৷ কাঠামো ও তার সঠিক অবস্থান দেখতে পেয়ে খুব সুবিধা হয়েছে৷ সেই সব ইমেজ দেখে সার্জারির কাজটা অনেক সহজ হয়েছে, যেমনটা আমরা ভাবতে পারিনি৷ বিশেষ করে মাঝের অংশ, যেখানে বিশাল টিউমার শিরা ঠেলে সরিয়ে দিয়েছিল, বিশেষ করে সেই অংশের জন্য অনেক সাহায্য পেয়েছি।’
হৃদযন্ত্রের মতো অঙ্গ সরানোর অপারেশনে এআই-এর প্রয়োগ হবে আগামী পদক্ষেপ৷