Bangladesh

চিড়িয়াখানায় হাতির হামলায় মাহুতের ছেলের মৃত্যু, কী ঘটেছিল তখন

রাজধানীর মিরপুরে জাতীয় চিড়িয়াখানার মাহুত আজাদ আলীর একমাত্র সন্তান জাহিদ (১৭)। গতকাল বৃহস্পতিবার ঈদের দিনে বাবা ও ছেলে একসঙ্গে ঈদের নামাজ আদায় করেন। একসঙ্গে ভাত খান। পরে ছেলেকে নিজেই চিড়িয়াখানার হাতির খাঁচায় ডেকে নিয়ে যান আজাদ আলী। সেখানে বেলা ১১টার দিকে হাতি ‘রাজা’-এর হামলায় প্রাণ যায় জাহিদের।

২০১৯ সাল থেকে জাতীয় চিড়িয়াখানায় মাস্টাররোলে (দৈনিক হাজিরাভিত্তিক) মাহুত হিসেবে কর্মরত আজাদ আলী। চাকরিসূত্রে আজাদ ও তাঁর স্ত্রী ঢাকায় থাকেন। তাঁদের গ্রামের বাড়ি মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায়। জাহিদ সেখানেই থাকত। বাবা-মায়ের সঙ্গে ঈদ করতে সে ঢাকায় এসেছিল।

হাতি চালক, প্রশিক্ষক বা রক্ষককে মাহুত বলা হয়ে থাকে। আজাদ আলী বংশপরম্পরায় মাহুত হিসেবে কাজ করে আসছেন। কুলাউড়ায় জাহিদও মাহুত হিসেবে প্রশিক্ষণ নিচ্ছিল বলে চিড়িয়াখানার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে আজাদ আলী গতকাল সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘সকালে একসাথে নামাজ পড়ছি। পোলাডারে লইয়া একসাথে ভাত খাইছি। ছেলেরে কইছি, চল বাবা আমার লগে। কইয়া আমি নিজেই নিয়া আইছি আমার পোলাডারে। আমার কপালই খারাপ। বলিয়া লাভ নাই, নিজের হাতে মারাইছি।’

চিড়িয়াখানায় হাতির খাঁচায় কী ঘটেছিল, তা বর্ণনা করে আজাদ আলী বলেন, ‘হাতি বল দিয়া মারামারি (খেলা) করতাছে। আমার এক ভাই হাতির ওপরে ছিল। তারে (ছেলেকে) থুইয়া আমি পানি আনার লেইগা (হাতির) ভেতরে ঢুকছি। হাতিটা (ছেলেকে) ধরিয়া পারা মারিয়া লগে লগে মাইরা ফেলাইছে। এক মিনিটও সময় দেয় নাই।’(বক্তব্যটা স্পষ্ট নয়)
মিরপুর চিড়িয়াখানায় পাঁচটি হাতি আছে। এগুলো এশিয়ান হাতি। যখন দুর্ঘটনা ঘটে, তখন হাতির শারীরিক চর্চা করানো হচ্ছিল। রাজা নামের হাতিটি তখন ছাড়া ছিল। ঘটনার পর আরেক মাহুত হাতিটিকে শিকল দিয়ে বাঁধে বলে জানা গেছে।

চিড়িয়াখানার এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, হাতির কাছে বল ছিল। সেই বল জাহিদ আনার চেষ্টা করেছিল। হাতি দিতে চাচ্ছিল না। তখন হাতি জাহিদকে ধরে পাড়া দেয়। আহত ছেলেকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য রওনা দেন মাহুত। পথিমধ্যে ছেলে মারা গেলে লাশ নিয়ে গ্রামের বাড়ি চলে যান তিনি।

জাতীয় চিড়িয়াখানার পরিচালক রফিকুল ইসলাম তালুকদার বলেন, ‘মাহুতের অসচেতনতার কারণেই এ ঘটনা ঘটেছে। সে হাতির পরিচিত, তাঁর ছেলে পরিচিত না। বিষয়টি যদি বুঝতে পারত, তাহলে এ ঘটনা হয়তো এড়ানো যেত।’

একজন মাহুতের ছেলের হাতির খাঁচায় ঢুকে পড়ায় চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতা দেখছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ ফিরোজ জামান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘মাহুতের ছেলে ওখানে কেন ঢুকবে? চিড়িয়াখানার সব কর্মীর নির্দিষ্ট পোশাক থাকা উচিত। যাতে করে চিড়িয়াখানার কর্মী ও দর্শনার্থী আলাদা করা যায়।’

চিড়িয়াখানায় কেন শৃঙ্খলা বজায় রাখা যাচ্ছে না—এমন প্রশ্নের জবাবে রফিকুল ইসলাম তালুকদার বলেন, চিড়িয়াখানায় তিনি কোনো বিশৃঙ্খলা দেখেন না।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button