Bangladesh

ইলেকশন মনিটরিং ফোরাম: বিদেশি ‘পর্যবেক্ষকের’ নামে আসলে কাদের আনা হচ্ছে

  • ইএমএফ যে চারজন বিদেশি নাগরিককে নিয়ে এসেছে, তাঁদের কেউ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংস্থার প্রতিনিধি নন।
  • গত নির্বাচনে বিদেশি পর্যবেক্ষককে নিয়ে যা ঘটেছে, তাকে ‘পর্যবেক্ষণ কেলেঙ্কারি’ বলেছিলেন প্রয়াত নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার।

ইলেকশন মনিটরিং ফোরাম নামের একটি সংস্থা চারজন বিদেশি নাগরিককে ঢাকায় নিয়ে এসে তাঁদের নির্বাচন পর্যবেক্ষক হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে। বিদেশি এই চারজন ‘পর্যবেক্ষককে’ নিয়ে সংগঠনটি নির্বাচন কমিশনের সঙ্গেও বৈঠক করেছে। যদিও তাঁদের কেউ আন্তর্জাতিক কোনো নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংস্থার প্রতিনিধি নন।

মূলত গত রোববার নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠকের পরই ইলেকশন মনিটরিং ফোরাম (ইএমএফ) নতুন করে আলোচনায় এসেছে। এই সংগঠনের উদ্দেশ্য কী, কারা এর পেছনে আছেন, বিদেশি পর্যবেক্ষক হিসেবে সংগঠনটি যাঁদের নিয়ে এসেছে, তাঁরা আসলে কারা—এ রকম নানা প্রশ্ন সামনে এসেছে।

২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের সময় কয়েকজন বিদেশিকে এনে তাঁদের ‘আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষক’ হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার ঘটনায় বিতর্কিত হয়েছিল সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশন নামের একটি সংস্থা। সংস্থাটির মহাসচিব আবেদ আলী একই সঙ্গে ইলেকশন মনিটরিং ফোরামেরও চেয়ারম্যান। এই ফোরামের আমন্ত্রণে এবার ঢাকায় আসা চারজন বিদেশি নাগরিক জাতীয় পার্টি (জেপি), জাসদসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি সরকারের মন্ত্রীদের সঙ্গেও বৈঠক করছেন।

আবেদ আলীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বিদেশি পর্যবেক্ষক হিসেবে এখন ঢাকা সফরে থাকা টেরি ইসলে, নিক পল, এন্ডি লিন ও ইউসুকি সুগু—এই চারজন যথাক্রমে যুক্তরাষ্ট্র, আয়ারল্যান্ড, চীন ও জাপানের নাগরিক। তবে তাঁরা ওই সব দেশের সরকার বা কোনো নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংস্থার প্রতিনিধি নন। চার বিদেশি নাগরিকের দুজন সাংবাদিক আর দুজন সমাজকর্মী। তাঁরা এসেছেন ব্যক্তিগতভাবে, বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনের পূর্ববর্তী পরিস্থিতি দেখতে।

ওই চারজন বিদেশি নাগরিক এর আগে অন্য কোনো দেশে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে ইলেকশন মনিটরিং ফোরামের চেয়ার‍ম্যান আবেদ আলী গতকাল সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওনারা বেসিক্যালি সাংবাদিক। নিজ নিজ অবস্থানে হয়তো ভিন্ন ভিন্ন ব্যবসা করতে পারেন, বিভিন্ন কাজ করতে পারেন। দুজন সাংবাদিক, দুজন সমাজকর্মী। ছয়জন আসার কথা ছিল। চারজন এসেছেন। একজন সাংবাদিক তো অবজারভারই (পর্যবেক্ষক)।’

২০১৮ সালে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) নিবন্ধিত ৫৬টি নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংস্থার মোর্চা ইলেকশন মনিটরিং ফোরাম। তবে নির্বাচন পর্যবেক্ষণে এই সংস্থাগুলোর নিবন্ধনের মেয়াদ গত ১৭ জুলাই শেষ হয়েছে। এখন কোনো পর্যবেক্ষক সংস্থাই ইসিতে নিবন্ধিত নয়। আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে স্থানীয় পর্যবেক্ষণ সংস্থাগুলোকে নতুন করে নিবন্ধন দেওয়ার কাজ চলছে।

আবেদ আলীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বিদেশি পর্যবেক্ষক হিসেবে এখন ঢাকা সফরে থাকা টেরি ইসলে, নিক পল, এন্ডি লিন ও ইউসুকি সুগু—এই চারজন যথাক্রমে যুক্তরাষ্ট্র, আয়ারল্যান্ড, চীন ও জাপানের নাগরিক। তবে তাঁরা ওই সব দেশের সরকার বা কোনো নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংস্থার প্রতিনিধি নন। চার বিদেশি নাগরিকের দুজন সাংবাদিক আর দুজন সমাজকর্মী।

চার বিদেশি কারা

 নির্বাচন কমিশন ভবন

নির্বাচন কমিশন ভবনফাইল ছবি

চার বিদেশি নাগরিকের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে চাইলে ইলেকশন মনিটরিং ফোরামের চেয়ারম্যান আবেদ আলী এই প্রতিবেদককে হোয়াটসঅ্যাপে কিছু তথ্য দেন। এসব তথ্যের মধ্যে একটি ‘ভিজিটিং কার্ডের’ ছবিও ছিল। সেখানে নিক পলের নাম ও পরিচয়–সম্পর্কিত কিছু তথ্য লেখা। সেখানে পলকে ‘ইইউ রিপোর্টার’ নামের একটি অনলাইনভিত্তিক সংবাদ মাধ্যমের ‘পলিটিক্যাল এডিটর’ (রাজনীতিবিষয়ক সম্পাদক) হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। পরে প্রথম আলো ‘ইইউ রিপোর্টার ডট সিও’ ঘেঁটে দেখে, নিক পল অনলাইনভিত্তিক ওই সংবাদমাধ্যমের ‘পলিটিক্যাল এডিটর’। তিনি সংবাদ ও সমসাময়িক বিষয়াবলি এবং ‘ডকুমেন্টারি প্রোগ্রামের’ (তথ্যচিত্রবিষয়ক অনুষ্ঠান) একজন অভিজ্ঞ প্রযোজক, এমনটি ওয়েবসাইটে পরিচয় দেওয়া হয়েছে।

আবেদ আলীর সরবরাহ করা আরেকটি পরিচয়পত্রে নাম লেখা টেরি ইসলে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সিবিএস টিভির ব্যবস্থাপনা সম্পাদক বলে কার্ডের পাশে হাতে লেখা ছিল। তবে যে পরিচয়পত্র আবেদ আলী প্রথম আলোকে সরবরাহ করেছেন, তার মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০০০ সালের জানুয়ারি মাসে।

এর বাইরে হোয়াটসঅ্যাপে আবেদ আলী আরও দুজনের নাম লিখে পাঠান। তাঁরা হলেন এন্ডি লিন, তাঁকে উল্লেখ করা হয়েছে চীনের রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সমাজকর্মী হিসেবে। আরেকজন ইউসুকি সুগু, তাঁর পরিচয় দেওয়া হয়েছে জাপানের রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সমাজকর্মী হিসেবে। এর বাইরে তাঁদের বিস্তারিত পরিচয় তিনি জানাননি।

লিংকডইন (অনলাইনে পেশাজীবীদের যোগাযোগের একটি মাধ্যম) ঘেঁটে টেরি ইসলে নামের একজনের ‘প্রোফাইল’ (পরিচিতি) পাওয়া যায়। সেখানে কোনো ছবি ছিল না। সেখানে তাঁর পরিচয়ে উল্লেখ করা আছে সিবিএসের সাবেক ম্যানেজিং এডিটর এবং লস অ্যাঞ্জেলেস রেডিওর ম্যানেজিং এডিটর (২০০১–২০০২, এক বছর) হিসেবে। কার্ডের পাশাপাশি চারজনের নাম ও পরিচয় লিখে পাঠান আবেদ আলী। সেখানে টেরি এল ইসলেকে রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং যুক্তরাষ্ট্রের টেনেট ফাইন্যান্স ইন্টারন্যাশনালের ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে ওই নামে যুক্তরাষ্ট্র নয়, যুক্তরাজ্যভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠানের তথ্য অনলাইনে পাওয়া যায়। সেই প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট ঘেঁটে দেখা যায়, টেরি এল ইসলে নামের এক ব্যক্তি ওই প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। তিনি মূলত একজন নিবন্ধিত বিনিয়োগ ব্যাংকার।

ওনারা বেসিক্যালি সাংবাদিক। নিজ নিজ অবস্থানে হয়তো ভিন্ন ভিন্ন ব্যবসা করতে পারেন, বিভিন্ন কাজ করতে পারেন। দুজন সাংবাদিক, দুজন সমাজকর্মী। ছয়জন আসার কথা ছিল। চারজন এসেছেন। একজন সাংবাদিক তো অবজারভারই (পর্যবেক্ষক)

ইলেকশন মনিটরিং ফোরামের চেয়ারম্যান আবেদ আলী

অন্যদিকে ইলেকশন মনিটরিং ফোরামের চেয়ারম্যান আবেদ আলীর বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হলেও বড় হয়েছেন চট্টগ্রামে। তিনি জানান, চট্টগ্রাম শহরের জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদ্রাসা থেকে কামিল পাস করেন। এ ছাড়া চট্টগ্রাম সিটি কলেজে পড়াশোনা করেছেন।

ইলেকশন মনিটরিং ফোরামের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এই ফোরামের উপদেষ্টা সাবেক নির্বাচন কমিশনার শাহাদাৎ হোসেন চৌধুরী। তিনি কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশনে নির্বাচন কমিশনার ছিলেন। ওই কমিশনের অধীনে অনুষ্ঠিত ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে দেশ–বিদেশে প্রশ্ন রয়েছে। এ ছাড়া ফোরামের ৮ জন পরিচালকের মধ্যে রয়েছেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার মো. শাহ নেওয়াজ। তিনি কাজী রকিবউদ্দীনের নেতৃত্বাধীন কমিশনে নির্বাচন কমিশনার ছিলেন। তাঁদের অধীনে ২০১৪ সালে একতরফা জাতীয় নির্বাচন হয়েছিল।

ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, ফোরামের পরিচালক হিসেবে আছেন ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হাবিবুর রহমান, ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য আবুল কালাম আজাদ, বুয়েটের সহ–উপাচার্য আবদুল জব্বার খান, বঙ্গবন্ধু ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মাহফুজুল ইসলাম, ব্যবসায়ী ইকবাল বাহার, ব্যাংক কর্মকর্তা সুলতানা রাজিয়া ও তানভিরুল ইসলাম।

সরকারের ‘সুরে’ কথা

গত রোববার ইলেকশন মনিটরিং ফোরাম চার বিদেশি নাগরিককে নিয়ে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করে। বৈঠক শেষে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক টেরি এল ইসলে সাংবাদিকদের বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি অসাংবিধানিক ও বেআইনি। বর্তমান কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারবে বলে তাঁরা মনে করেন। তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিষয়ে বক্তব্য দিয়েছিলেন নিজ থেকেই। বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিকদের কেউ তাঁকে তখন প্রশ্ন করেননি।

নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠকের পর সংস্থাটির চেয়ারম্যান আবেদ আলীর কয়েকটি ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। এর কোনোটিতে দেখা যায় তিনি প্রধানমন্ত্রীর হাতে নৌকার রেপ্লিকা তুলে দিচ্ছেন, কোনোটিতে তাঁকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায়। এ ছাড়া ফেসবুকে ২০২১ সালের একটি চিঠিও ছড়িয়ে পড়েছে। এই চিঠির বক্তব্য হচ্ছে সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশন সার্কের লোগো ব্যবহার করছে, যা অনুমোদিত নয়।

গত বছর নির্বাচন কমিশন সর্বোচ্চ ১৫০ আসনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর ইলেকশন মনিটরিং ফোরাম ইভিএমের পক্ষে অবস্থান নিয়ে আলোচনা সভার আয়োজন করেছিল। এ ছাড়া ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আট মাস পর সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশন ও ইলেকশন মনিটরিং ফোরাম ঢাকায় একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল। সেখানে নির্বাচন প্রসঙ্গে বলা হয়েছিল, ‘জাতীয় নির্বাচনের মতো বিষয় নিয়ে ভালো নাগরিকদের প্রশ্ন করা উচিত নয়।’ আর গত জাতীয় নির্বাচনের পরপরই দুটি সংগঠন বলেছিল, ‘নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে’।

ইলেকশন মনিটরিং ফোরাম ক্ষমতাসীন দল ও সরকারের হয়ে কাজ করছে, এমন অভিযোগের বিষয়ে আবেদ আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকারের বিপক্ষে যারা বলে, তারা কি বিএনপির দালাল? এবার আমরা বিএনপির সঙ্গেও বৈঠক করতে চেয়েছিলাম। বিএনপি সময় দিয়েও ক্যানসেল করেছে।’

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া বিভিন্ন ছবির বিষয়ে আবেদ আলী বলেন, তিনি সাবেক মন্ত্রী নাজমুল হুদার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতে গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি প্রধানমন্ত্রীর হাতে নৌকা দেন। কিন্তু তিনি কখনো রাজনীতি করেননি। তাঁরা কখনো বলেননি সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশন সার্ক সদর দপ্তরে নিবন্ধিত। তবে এটি সেখানে নিবন্ধনের প্রক্রিয়া চলছে।

চার বিদেশি নাগরিকের বক্তব্য শুনে এবং তাঁদের সম্পর্কে যতটুকু জানা গেছে তাতে মনে হয়, কোনো স্বার্থান্বেষী মহল বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনে তাঁদের এনেছে। নির্বাচন পর্যবেক্ষণের কোনো অভিজ্ঞতা তাঁদের আছে বলে মনে হয় না।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার

প্রশ্নবিদ্ধ অতীত

২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচন শেষে ইলেকশন মনিটরিং ফোরাম বলেছিল, তারা ২৩৯টি আসনের ১৭ হাজার ১৬৫টি কেন্দ্রে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছে। সার্বিক বিবেচনায় নির্বাচন ‘খুবই শান্তিপূর্ণ, সুন্দর ও আনন্দঘন পরিবেশে’ অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে তখন তারা মত দিয়েছিল।

সেই নির্বাচনে খুব বেশি আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক ছিলেন না। সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশন কানাডার নাগরিক তানিয়া ফস্টারসহ বেশ কয়েকজন বিদেশি ‘পর্যবেক্ষককে’ নির্বাচন পর্যবেক্ষণে নিয়ে এসেছিল। তাঁরা নির্বাচন অত্যন্ত সুষ্ঠু হয়েছে বলে উল্লেখ করেছিলেন। পরবর্তী সময়ে তানিয়া ফস্টার রয়টার্সকে অবশ্য ভিন্ন বক্তব্য দিয়েছিলেন। সে সময়ের আলোচিত এই বিষয়টি উঠে এসেছে প্রয়াত নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদারের লেখা নির্বাচননামা: নির্বাচন কমিশনে আমার দিনগুলো বইয়ে।

মাহবুব তালুকদার বইয়ে লিখেছেন, ‘ভোটে একজন বিদেশি পর্যবেক্ষককে নিয়ে যা ঘটেছে, তাকে পর্যবেক্ষণ কেলেঙ্কারি আখ্যা দেওয়া যায়।’ তিনি বইয়ে আরও লিখেছেন, ‘এ প্রসঙ্গে জানা যায়, সার্ক হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন নামে একটি ভুঁইফোড় সংগঠন, যার সঙ্গে সার্কের কোনো সম্পর্কই নেই; কানাডা, ভারত, নেপাল ও শ্রীলঙ্কা থেকে কয়েকজন পর্যবেক্ষককে নিয়ে আসে। ওই দলে ছিলেন তানিয়া ফস্টার। কানাডার একটি প্রদেশের প্রাদেশিক সরকারের নীতি বিশ্লেষক ফস্টার বলেন, তিনি কানাডায় অবস্থানরত বাংলাদেশিদের কাছে জানতে পারেন, সার্ক হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন নামের একটি সংগঠন বিদেশি নির্বাচন পর্যবেক্ষক খুঁজছে। আমি যোগ্যতা সম্পর্কে জানতে চাইলাম, কারণ আমার মনে হলো, এই অভিজ্ঞতাটা চমকপ্রদই হবে। আমি সার্কে ও নির্বাচন কমিশনে আবেদন করলাম।’ তিনি জানান, তাঁর মেয়ে ক্লোত্র ফস্টারও পর্যবেক্ষক প্যানেলে যোগ দেন। এর আগে কোনো জাতীয় নির্বাচনে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক হিসেবে কাজ করার কোনো অভিজ্ঞতা তাঁদের ছিল না।’

সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশনের বিষয়ে মাহবুব তালুকদার তাঁর বইয়ে লিখেছেন, ‘স্পষ্টতই এটি একটি ভুয়া সংগঠন।’

২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিশেষ উদ্দেশ্যে এ ধরনের বিদেশি পর্যবেক্ষক আনা হয়েছিল, এবারও তারই পুনরাবৃত্তি হচ্ছে বলে আশঙ্কা করছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, চার বিদেশি নাগরিকের বক্তব্য শুনে এবং তাঁদের সম্পর্কে যতটুকু জানা গেছে তাতে মনে হয়, কোনো স্বার্থান্বেষী মহল বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনে তাঁদের এনেছে। নির্বাচন পর্যবেক্ষণের কোনো অভিজ্ঞতা তাঁদের আছে বলে মনে হয় না। ২০১৮ সালের মতো এ ধরনের ব্যক্তিদের নির্বাচন ‘পর্যবেক্ষক’ হিসেবে নিয়োগ করলে নির্বাচন কমিশনের আস্থা আরও তলানিতে নামবে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button