৫৩৭ কোটি টাকার মেগা প্রকল্প ঝুঁকিতে
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক শেখ আবদুস সালামের বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্য, শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম, উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতি, ব্যক্তিগত ভবনের কাজে নিয়োজিত নিরাপত্তা কর্মীদের বিশ্ববিদ্যালয় কোষাগার থেকে বেতন-ভাতা দেওয়াসহ অনেক অভিযোগ উঠেছে। এসব অভিযোগ আমলে নিয়ে সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে তদন্ত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন-ইউজিসি। তদন্তে প্রমাণ মিলেছে অনেক অনিয়মের। অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান ৫৩৭ কোটি টাকার মেগা প্রকল্প ঝুঁকিতে পড়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯টি ভবনের নির্মাণকাজে পাইলিং কমিয়ে দেওয়া হয়েছে ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কোনো মতামত না নিয়েই। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, উপাচার্য তার এখতিয়ারবহির্ভূত অনেক কাজ করেছেন। এ ছাড়া শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় সংবিধির ব্যত্যয় করে উপেক্ষা করা হয়েছে প্ল্যানিং কমিটির সুপারিশকে। আর উপাচার্য এসব অনিয়ম-দুর্নীতি অস্বীকার করে বলেছেন, আর্থিক এ বিষয়গুলোকে দুর্নীতি বলা যায় না, তবে এগুলো অডিট আপত্তি হিসেবে আসতে পারে। ইউজিসির তিন সদস্যের তদন্ত কমিটিতে আহ্বায়ক ছিলেন ইউজিসি সাবেক সদস্য অধ্যাপক আবু তাহের। বর্তমানে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। ড. আবু তাহের সম্প্রতি এ প্রতিবেদককে বলেন, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধে যেসব অনিয়মের প্রমাণ মিলেছে তা খুবই দুঃখজনক।
বিশ্ববিদ্যালয় সংবিধির তথ্যমতে, বিভাগে নতুন পদ সৃষ্টি, শূন্যপদ পূরণের প্রস্তাব প্রদানসহ সব ধরনের শিক্ষক নিয়োগ বোর্ডের বিশেষজ্ঞ এবং সদস্যদের নাম প্রস্তাব করবে প্ল্যানিং কমিটি। কিন্তু এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রভাষক ও সহকারী অধ্যাপক পদে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে প্ল্যানিং কমিটির সুপারিশ আমলেই নেননি উপাচার্য, যা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় সংবিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। ইউজিসির তদন্ত কমিটি পর্যবেক্ষণে বলেছে, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে নিয়মের লঙ্ঘন করেছেন উপাচার্য শেখ আবদুস সালাম। উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর ঢাকায় ব্যক্তিগত নির্মাণাধীন বিল্ডিংয়ের কাজ তদারকির জন্য তিনজন নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগ দিয়েছেন উপাচার্য। তাদের বেতন দিচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয় ফান্ড থেকে, যা আর্থিক শৃঙ্খলার পরিপন্থি। নিরাপত্তা প্রহরীদের মাসিক বেতন বাবদ যে টাকা বিশ্ববিদ্যালয় কোষাগার থেকে দেওয়া হয়েছে তা উপাচার্যের ব্যক্তিগত তহবিল থেকে আদায় করতে বলেছে ইউজিসির তদন্ত কমিটি।
উপাচার্য আবদুস সালামের বিভিন্ন কল রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে, যাতে উঠে এসেছে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করে দেওয়াসহ নানান বিষয়। তদন্ত কমিটির পর্যবেক্ষণে বলা হয়, দুটি বিভাগের শিক্ষক নিয়োগের পূর্বে প্রার্থীকে চেক আনার বিষয়ও উঠে এসেছে কল রেকর্ডিংয়ে। তদন্ত কমিটি প্রতিবেদনে বলেছে, সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশিত এসব কল রেকর্ড উপাচার্যের কথোপকথন হয়ে থাকলে এর দায় এড়ানোর সুযোগ নেই উপাচার্যের। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৩৭ কোটি টাকার মেগা প্রকল্পে বড় অনিয়ম পেয়েছে ইউজিসির তদন্ত কমিটি। মেগা প্রকল্পে অনুমোদিত বিল্ডিংয়ের ডিজাইন পরিবর্তন করে ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কোনো মতামত না নিয়েই ৯টি নতুন ভবনের পাইলিংয়ের দৈর্ঘ্য কমিয়ে ফেলা হয়েছে। এত বড় অনিয়মের বিষয়টি ইউজিসির পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগকেও অবগত করা হয়নি।
এ ছাড়া বিল্ডিং রি-ডিজাইন করার ক্ষেত্রে সয়েল টেস্ট লোড ক্যাপাসিটি এবং বিল্ডিং ডিজাইনের স্থায়িত্ব ও নিরাপত্তা বিধানের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের দেওয়া তথ্য যথাযথ নয় বলে মনে করে তদন্ত কমিটি। যেসব ভবনে পাইলিংয়ের দৈর্ঘ্য কমানো হয়েছে সেগুলো ভবনের লোড নিতে পারবে কি না তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে তদন্ত কমিটি। বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান মেগা প্রকল্পের বিল থেকে প্রায় সাড়ে ৬ কোটি টাকা ভাগবাঁটোয়ারার অভিযোগ পাওয়া গেছে। কোনো ক্ষেত্রে অতিরিক্ত রডের পরিমাণ দেখিয়ে, আবার কোনো ক্ষেত্রে যোগফল ভুল দেখিয়ে এই টাকা হরিলুট করা হয়েছে বলে অভিযোগ। এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের নিয়ে বিশেষায়িত কমিটি করতে বলেছে তদন্ত কমিটি। অনুমোদিত পদের চেয়ে উপপরিচালকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা পদে অধিকসংখ্যক পদোন্নতি দিয়েছেন উপাচার্য শেখ আবদুস সালাম।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, এসব পদোন্নতির কারণে কর্মকর্তা-কর্মচারীর শতকরা হারের ব্যাপক তারতম্য ঘটেছে, যার ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশৃঙ্খল পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৫৫তম সিন্ডিকেট সভায় শর্তসাপেক্ষে বেতন বৃদ্ধি করেছেন উপাচার্য, যা জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ এবং সরকারের আর্থিক শৃঙ্খলা পরিপন্থি। বিশ্বকাপ ফিন্যান্স কমিটি বা সিন্ডিকেটে এ ধরনের অনুমোদন দেওয়া এখতিয়ারবহির্ভূত বলে জানানো হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদনে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক শেখ আবদুস সালাম তার বিরুদ্ধে ওঠা নানা অভিযোগ আর তদন্ত প্রতিবেদনের ব্যাপারে বলেন, যেসব আর্থিক অনিয়মের কথা বলা হয়েছে তা নিয়ে অডিট আপত্তি হতে পারে। কিন্তু এগুলো অনিয়ম-দুর্নীতি বলা যায় না। আমি কোনো দুর্নীতি করিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান প্রতিবেদককে বলেন, উপাচার্যের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে ইউজিসি তদন্ত করেছে। তদন্ত কমিটি আমার সঙ্গেও কথা বলেছে। তবে আমি এ প্রতিবেদন এখনো দেখিনি।
Hiya! Quick question that’s completely off topic. Do you know how to make your site mobile friendly? My weblog looks weird when viewing from my iphone 4. I’m trying to find a template or plugin that might be able to correct this issue. If you have any suggestions, please share. Appreciate it!