যুক্তরাষ্ট্রে দমনপীড়নেও অনড় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ইসরাইলবিরোধী প্রতিবাদ-বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠা যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাসগুলো প্রশাসন ও পুলিশের দমনপীড়নে ক্রমশ শান্ত হয়ে এলেও দাবি আদায়ে তারা এখনো অনড় অবস্থানে রয়েছেন।
পুলিশি তৎপরতার পর ক্যাম্পাসগুলোর পরিবেশ ছিল অনেকটাই শান্ত। তবে শনিবার নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটি, শিকাগো ইউনিভার্সিটি, জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, ওয়াশিংটন স্কোয়ার পার্কে ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছেন।
এদিকে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পূর্বনির্ধারিত স্নাতক অনুষ্ঠান নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। খবর এএফপি, বিবিসির।
নিউইয়র্কের ম্যানহাটনে নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটিতে শনিবার সকালে শিক্ষার্থীদের একটি যুদ্ধবিরোধী তাঁবু পুলিশ তুলে দিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওগুলোতে দেখা গেছে বিক্ষোভকারীরা কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অনুসারে তাদের তাঁবুগুলো গুটিয়ে নিচ্ছেন। দেশজুড়ে ক্যাম্পাসগুলোর যে বিক্ষুব্ধ রূপ ছিল, তার তুলনায় এ পরিস্থিতিকে শান্তই বলা যায়।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি বিশ্বের কয়েকটি দেশের বিশ্ববিদ্যালয়েও এই শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে গত কয়েক সপ্তাহের বিক্ষোভে এ পর্যন্ত দুই হাজারের বেশি প্রতিবাদকারীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
এ সময় পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সহিংসতায় জড়িয়ে পড়ার ঘটনাও ঘটেছে। পুলিশের বিরুদ্ধেও মাত্রাতিরিক্ত শক্তিপ্রয়োগের অভিযোগও উঠেছে। গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরাইলের হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদ জানাতে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ৪৫টি অঙ্গরাজ্যের কমপক্ষে ১৪০টি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা গত প্রায় এক মাস ধরে বিক্ষোভ সমাবেশ করে আসছেন।
ক্যাম্পাসে পুলিশি তৎপরতায় সমাবেশ বিক্ষোভ কিছুটা দমে এলেও নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটি, শিকাগো ইউনিভার্সিটি, জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, ওয়াশিংটন স্কোয়ার পার্কের মতো স্থানেও ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ সমাবেশ আরও জোরদার হচ্ছে। এভাবেই তারা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত বিক্ষোভ অব্যাহত রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।
জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির ল স্কুলের লিসনার হলে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা আমেরিকার পতাকায় ‘জেনোসাইড জো’ লেখা মার্কিন প্রেসিডেন্টের ছবি ঝুলিয়ে দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ অধিকাংশ ক্ষেত্রে এতদিন শান্ত থাকলেও, তারা এখন কর্মসূচির মাধ্যমে স্নাতক অনুষ্ঠান বিঘ্নিত করার পরিকল্পনা করছেন।
ইন্ডিয়ানা ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষার্থী এবং প্যালেস্টাইন সলিডারিটি কমিটি স্নাতক অনুষ্ঠান বর্জনের আহ্বান জানিয়েছেন। ইউনিভার্সিটি অব মিশিগান, ওহাইয়ো স্টেট ইউনিভার্সিটি এবং ইউনিভার্সিটি অব কানেকটিকাটে ৪ এবং ৫ মে স্নাতক অনুষ্ঠানের কথা ছিল।
ইউনিভার্সিটি অব মিশিগান কর্তৃপক্ষ বিক্ষোভের স্থানে ব্যানার, পতাকা নিষিদ্ধ করাসহ বিক্ষোভকারীদের নজরদারি করার ঘোষণা দিয়েছে। ওহাইয়ো স্টেট ইউনিভার্সিটির প্রেসিডেন্ট টেড কার্টার বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষার প্রত্যয় ব্যক্ত করার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম যাতে ব্যাহত না হয়, তার ওপরও গুরুত্বারোপ করেছেন।
বিক্ষোভের সূচনা করা কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে স্নাতক অনুষ্ঠান ১৫ মে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। ইতোমধ্যে সেখানে পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাঁবু গুঁড়িয়ে দিয়েছে। স্নাতক অনুষ্ঠানের নির্ধারিত সময়েও সেখানে পুলিশের অবস্থান করার কথা রয়েছে।
কলাম্বিয়ার ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থী মাহমুদ খলিল বলেন, এসব তৎপরতা সত্ত্বেও বিক্ষোভ কর্মসূচি চলবে। শিক্ষার্থীরা অক্টোবর থেকেই বিক্ষোভ চালিয়ে আসছে। বিশ্ববিদ্যায় কর্তৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে বহিষ্কারসহ নানা পদক্ষেপ নিলেও, এসব পদক্ষেপ কাউকে দমাতে পারেনি।
মাহমুদ বলেন, পুলিশ দিয়ে আমাদের আন্দোলন দমাতে পারবে বলে আমার মনে হয় না। পরিকল্পিত স্নাতক অনুষ্ঠান বাতিল বা স্থগিত করা হবে কিনা এ প্রশ্নে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোনো জবাব দেয়নি।
বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীদের পড়ার সুযোগ দেবে হুথি গোষ্ঠী : যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভের অপরাধে যেসব শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে, তাদের ইয়েমেনে পড়াশোনার সুযোগ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে সশস্ত্র গোষ্ঠী হুথি। হুতিদের নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত সানা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মকর্তা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে যেসব শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে, আমরা তাদের স্বাগত জানাচ্ছি।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে বলেছে, বহিষ্কৃত মার্কিন শিক্ষার্থীরা চাইলে ইয়েমেনে পড়াশোনা করতে পারেন। ভর্তি ও অন্যান্য তথ্যের জন্য ওইসব শিক্ষার্থীদের জন্য একটি ইমেইল ঠিকানাও প্রকাশ করেছে সানা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।