Bangladesh

রাজনৈতিক উত্তাপের সঙ্গে বাড়ছে মূল্যস্ফীতিও

নতুন অর্থবছরের শুরুর মাস জুলাইয়ে মূল্যস্ফীতির জন্য ইতিবাচক কোনো খবর নেই। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম মাসে মূল্যস্ফীতি হতে পারে সাড়ে ৯ শতাংশের বেশি। চলমান রাজনৈতিক উত্তাপের সঙ্গে যেন বাড়ছে মূল্যস্ফীতিও। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এখনো জুলাই মাসের চূড়ান্ত হিসাব প্রকাশ করেনি। তবে বিবিএসের সূত্র বলছে, নতুন অর্থবছরের প্রথম মাসে এই হার সাড়ে ৯ শতাংশের ওপরে হতে পারে।

সদ্যোবিদায়ি অর্থবছরের (২০২২-২৩) মার্চ মাস থেকেই মূল্যস্ফীতি ছিল ঊর্ধ্বমুখী। কখনো তা হয়েছে সাড়ে ৯ শতাংশের ওপরে। অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা বিরাজ করলে তার প্রভাব পড়বে অর্থনীতিতে।

ফলে ব্যাহত হতে পারে আমদানি-রপ্তানি। এতে বাড়তে পারে মূল্যস্ফীতির চাপ।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিবিএসের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, জুলাই মাসে মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৯ শতাংশের ওপরে হতে পারে। তবে তা ঠিক কত শতাংশ হবে এখনই বলা যাচ্ছে না। আর আমরা জুলাই মাস থেকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) নিয়ম অনুযায়ী মূল্যস্ফীতির তথ্য দেব। আগে যেখানে মূল্যস্ফীতির পণ্যঝুড়িতে ৩২০টি পণ্য ছিল, সেখানে এখন পণ্য রয়েছে ৭২০টির মতো। আমাদের কর্মকর্তারা বাজারে যান। তাঁরা পণ্যের দাম নিয়ে হিসাব করে মূল্যস্ফীতির তথ্য দেন। এখানে লুকোচুরির কিছু নেই। তথ্য যা পাওয়া যায় তাই আমরা প্রকাশ করি।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বর্তমান প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা না থাকলে সব কিছু থমকে যাবে। বিশেষ করে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, যার মধ্যে বিনিয়োগ, আমদানি-রপ্তানি। আর বিদেশি বাজারে ঠিকমতো রপ্তানি না করতে পারলে বাজারও হাত ছাড়া হতে পারে। তাই এখন আগে প্রয়োজন স্থিতিশীলতা।’ তিনি আরো বলেন, ‘রাজনীতিবিদরা তাঁদের নিজের স্বার্থটাই দেখছেন, তাঁরা দেশের স্বার্থ দেখছেন না। এখন উচিত মিলেমিশে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করে দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতিকে শান্ত, স্থিতিশীল রাখা।’

বিবিএসের হিসাব মতে, গত মার্চ মাসে দেশে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯.৩৩ শতাংশ। এর মধ্যে শহরে ৯.৩৬ শতাংশ আর গ্রামে ছিল ৯.৩২ শতাংশ। এর পরের মাস এপ্রিলে জাতীয়ভাবে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯.২৪ শতাংশ। শহরে ৮.৯২ এবং গ্রামে ৯.৬৮ শতাংশ। মে মাসে আরো বেড়ে মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ৯.৯৪ শতাংশ। শহরে ৯.৯৭ শতাংশ আর গ্রামে ৯.৮৫ শতাংশ। বিদায়ি অর্থবছরের শেষ মাস জুনে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯.৭৪ শতাংশ। শহরে এই হার ছিল ৯.৪৫ শতাংশ আর গ্রামে ছিল ৯.৮২ শতাংশ।

বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে সাধারণ মানুষের জন্য মূল্যস্ফীতি বড় চিন্তার কারণ। বিদায়ি অর্থবছরের শেষ মাস জুনে মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ৯.৭৪ শতাংশ। কোনো দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে হলে প্রয়োজন সংঘাতহীন রাজনৈতিক পরিস্থিতি, যাতে মানুষ স্বাভাবিকভাবে চলাচল করতে পারে, পণ্য আমদানি-রপ্তানি করতে পারে। মূলকথা হলো, দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকতে হবে।

তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক সংঘাতের আশঙ্কা থেকেও বিনিয়োগ, পণ্যের অর্ডার কমতে পারে। সুতরাং এ বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে। আবার শুধু রাজনৈতিক সহিংসতা নয়, আমাদের জ্বালানিসংকটও রয়েছে। উৎপাদনের জন্য এ বিষয়গুলো নিয়ে ভাবতে হবে।’

বিবিএসের তথ্য মতে, ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে মূল্যস্ফীতি ছিল ৫.৮৬ শতাংশ। নভেম্বরে এক লাফে এই মূল্যস্ফীতি ৮.৮৫ শতাংশে উঠে যায়। ডিসেম্বরে মূল্যস্ফীতি হয় ৮.৭১ শতাংশ।

২০২২-২৩ অর্থবছরের শুরু থেকে মূল্যস্ফীতি ছিল ৮ শতাংশের ওপরে। জানুয়ারিতে মূল্যস্ফীতি দাঁড়ায় ৮.৫৭ শতাংশ। ফেব্রুয়ারিতে মূল্যস্ফীতি দাঁড়ায় ৮.৭৮ শতাংশ, মার্চে তা ৯ শতাংশের ঘর পেরিয়ে দাঁড়ায় ৯.৩৩ শতাংশ। এপ্রিলে ৯.২৪ শতাংশ।

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কোনো দেশের উন্নয়নের অন্যতম শর্ত রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। বিগত বছরগুলোয় আমাদের যে ধারাবাহিক উন্নয়ন, তার মূলে রয়েছে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। দেশের রাজনীতিতে ভিন্নমত থাকতেই পারে। তাই বলে কেউ রাস্তাঘাট বন্ধ করে দিতে পারে না। রেললাইন উপড়ে ফেলতে পারে না, পণ্য আনা-নেওয়া করতে বাধা দিতে পারে না।’

তিনি আরো বলেন, ‘বর্তমান প্রেক্ষাপটে দেশে যদি সহিংসতা বাড়ে তবে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে অর্থনীতিতে; বিশেষ করে মূল্যস্ফীতি, বিনিয়োগ ও আমদানি-রপ্তানিতে।’

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button