Bangladesh

সমাজসেবা অধিদপ্তরের ‘খাতিরের’ প্রকল্প: করের টাকায় মন্ত্রী-সচিবের মা-বাবার নামে প্রতিষ্ঠান

মা-বাবা, নানা-নানি, দাদা এবং বাড়ির নামে হাসপাতালের মতো স্থাপনা করতে ৯ জন নিয়েছেন ২৮৬ কোটি টাকা

সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের গ্রামে তাঁর মায়ের নামে হাসপাতাল নির্মিত হচ্ছে ৪৪ কোটি টাকা ব্যয়ে। যার ৩৫ কোটি টাকা দিচ্ছে সমাজসেবা অধিদপ্তর। লালমনিরহাটের কালীগঞ্জের তুষভান্ডার ইউনিয়নে। সম্প্রতি তোলা

সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের গ্রামে তাঁর মায়ের নামে ‘করিমপুর নূরজাহান-সামসুন্নাহার মা ও শিশু বিশেষায়িত হাসপাতাল’ নির্মিত হচ্ছে ৪৪ কোটি টাকা ব্যয়ে। পাঁচতলা ভবনের এই হাসপাতাল নির্মাণের জন্য ৮০ শতাংশ অর্থ বা ৩৫ কোটি টাকা দিচ্ছে সমাজসেবা অধিদপ্তর, যেটি সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি প্রতিষ্ঠান। হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠা করছে মন্ত্রীর মায়ের নামের এনজিও (বেসরকারি সংস্থা) করিমপুর নূরজাহান-সামসুন্নাহার উন্নয়ন সংস্থা। নির্মাণকাজ পেয়েছে মন্ত্রীর ভাইয়ের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

নির্মাণকাজ চলতে থাকা হাসপাতালটির এক কিলোমিটারের মধ্যেই সরকারি উপজেলা হাসপাতাল রয়েছে।

দুর্নীতি প্রতিরোধ নিয়ে কাজ করা সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, মন্ত্রীর অধীন প্রতিষ্ঠানের প্রকল্পের মাধ্যমে মন্ত্রীর মায়ের নামে হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা স্বার্থের সংঘাত। মন্ত্রীরা শপথ নেন এই বলে যে ‘তাঁরা অনুরাগ অথবা বিরাগের বশবর্তী হয়ে কোনো কাজ করবেন না।’ নিজের মায়ের নামে হাসপাতাল প্রতিষ্ঠায় নিজের অধীন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে জনগণের অর্থ ব্যয় শপথের বিপরীতমুখী সিদ্ধান্ত।

অবশ্য সমাজসেবা অধিদপ্তরের প্রকল্পের মাধ্যমে শুধু মন্ত্রী নন, আমলারাও নিজের মা-বাবা অথবা স্বজনের নামে হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, প্রশিক্ষণকেন্দ্র ইত্যাদি স্থাপনা করেছেন। সমাজসেবা অধিদপ্তর ২০১৫ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ১৮টি প্রকল্পের (ডায়াবেটিক হাসপাতাল ছাড়া) মাধ্যমে এ ধরনের স্থাপনা নির্মাণ করেছে অথবা করছে, যার অন্তত ১১টি মন্ত্রী অথবা আমলাদের মা-বাবা অথবা স্বজনের নামে।

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অনুদানে হাসপাতাল, প্রশিক্ষণকেন্দ্র বা সমজাতীয় স্থাপনা নির্মাণ ও পরিচালনা করে এনজিও। নিয়ম হলো, শহর এলাকায় প্রকল্প করতে মোট ব্যয়ের ৬০ শতাংশ ও গ্রাম এলাকায় ৮০ শতাংশ অর্থ সরকার দেবে, বাকিটা দেবে এনজিও। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, যেসব এনজিও প্রকল্প পাচ্ছে, সেগুলোর এ ধরনের প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনার সক্ষমতা নেই। এনজিওগুলো মূলত নিজেদের স্বজনের নামে মন্ত্রী-সচিবেরা প্রতিষ্ঠা করেছেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে স্থাপনা নির্মিত হলেও সেবাদান কার্যক্রম চালু হচ্ছে না।

মন্ত্রীর মায়ের নামে হাসপাতাল

সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের বাবা প্রয়াত করিমউদ্দিন আহমেদের দুই স্ত্রী সামসুন্নাহার করিম ও নূরজাহান করিমের নামে হাসপাতাল নির্মাণের প্রকল্প পাওয়া এনজিওটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। মন্ত্রী নুরুজ্জামান সামসুন্নাহার করিমের গর্ভের সন্তান।

নুরুজ্জামান আহমেদ লালমনিরহাটের আদিতমারী ও কালীগঞ্জ নিয়ে গঠিত লালমনিরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য। তিনি ২০১৬ সালের ১৯ জুন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হন (এখন মন্ত্রী)। একই বছরের ২৬ ডিসেম্বর করিমপুর নূরজাহান-সামসুন্নাহার উন্নয়ন সংস্থা সমাজসেবা অধিদপ্তরে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা হিসেবে নিবন্ধিত হয়। আর দেড় বছর পরেই হাসপাতাল নির্মাণের প্রকল্পটি পায়।

যদিও সরকারি নীতিমালায় বলা আছে, সরকারি সহযোগিতা পেতে হলে সংশ্লিষ্ট খাতে বেসরকারি সংস্থার অন্তত দুই বছরের বাস্তব অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।

সরকারি টাকা নিয়ে মা-বাবার নামে প্রতিষ্ঠান করা অর্থ আত্মসাতের শামিল। সরকারি টাকা কেউ ব্যক্তিস্বার্থে ব্যবহার করতে পারে না। এটা জনগণের টাকা।

আলী ইমাম মজুমদার, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব

নিজের মায়ের নামে সরকারের টাকায় হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা নিয়ে নুরুজ্জামান আহমেদের বক্তব্য চেয়ে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা জাকির হোসেনকে ই-মেইল করা হয় গত ১৭ জুলাই। এরপর জনসংযোগ কর্মকর্তাকে মুঠোফোনে বিষয়টি মনে করিয়ে দেওয়া হয়। তবে বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

হাসপাতালটি হচ্ছে কালীগঞ্জের তুষভান্ডার ইউনিয়নের কাশিরামে মন্ত্রীর বাড়ি থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে। সরেজমিনে গত ৫ জুন দেখা যায়, হাসপাতালটির ভবনের পঞ্চম তলা পর্যন্ত ছাদের কাজ হয়েছে।

হাসপাতালের ঠিকাদারি কাজ পেয়েছে মন্ত্রীর ভাই শামসুজ্জামান আহমেদের প্রতিষ্ঠান দ্য বিল্ডার্স অ্যাসোসিয়েট লিমিটেড। শামসুজ্জামান গত ১৩ জুন প্রথম আলোকে বলেন, প্রকল্পের ৯০ শতাংশ কাজ শেষ। বাকিটা সমাপ্ত করতে এক বছর সময় চাওয়া হয়েছে।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) গত ৫ জুনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২১ সালেই হাসপাতালের কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার কথা।

হাসপাতালটি নির্মাণে মোট ব্যয়ের ২০ শতাংশ (প্রায় ৯ কোটি টাকা) এনজিওর দেওয়ার কথা। এনজিওর অংশ বাবদ মন্ত্রীর পরিবারের দেওয়া এক একর জমির দাম দেখানো হয়েছে সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা। বাকি টাকা হাসপাতাল নির্মাণের হিসাবে জমা পড়েনি। আইএমইডির প্রতিবেদনে টাকা দ্রুত জমা করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে।

হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার জন্য জমির যে দাম দেখানো হয়েছে, তা-ও অনেক বেশি। স্থানীয় সাবরেজিস্ট্রি কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, স্থানীয় মৌজা মূল্য (রেট) অনুযায়ী জমির দাম হওয়ার কথা ৫২ লাখ টাকা। কিন্তু মূল্য ধরা হয়েছে ১০ গুণের বেশি। হাসপাতালের জমিটি বড় কোনো সড়কের পাশেও নয় যে বাজারমূল্য অনেক বেশি হবে। উপজেলা সড়ক থেকে মেঠো পথ ধরে প্রায় এক কিলোমিটার যাওয়ার পর হাসপাতালের জায়গাটি দেখা যায়।

সরকারি উপজেলা হাসপাতালের এক কিলোমিটারের মধ্যে সরকারের টাকায় আরেকটি হাসপাতাল করার বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ প্রথম আলোকে বলেন, সরকারি স্বাস্থ্যসেবা নেটওয়ার্কের বাইরে ‘বড়’ ব্যক্তিরা এমন হাসপাতাল আগেও করেছেন। সেগুলো পরে গোচারণ ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। কারণ, ওই সব হাসপাতালের জন্য সরকারের বাজেট বরাদ্দ থাকে না, জনবল নিয়োগ হয় না।

আমলাদের মা-বাবার নামে প্রতিষ্ঠান

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় অথবা সমাজসেবা অধিদপ্তরে শীর্ষ পর্যায়ের দায়িত্ব পালন করা আমলাদের কারও কারও স্বজনের নামে প্রতিষ্ঠান করার প্রকল্প নিয়েছে সমাজসেবা অধিদপ্তর।

সাবেক সমাজকল্যাণসচিব জুয়েনা আজিজের নানা ও নানির নামে নোয়াখালীতে ফেরদৌস-মজিদ প্রতিবন্ধী সেবাকেন্দ্র ও হাসপাতাল প্রতিষ্ঠায় অনুদান দেওয়া হয়েছে ২০ কোটি টাকা (২০১৯)। প্রতিষ্ঠানটির চারতলা ভবন হয়েছে, সেবা এখনো চালু হয়নি। জনবল ও আর্থিক সংকটে তা চালু করা যাচ্ছে না। স্থাপনাটি এখন নোয়াখালী পৌরসভার তত্ত্বাবধানে আছে।

নোয়াখালী পৌরসভার মেয়র সহিদ উল্যাহ্ খান প্রথম আলোকে বলেন, হাসপাতালটি পরিচালনায় একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। অনুদান দিয়ে এটি চালাতে হবে।

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব সাইদা নাইম জাহানের মা-বাবার নামে নরসিংদীতে ছেতারা-ছফিউল্লাহ কিডনি ও প্রতিবন্ধী সেবাকেন্দ্র স্থাপনে অনুদান দেওয়া হয়েছে ২০ কোটি টাকা (২০১৯)।

সমাজসেবা অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক ও সাবেক অতিরিক্ত সচিব খায়রুল আলমের বাবার নামে কুমিল্লার দেবীদ্বারে হাসপাতাল করার জন্য দেওয়া হয়েছে ২০ কোটি টাকার অনুদান (২০১৭)। প্রকল্প পাওয়া এনজিওটিও তাঁর বাবার নামে—জালালউদ্দিন ফাউন্ডেশন। ৫০ শয্যার হাসপাতালটির অবকাঠামো নির্মাণ শেষ হলেও চালু করা যায়নি। সমাজসেবা অধিদপ্তর সূত্র জানায়, হাসপাতালের জন্য আসবাব ও অ্যাম্বুলেন্স কিনতে জালালউদ্দিন ফাউন্ডেশনের যে টাকা দেওয়ার কথা, তারা তা দিতে পারেনি।

সমাজসেবা অধিদপ্তরে থাকার সময় হাসপাতাল করার আগ্রহ তৈরি হয় জানিয়ে খায়রুল আলম গত ১৮ জুলাই প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভবন করা সহজ; কিন্তু হাসপাতাল পরিচালনা করা কঠিন। এখন চিন্তায় পড়েছি চিকিৎসক, নার্স কোত্থেকে আসবে। তাঁদের বেতন কীভাবে দেওয়া হবে।’

সাবেক স্বরাষ্ট্রসচিব ও বর্তমানে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন আহমেদের দাদা আহম্মদ উল্লাহ ও বাবা সালেহ আহমেদের নামে ফেনীর ফুলগাজীতে হাসপাতাল করতে অনুদান দেওয়া হয়েছে ৩৯ কোটি টাকা (২০১৮)। কামাল উদ্দিন আহমেদ গতকাল মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, সরকারের উচ্চপর্যায়ে দায়িত্বে থাকার কারণে তিনি সরকারি টাকা পেয়েছেন, তা নয়। তিনি নিয়ম মেনে বরাদ্দ পেয়েছেন। হাসপাতাল করতে নিজেদের জমি দান করেছেন। তিনি বলেন, ‘হাসপাতাল থেকে ব্যবসা করার ইচ্ছা নেই। শুধু মানবিক কারণে হাসপাতাল করছি।’

হাসপাতালটির অবকাঠামোর নির্মাণকাজ শেষ। তবে এখনো সেটি চালু হয়নি বলে জানান প্রকল্প পরিচালক দেলোয়ার হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়নকারী এনজিও হাসপাতালের সাজসজ্জার কাজ এখনো শেষ করতে পারেনি। সে জন্য চালু হচ্ছে না।

সাবেক স্বরাষ্ট্রসচিব ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক কমিশনার মোজাম্মেল হক খানের মা ও বাবার নামে মাদারীপুরে প্রবীণ নিবাস, দাদার নামে এতিমখানা এবং তাঁর বাড়ির (খানবাড়ি) নামে হাসপাতাল করতে অনুদান দেওয়া হয়েছে মোট ৯০ কোটি টাকা (২০১৭ ও ২০১৯)। মাদারীপুর জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের সূত্র জানিয়েছে, ওয়াজেদা-কুদ্দুস প্রবীণ নিবাস, নওয়াব আলী খান এতিমখানা এবং খানবাড়ি কমিউনিটি হাসপাতাল নামের তিনটি প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম এখনো পুরোপুরি শুরু হয়নি। প্রতিষ্ঠানগুলো করেছে ওয়াজেদা-কুদ্দুস ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন।

মোজাম্মেল হক খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটা ঠিক যে গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকায় প্রকল্পগুলো পাওয়া সহজ হয়েছে। তবে অনিয়ম কিছু করিনি।’

সাবেক আইনসচিব (প্রয়াত) আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হকের বাবার নামে সিরাজগঞ্জে ফজলুল হক প্রবীণ নিবাস এবং অনগ্রসর কিশোর-কিশোরীদের বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণকেন্দ্র নির্মাণের জন্য নেওয়া হয়েছে ১৯ কোটি টাকা (২০২০)। সাবেক ধর্মসচিব নূরুল ইসলামের মা-বাবার (গোলেজান বেগম ও শামসুদ্দিন আহমেদ) নামে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপনের অনুদান দেওয়া হয়েছে ২০ কোটি টাকা (২০২০)।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহদীন মালিক প্রথম আলোকে বলেন, স্বার্থের সংঘাত পরিহার করা হলো আমলাতন্ত্রের মূলনীতি। অতীতে আমলারা নিজের এলাকায় কোনো প্রকল্পের কথা চিন্তাই করতেন না। তিনি বলেন, ‘এখন আমরা আমলাতন্ত্র আর জমিদারতন্ত্রের পার্থক্য ভুলে গেছি। এসব কাজ দেখে মনে হয় আমলাতন্ত্র জমিদারতন্ত্র হয়ে গেছে।’

‘আবেগতাড়িত ছিলাম, ভুল করতে পারি’

সমাজসেবা অধিদপ্তরের প্রকল্পগুলো দেখভাল করে পরিকল্পনা কমিশনের আর্থসামাজিক শাখা। শাখাটির প্রধান হিসেবে ২০২০ সালের মার্চে দায়িত্ব নেন অতিরিক্ত সচিব স্বপন কুমার ঘোষ। তিনি নিজ জেলা মাগুরা সদর উপজেলার শত্রুচিৎপুর ইউনিয়নের পয়ারী গ্রামে বাবা-মায়ের নামে প্রফুল্ল-প্রতিভা প্রবীণ নিবাস, এতিমখানা এবং বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের সাহায্য কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছেন। এই প্রকল্পে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকার দিয়েছে ২২ কোটি ৫৬ লাখ টাকা।

প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে প্রফুল্ল-প্রতিভা ট্রাস্ট। স্বপন কুমার ঘোষ এই ট্রাস্টের সভাপতি এবং তাঁর স্ত্রী ছবি রানী কর সাধারণ সম্পাদক। প্রকল্পের আওতায় দুটি পাঁচতলা ভবন নির্মাণ করা হয়েছে।

স্বপন কুমার ঘোষ এখন অবসরে। নিজের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রকল্প প্রক্রিয়া করা স্বার্থের সংঘাত কি না, জানতে চাইলে স্বপন কুমার ঘোষ বলেন, ‘আবেগতাড়িত ছিলাম, ভুল করতে পারি।’

সরেজমিনে গত ৬ জুন দেখা যায়, প্রবীণ নিবাস ও এতিমখানার জন্য ভবন তৈরি হয়েছে। তবে নিবাসীরা থাকতে শুরু করেননি। ওদিকে মাগুরা সদর উপজেলায় সরকারি শিশু নিবাস রয়েছে। সেখানে মোট আসন ১৭৫টি, যার ১০টি প্রবীণদের জন্য সংরক্ষিত। কিন্তু কোনো প্রবীণ সেখানে থাকেন না। এতিম শিশুদের ১৬৫টি আসনে থাকছে ১২০টি শিশু।

সরকারি প্রতিষ্ঠানেই যেখানে প্রবীণ ও এতিম শিশু থাকছে না, সেখানে সদর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে বেসরকারি একটি এতিমখানা ও প্রবীণ নিবাসে কারা থাকবে, এ প্রশ্নের জবাবে স্বপন কুমার ঘোষ বলেন, ‘এটা নিয়ে আমিও সন্দেহের মধ্যে আছি।’ তিনি আরও বলেন, বিদেশে থাকা বন্ধুদের অনুদানে তিনি প্রতিষ্ঠানটি চালানোর চিন্তা করছেন। চালাতে না পারলে সরকারের দায়িত্বে দিয়ে দেবেন।

‘সরকারের টাকায় কেন’

মন্ত্রী ও সচিবদের স্বজনদের নামে প্রতিষ্ঠান করতে সরকারের ব্যয় হচ্ছে প্রায় ২৮৬ কোটি টাকা। কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠানের বেশির ভাগ শেষ পর্যন্ত চালু হবে কি না, কার্যকর সেবা দিতে পারবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।

আমলাদের মা-বাবার নামে প্রতিষ্ঠান করার জন্য জনগণের করের টাকা নেওয়ার বিষয়ে মতামত জানতে চাওয়া হয়েছিল সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদারের কাছে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সরকারি টাকা নিয়ে মা-বাবার নামে প্রতিষ্ঠান করা অর্থ আত্মসাতের শামিল। সরকারি টাকা কেউ ব্যক্তিস্বার্থে ব্যবহার করতে পারে না। এটা জনগণের টাকা। জনগণের টাকায় মা–বাবার নামে প্রতিষ্ঠান করা উচিত হয়নি। বিষয়টি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দেখা উচিত।

Show More

One Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
Situs Toto
Toto Gacor
bacan4d
bacansport login
slot gacor
pasaran togel resmi
bacan4d
toto togel
slot toto
Toto slot gacor
bacan4d
slotgacor
bacan4d rtp
bacan4d
bacan4d toto
Slot Casino
bacan4d toto
slot gacor
bacan4d
bacan4d
Slot Toto
bacan4d
bacan4d login
totoslotgacor
slot gacor
TOTO GACOR
bacan4d
bacan4d slot gacor
bacan4d login
Bacan4d
bacan4d
bacan4d bonus
Toto gacor
Toto gacor
slot gacor hari ini
bacan4d toto
bacan4d toto
bacan4d
bacan4d
bacan4d
toto slot
bacan4d
bacan4d link alternatif
slot gacor bett 200
situs toto
SITUS TOTO
toto 4d
Slot Toto
Slot Toto
Slot Toto
Situs toto
Slot toto
Slot Dana
Slot Dana
Judi Bola
Judi Bola
Slot Gacor
toto slot
bacan4d toto
bacan4d akun demo slot
bacantogel
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacantoto
bacan4d
Bacan4d Login
slot demo
Bacan4d Toto
toto gacor
Slot Gacor
Live Draw
Live Draw Hk
Slot Gacor
toto slot
Bacan4d slot gacor
toto macau
toto slot
Toto Gacor
slot dana
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
Slot Dp Pulsa
Bacan4d Login
toto slot
Bacansports/a>
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
slot gacor
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
slot demo
toto slot gacor
bacansports Slot toto toto slot Slot toto Slot dana Slot toto slot maxwin slot maxwin toto slot toto slot slot dana
Toto Bola
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
bacan4d
ts77casino
situs toto
slot pulsa
bacansports
situs toto
slot toto
situs toto
slot toto
situs toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansports
slot toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
situs toto
situs toto
xx1toto
toto slot
xx1toto
xx1toto
slot qriss
Slot Toto
slot dana
situs toto
slot toto
slot dana
Situs Toto Slot Gacor
xx1toto
xx1toto
bacan4d
xx1toto
xx1toto
toto slot
situs toto slot gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
situs toto
Slot Toto
Toto Slot
Slot Gacor
Slot Gacor
Slot Gacor
slot toto
Toto Slot
slot gacor
situs togel
Toto Slot
xx1toto
bacansport
bacan4d
toto slot
situs toto
slot gacor
Toto Slot
slot maxwin
slot demo
bacan4d toto slot
bacan4d toto slot
bacan4d slot
bacan4d slot
bacan4d slot
bacansports
bacansports
bacansports
bacan4d slot
bacan4d slot
bacan4d
slot gacor
pasaran togel resmi
situs toto
bacan4d login
pasaran togel
pasaran togel
situs toto
bacan4d
bacan4d gacor
bacan4d slot
bacan4d rtp
bacan4d rtp
bacan4d slot gacor
toto slot
situs toto
bacan4d
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bandar togel
toto gacor Toto Gacor bacan4d slot toto casino slot slot gacor bacantoto totogacorslot Toto gacor bacan4d login slotgacor bacan4d bacan4d toto Slot Gacor toto 4d bacan4d toto slot bacan4d slot gacor