Science & Tech

গ্রহরাজ বৃহস্পতি

বৃহস্পতি অশান্ত একটা গ্রহ, তবে দেহটা ঠান্ডা। সৌরজগতে এর অবস্থান পঞ্চম। নিজের কক্ষপথে সূর্যকে ঘুরে আসতে পৃথিবীর দিনের হিসেবে ১১.৮৬ বছর সময় নেয় বৃহস্পতি। সৌরজগতের সবগুলো গ্রহের মিলিত ভর যতো, বৃহস্পতির ভর সেটার দ্বিগুণ।

পৃথিবীর তুলনায় বৃহস্পতির আয়তন এক হাজার তিনশগুণ বড়। তবুও ১০ ঘণ্টায় একবার নিজেকে পাক খেয়ে আসে। এই তীব্র গতির কারণে বৃহস্পতি নিজের মেরুর দিকে সামান্য বেশি ভার অনুভব করে। এর দেহগঠন কঠিন নয় মোটেও।

মহাবিশ্বের সবচেয়ে হালকা উপাদানে সজ্জিত সেই গঠন। মূলত হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম গ্যাসে পূর্ণ গ্রহটি।

গ্রহের উপরিভাগে মেঘের চূড়া দেখা যায়। বায়বীয় এই অঞ্চল নিয়েই এর ‘পৃষ্ঠ’ গঠিত।

বায়ুমণ্ডলের ভেতরে চাপ এবং তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। সেই চাপ ও তাপমাত্রা হাইড্রোজেন গ্যাসকে তরলে পরিণত করে। স্বাভাবিকভাবেই গ্যাসের তুলনায় তরলের ভার বেশি, ফলে এই সংকোচনে বায়ুমণ্ডলের স্তরের ঘনত্বও বাড়ে। এমন অবস্থায় গ্রহটিকে সৌরজগতের বৃহত্তম মহাসাগর মনে হতে পারে। যে সাগরে পানি নেই—আছে তরল হাইড্রোজেন।

বিজ্ঞানীরা মনে করেন, গ্রহটির কেন্দ্রের অর্ধেক গভীরতায় চাপ এতই বেশি যে, হাইড্রোজেন পরমাণু থেকে ইলেক্ট্রন ছিটকে যায়। এতে তরলটি ধাতুর মতো বিদ্যুৎ পরিবাহী হয়।

বৃহস্পতির আরও গভীরে ঘন, তীব্র-গরম পাথুরে কোর থাকতে পারে। ধারণাটি এখনও স্পষ্ট নয়। তবে, লোহা ও সিলিকেট খনিজে তৈরি তেমন কেন্দ্র থাকলে—সে স্থানের তাপমাত্রা ৫০ হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যাবে। বৃহস্পতির নিরক্ষরেখা বরাবর রঙিন ব্যান্ড দেখা যায়। যে ব্যান্ডগুলো গ্রহের উত্তপ্ত অভ্যন্তর থেকে বেরিয়ে আসা সালফার ও ফসফরাসযুক্ত গ্যাসের কারণে তৈরি হয়। সৌরশক্তি ও মেঘের আভ্যন্তরীণ তাপ বাতাসের গতি প্রভাবিত করে। এই গতির ফলে তৈরি হয় আবহওয়ার জটিল প্যাটার্ন। রঙিন ব্যান্ডের জন্য এসব প্যাটার্ন দায়ী।

আগেই বলা হয়েছে—বৃহস্পতি ভীষণ দ্রুত পাক খায়। এবং মেঘ পুরো গ্রহটিকে ঢেকে রাখে। এই গ্রহে কত ঝড় আসে, যায়। তেমন একটা ঘূর্ণিঝড়ের নাম— গ্রেট রেড স্পট। এই ঘূর্ণিঝড় এত বিশাল ও শক্তিশালী যে, দুটো পৃথিবীকে নিমিষে গ্রাস করে ফেলবে।

ইতিহাস
সৌরজগতের বৃহত্তম গ্রহ। অনান্য গ্রহের তুলনায় এটি অন্যরকম। গ্যাসে পূর্ণ দৈত্যাকার এক গ্রহ। বাংলা নামটি সনাতন ‘বৃহস্পতি’ দেবতার নামে নামকরণ করা হয়েছে। ইংরেজিতে ‘জুপিটার’ গ্রিকদের জিউস ও রোমান সভ্যতায় জুপিটার দেবতার নাম থেকে নেওয়া। 

পরিমণ্ডল
বৃহস্পতির ৬০টিরও অধিক চাঁদ বা প্রাকৃতিক উপগ্রহ রয়েছে। এদের মাঝে চারটি প্রধান বা বৃহত্তম— গ্যানিমিড, ক্যালিস্টো, আইও এবং ইউরোপা। ১৬১০ সালে গ্যালিলিও গ্যালিলি এদের আবিষ্কার করেন। একইসাথে দৈত্যাকার গ্রহের চারপাশে এসব চাঁদের গতিবিধি তাঁকে বুঝতে সহায়তা করেছে, সূর্যই আমাদের সৌরজগতের রাজা। পৃথিবী নয়। এই চারটি চাঁদের আকার পৃথিবীর চাঁদের মতোই। বাকিগুলো বেশ ছোট ও অনিয়মিত।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button