USA

কেন্ট স্টেট শ্যুটিং: ১৯৭০ সালে শিক্ষার্থীদের যে বিক্ষোভ কাঁপিয়ে দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রকে

দুপুরবেলা ন্যাশনাল গার্ডের সদস্যরা বিক্ষোভকারীদের সরে যেতে বলতে শুরু করেন। এরপর কী হয়েছিল তা নিয়ে বিতর্ক আছে। তবে বিক্ষোভকারীরা ওই আদেশ শোনেননি। অনেক প্রত্যক্ষদর্শীর মতে, পাথর ছোড়ারও ঘটনা ঘটেছিল।

১৯৭০ সালের ৪ মে কেন্ট স্টেট ইউনিভার্সিটিতে গুলি শুরুর পর নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটছেন বিক্ষোভকারীরা। ছবি: কেন্ট স্টেট ইউনিভার্সিটি লাইব্রেরিজ/স্পেশাল কালেকশনস অ্যান্ড আর্কাইভস

আজ থেকে ৫৪ বছর আগে ১৯৭০ সালের ৪ মে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইওর কেন্ট স্টেট ইউনিভার্সিটিতে ন্যাশনাল গার্ডের গুলিতে ভিয়েতনাম যুদ্ধের বিপক্ষে বিক্ষোভ করা চার শিক্ষার্থী নিহত হন। খবর বিবিসি‘র।

সে সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বিভাজনের প্রতীক হয়ে রয়েছে এ ঘটনাটি। আধুনিক মার্কিন ইতিহাসেরও অন্যতম ঘটনা এটি।

কেন্ট স্টেটের ওই গুলির ঘটনায় দেশটির ইতিহাসের অন্যতম বৃহৎ শিক্ষার্থী বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। সারাদেশের কয়েকশ ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা।

ভিয়েতনাম যুদ্ধের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের নতুন করে আন্দোলন ওই গুলির ঘটনার পটভূমি তৈরি করে দিয়েছিল।

১৯৭০ সালের এপ্রিলে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সন ঘোষণা করেছিলেন যে, তিনি ভিয়েত কংয়ের বিরুদ্ধে লড়াই করতে মার্কিন বাহিনীকে কম্বোডিয়া আক্রমণের নির্দেশ দিয়েছেন। এর ফলে ভিয়েতনাম যুদ্ধ আরও ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়।

মার্কিন এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দেশটিতে একাধিক আন্দোলন তৈরি হয়। ১ মে তার একটি হয়েছিল ওহাইওর কেন্ট স্টেট ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাসে।

প্রথমে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন হলেও সেদিন সন্ধ্যায় কেন্টের এক অংশে আন্দোলন প্রথমবারের মতো ভিন্ন মোড় নেয়। এরপর তরুণ বিক্ষোভকারী ও পুলিশের মধ্যে ধস্তাধস্তি শুরু হয়, বেশকিছু দোকানপাটও ভাঙা হয়।

পরদিন কেন্ট শহরের মেয়র ওহাইও সরকারকের ন্যাশনাল গার্ড পাঠাতে বলেন। পরের দুইদিন শহরে সংঘাত আর সংঘর্ষ লেগে থাকে।

সংঘাতের এক পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থিত রিজার্ভ অফিসার ট্রেইনিং কোর-এর ভবনটি আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। তবে জানা যায়নি কে বা কারা সেটিতে আগুন লাগিয়েছিল।

৪ মে ক্যাম্পাসে আরেকবার বিক্ষোভের ডাক দেওয়া হয়। ততদিনে সেখানে ন্যাশনাল গার্ডের সদস্যরা অবস্থান নিয়েছেন। ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ-সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

কিন্তু অনেক শিক্ষার্থী এ নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে অবগত ছিলেন না বলে জানা যায়। আবার অনেকে নিষেধাজ্ঞাকে থোড়াই কেয়ার করেছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যমতে, সকালের পরই প্রায় তিন হাজার মানুষ ক্যাম্পাসের কেন্দ্রে অবস্থান নেন।

দুপুরবেলা ন্যাশনাল গার্ডের সদস্যরা বিক্ষোভকারীদের সরে যেতে বলতে শুরু করেন। এরপর কী হয়েছিল তা নিয়ে বিতর্ক আছে। তবে বিক্ষোভকারীরা ওই আদেশ শোনেননি। অনেক প্রত্যক্ষদর্শীর মতে, পাথর ছোড়ারও ঘটনা ঘটেছিল।

এক পর্যায়ে ন্যাশনাল গার্ড বিক্ষোভকারীদের দিকে টিয়ার গ্যাস ছোড়ে। এরপর দুপক্ষের কিছুক্ষণ ধরে মুখোমুখি অবস্থান নেয়। তারপরই বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে গার্ড সদস্যরা গুলি শুরু করেন।

চার শিক্ষার্থী গুলিতে নিহত হন। নয়জন আঘাত পান। নিহতদের মধ্যে দুজন বিক্ষোভের অংশ ছিলেন না।

পাঁচ মাস পরে বিবিসি‘র একটি অনুষ্ঠানে গুলির ঘটনার একজন প্রত্যক্ষদর্শী জিনি রিকার্ড বলেন, প্রথমে তিনি ও তার বন্ধুরা মনে করেছিলেন, ন্যাশনাল গার্ড ফাঁকা গুলি ছুড়েছিল।

‘তারপরও কেউ বিশ্বাসই করতে পারছিল না যে গুলি চালানো হয়েছে। কেউ কিছু করেনি, তারপরও কেন ওরা গুলি করবে?’ বলেন তিনি।

‘যখন দেখা গেল, দেহগুলো অ্যাম্বুলেন্সে তোলা হচ্ছে, আমার মনে হয় তখনি কেবল মানুষ আদতে বিশ্বাস করেছিল যে, কী হয়েছে। আর তখন মানুষের মধ্যে প্রতিক্রিয়া ছড়িয়ে পড়ে। আর সবচেয়ে বেশি যেটা শোনা গিয়েছিল তা হলো, মানুষ চেঁচিয়ে বলছে, ‘কেন?”

বিবিসি‘র সে অনুষ্ঠানের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে বুঝেছিলেন, কেন্ট স্টেটে এ গুলির ঘটনা নিয়ে মানুষের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছিল।

যেমন, স্থানীয় একটি গ্যারেজের মালিক পিট সেলম্যান এ ঘটনায় শিক্ষার্থীদের জন্য কোনো সহানুভূতি দেখাননি: ‘আমার সত্যিই খারাপ লাগছে না ওই ছোকরাদের জন্য। ওরাই এটা ডেকে এনেছে। ওদের ওখানে থাকার কথা ছিল না।’

তিনি আরও বলেন, ‘হ্যাঁ, পরিস্থিতি খারাপ ছিল। কিন্তু আপনি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে একটা লোককে দিনের পর দিন রাগাতে পারেন না… অনেক আগে থেকেই এটা হওয়ার কথা ছিল।’  

বিবিসি বেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গেও কথা বলে। তা-তে স্পষ্ট হয়ে ওঠে সে সময়ের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক ও প্রজন্ম-ভিত্তিক নিগূঢ় বিভাজন।

‘সহিংসতা কেবল হতাশা থেকে জন্ম নেয়, সহিংসতা হচ্ছে শেষ উপায়। সারাদেশে কী হচ্ছে সেটা বোঝাই যাচ্ছে। সেজন্য রাজনৈতিক বিক্ষোভ এখন সহিংসতায় রূপ নিচ্ছে,’ বলেন এক শিক্ষার্থী।

বেশ কয়েক বছর ধরে এ ঘটনার তদন্তের জন্য একাধিক কমিশন ও বিচারের আয়োজন করা হয়েছিল৷ কিন্তু চার শিক্ষার্থীকে খুনের জন্য কাউকে দোষী পাওয়া যায়নি।

নিহত ওই চার শিক্ষার্থী হলেন অ্যালিসন ক্রস, জেফরি মিলার, স্যান্ড্রা শিয়র ও উইলিয়াম শ্রেডার।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button