মৃত্যুদণ্ড চূড়ান্ত হওয়ার আগে দণ্ডিতকে কনডেম সেলে রাখা অবৈধ: হাইকোর্টের রায়
মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে কনডেম সেলে বন্দি রাখা অবৈধ ও বেআইনি ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে জেলকোডের ৯৮০ বিধি অসাংবিধানিক ঘোষণা করেছেন আদালত।
এক রিটের প্রেক্ষিতে জারিকৃত রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে গতকাল সোমবার এ রায় দেন হাইকোর্ট। বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ এবং বিচারপতি মো: বজলুর রহমানের ডিভিশন বেঞ্চ টানা সাড়ে ৩ ঘন্টা ধরে এ রায় ঘোষণা করেন। এ রায়কে ‘ঐতিহাসিক’ বলে মন্তব্য করেছেন আইনজীবীরা।
রায়ে বলা হয়েছে, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির আপিল, রিভিউ, প্রেসিডেন্টের কাছে ক্ষমা প্রার্থনার ধাপগুলো নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আসামিকে কনডেম সেলে রাখা যাবে না। বর্তমানে মৃত্যুদণ্ড চূড়ান্ত হওয়ার আগে সারা দেশে যত আসামিকে কনডেম সেলে রাখা হয়েছে তাদের দুই বছরের মধ্যে ক্রমান্বয়ে সাধারণ সেলে স্থানান্তরের কথা বলা হয়েছে। তবে, বিশেষ কারণে (স্বাস্থ্যগত কারণ, সংক্রামক রোগ) কোনো ব্যক্তিকে নির্জন কক্ষে রাখতে পারবে কারা কর্তৃপক্ষ। সেক্ষেত্রে ওই ব্যক্তির উপস্থিতিতে শুনানি হতে হবে।
রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। সঙ্গে ছিলেন অ্যাডভোকেট আসাদ উদ্দিন। সরকারপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার। সঙ্গে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল এমএমজি সারোয়ার পায়েল, নাসিম ইসলাম রাজু।
এর আগে গত বছর ১২ ডিসেম্বর মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে আসামিদের কনডেম সেলে বন্দি রাখা কেন বেআইনি হবে না এবং কেন জেলকোডের ৯৮০ বিধি অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না-এই মর্মে জারিকৃত রুলের শুনানি শেষ হয়।
বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ এবং বিচারপতি মো: বজলুর রহমানের ডিভিশন বেঞ্চ শুনানি শেষে মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখেন।
গত বছর ৫ এপ্রিল এ বিষয়ে রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট। সেইসঙ্গে কনডেম সেলে থাকা বন্দিদের বিষয়ে ৬ মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয় ওইদিন। বিচারপতি মো: মজিবুর রহমান মিয়া এবং বিচারপতি আহমেদ সোহেলের ডিভিশন বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
এর আগে ২০২২ সালের ৩ সেপ্টেম্বর মামলা চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তি হওয়ার আগে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে কনডেম সেলে রাখার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট করা হয়। চট্টগ্রাম কারাগারে কনডেম সেলে থাকা জিল্লুর রহমানসহ মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত তিন বন্দির পক্ষে অ্যাডভোকেট শিশির মনির এ রিট করেন। আবেদনকারীরা হলেন,– চট্টগ্রাম কারাগারের কনডেম সেলে থাকা সাতকানিয়ার জিল্লুর রহমান, সিলেট কারাগারে থাকা সুনামগঞ্জের আব্দুল বশির ও কুমিল্লা কারাগারে থাকা খাগড়াছড়ির শাহ আলম। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত এই তিন আসামির আপিল হাইকোর্ট বিভাগে বিচারাধীন রয়েছে।