মানবাধিকার লংঘনকারীদের শান্তিরক্ষা মিশন থেকে বাদ দেয়া হবে : জাতিসংঘ
বাংলাদেশ এবং শ্রীলঙ্কায় চরম মানবাধিকার লংঘনে জড়িত আইনশৃংখলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের শান্তিরক্ষা মিশনে পাঠানো নিয়ে ডয়চে ভেলের রিপোর্ট প্রকাশের পর নড়েচড়ে বসেছে জাতিসংঘ। গত বুধবার নিয়মিত ব্রিফিংয়ে জাতিসংঘ বলেছে তাদের অবস্থান খুব স্পষ্ট। শান্তিরক্ষা মিশনে নিয়োগপ্রাপ্তরা যেন সততা এবং দক্ষতার মানদÐে উত্তীর্ণ হয় তা নিশ্চিতে জাতিসংঘ মহাসচিব প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরাঁর মুখপাত্র স্টিফেন ডোজাররিক বলেছেন, শান্তিরক্ষা মিশনে নিয়োজিতদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লংঘনের অভিযোগ প্রমাণিত হলে মিশন থেকে বাদ দেয়া হবে।
ব্রিফিংয়ে ডয়েচে ভেলের রিপোর্টের কথা উল্লেখ করে একজন সাংবাদিক জানতে চান- ডয়চে ভেলের সা¤প্রতিক প্রকাশিত এক অনুসন্ধানী রিপোর্টে বলা হয়েছে, নির্যাতন এবং বিচারবহির্ভ‚ত হত্যাকাÐসহ চরম মানবাধিকার লংঘনে জড়িত আইনশৃংখলাবাহিনীর কর্মকর্তাদের জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে পাঠাচ্ছে বাংলাদেশ এবং শ্রীলঙ্কা। বিশেষ করে বাংলাদেশ থেকে মানবাধিকার লংঘনে জড়িত অসংখ্য কর্মকর্তাকে শান্তিরক্ষা মিশনে পাঠানো হয়েছে। কোনো ক্ষেত্রে পুরস্কার স্বরূপ এদের অনেককে পাঠায় সরকার। জাতিসংঘ মহাসচিব কী এ বিষয়ে অবগত?
জবাবে মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডোজাররিক ডোজাররিক বলেন, হ্যাঁ। ডয়চে ভেলের ডকুমেন্টারি আমরা দেখেছি। আপনি হয়তো জানেন যে, শান্তিরক্ষা মিশনে আমাদের সহকর্মীরা এ বিষয়টি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। তারা রিপোর্ট নিয়ে (খবর প্রকাশকারী মিডিয়াকে) জাতিসংঘের তরফে বিবৃতি দিয়েছেন। তিনি আরো বলেন, আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই যে, শান্তিরক্ষা মিশনে নিয়োগের ক্ষেত্রে যেনো দক্ষতা এবং সততার সর্বোচ্চ মানদÐ নিশ্চিত করা হয় সে বিষয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এ প্রতিশ্রুতির মধ্যে আরো রয়েছে, মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা এবং প্রতিশ্রুতি, জাতিসংঘের মানবাধিকার যাচাই পদ্ধতির অধীনে শান্তিরক্ষী নিয়োগে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে যথাযথ নিয়ম এবং কৌশল মেনে চলা। এরপর একই বিষয়ে ওই সাংবাদিক জানতে চান- শান্তিরক্ষা মিশনে কর্মকর্তা নিয়োগের সময় স্বাগতিক দেশগুলো যাচাই-বাছাইয়ের কাজ করছে। কিন্তু যে দেশ শান্তিরক্ষা মিশনে লোক পাঠাবে সে দেশের সরকার যদি নিজেই চরম পর্যায়ের মানবাধিকার লংঘনকারী হয় তাহলে এ বাছাই প্রক্রিয়া কীভাবে স্বচ্ছ হবে?
জবাবে মুখপাত্র ডোজাররিক বলেন, আমরা বাছাই প্রক্রিয়া তিন ধাপে সম্পন্ন করি। প্রথম পর্যায়ে বাছাই হয় ব্যক্তিগত মানদÐে, পরের ধাপে বাছাই কাজটা করে স্বাগতিক দেশ এবং অন্য বাছাই প্রক্রিয়াটা হয় জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের অফিস থেকে। আপনাকে বলবো, বিগত বছরগুলোতে আমরা দেখেছি, খুব অল্প সংখ্যক দেশ থেকে শান্তিরক্ষীদের মানবাধিকার লংঘনের ব্যাপারে অভিযোগ পেয়েছি। যখনি এ ধরনের ঘটনা ঘটে তখনি আমাদের শান্তিরক্ষা মিশনের সহকর্মীরা যাচাই-বাছাই নীতি, কর্ম কৌশল অনুসারে শান্তিরক্ষী পাঠানো দেশের সঙ্গে কথা বলে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করে থাকেন। এধরনের ঘটনার (মানবাধিকার লংঘন) কারণে শান্তিরক্ষা মিশনে অংশ নেওয়া জড়িত কর্মকর্তার নিয়োগ বাতিল হতে পারে। এছাড়া অভিযোগ প্রমাণিত হলে জড়িতদের মিশন থেকে সরিয়ে দেয়া হবে।
উল্লেখ্য,র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) গোয়েন্দা শাখার কিছু সদস্য যাদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লংঘনের রেকর্ড আছে, তাদের জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে মোতায়েন করা হয়েছিল বলে জার্মান স¤প্রচারমাধ্যম ডয়চে ভেলের একটি তথ্যচিত্রে অভিযোগ করা হয়েছে।
‘মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীরা যখন জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী’ শিরোনামে ২০ মিনিটের ওই তথ্যচিত্রে আরো দেখানো হয়েছে, কীভাবে শ্রীলঙ্কা গৃহযুদ্ধের সময় যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত সেনা কর্মকর্তাদের শান্তিরক্ষা মিশনে পাঠিয়েছিল। এতে শান্তিরক্ষীদের যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ার দিকে ইঙ্গিত করে বলা হয়, এই ধরনের মোতায়েন শান্তিরক্ষা মিশনের মূল উদ্দেশ্যকেক্ষুন্ন করতে পারে।
তথ্যচিত্রে বলা হয়, চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী প্রায় ৬ হাজার বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী মোতায়েন আছে।
ডয়চে ভেলের তথ্যচিত্রে উঠে এসেছে, একশ’র বেশি র্যাব সদস্য শান্তিরক্ষা মিশনে গিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে ৪০ জনকে পাঠানো হয় জাতিসংঘের নির্যাতনবিরোধী কমিটি ২০১৯ সালে বাংলাদেশে নিরাপত্তা বাহিনীর নির্যাতনের অভিযোগ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশের পর।
এতে শান্তিরক্ষা মিশনে থাকা র্যাবের তিন সদস্যের নাম উল্লেখ করা হয়। এই তিন জন র্যাবের গোয়েন্দা শাখায় কর্মরত ছিলেন, তাদের মধ্যে দু’জন র্যাবের উপপরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
তথ্যচিত্রে গোয়েন্দা শাখার বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে বলা হয়, ‘র্যাবের এই ইউনিটটি বাংলাদেশ জুড়ে টর্চার সেলের একটি নেটওয়ার্ক পরিচালনা করে। এসব সেলের কিছু সেফ হাউস রয়েছে, অন্যগুলো র্যাব কম্পাউন্ডের আড়ালে রয়েছে।’ কিন্তু তা সত্তে¡ও তাদেরকে ঝুঁকিতে থাকা বিভিন্ন বেসামরিক স¤প্রদায়কে সুরক্ষা দিতে শান্তিরক্ষী হিসেবে মোতায়েন করা হয়েছিল বলে জানায় ডয়চে ভেলে।