Bangladesh

ঘণ্টায় ১০ কিলোমিটার গতিতে এগোচ্ছে ঝড়

প্রতি ঘণ্টায় ১০ কিলোমিটার করে সামনের দিকে এগোচ্ছে পূর্ব মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত ঝড়টি। বৃহস্পতিবার (২৪ মে) দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম থেকে ৮০৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে থাকলেও সন্ধ্যা ৬টায় তা ৭৪৫ কিলোমিটার দূরত্বে এসে পৌঁছে। ৬ ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার এগিয়েছে ঝড়টি। ফলে প্রতি ঘণ্টায় এর গতিবেগ ১০ কিলোমিটার। 

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, সাগরে অবস্থানরত এই নিম্নচাপটি কাল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। যদি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয় তাহলে তা পটুয়াখালীর খেপুপাড়ার ওপর দিয়ে রবিবার সন্ধ্যায় অতিক্রম করতে পারে। ঘণ্টায় বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ হতে পারে ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত উঠতে পারে। আর ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিলে এর নাম হবে ‘রেমাল’। ওমানের দেয়া এই নামটির অর্থ ‘বালু’।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের ২ নম্বর বিশেষ বুলেটিনের তথ্যমতে, পূর্ব মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিম মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত নিম্নচাপটি উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হচ্ছে। নিম্নচাপটি গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টায় চট্টগ্রাম থেকে ৭৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার থেকে ৬৮০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ৭১০ কিলোমিটার দক্ষিণে ও পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ৬৭০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল। দুপুর ১২টায় ছিল চট্টগ্রাম থেকে ৮০৫ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে, কক্সবাজার থেকে ৭৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে , মোংলা থেকে ৭৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণে ও পায়রা থেকে ৭৩০ কিলোমিটার দক্ষিণে। নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘন্টায় ৪০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচেছ। নিম্নচাপ কেন্দ্রের মধ্যে সাগর উত্তাল থাকায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে এক নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে উত্তর বঙ্গোপসাগরের মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে উপকূলের কাছাকাছি নিরাপদে থাকতে বলা হয়েছে।

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর ও ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তর তাদের পূর্বাভাসে নিম্নচাপটি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে বলে উল্লেখ করেছে। ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে উল্লেখ করা হয়েছে, আসন্ন ঝড়টি পশ্চিমবঙ্গের সাগর দ্বীপ ও পটুয়াখালীর খেপুপাড়ার উপর দিয়ে অতিক্রম করবে রবিবার সন্ধ্যায়। 

তবে এর গতিপথ নিয়ে এখনই চূড়ান্ত কথা বলতে নারাজ বিশেষজ্ঞরা। আবহাওয়া অধিদপ্তর কিংবা ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তর যদিও ঝড়ের গতিপথের পূর্বাভাস দিয়েছে। তারপরও আজ শনিবার হচ্ছে টার্নিং পয়েন্ট। আজ যদি তা বাম দিকে একটুও টার্ন নেয় তাহলে তা বাংলাদেশ ভারত সীমান্তের মাঝ দিয়ে অর্থাৎ উভয় দেশের সুন্দরবনের উপর দিয়ে অতিক্রম করতে পারে। বাম দিকে টার্ন নিবে কেন? 
এই প্রশ্নের উত্তর জানতে চাইলে এশিয়ান মেটিওরোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. মোহন কুমার দাশ বলেন,‘বিভিন্ন মডেল পর্যালোচনা করে দেখা যাচ্ছে সম্ভাব্য ঝড়টি বাম দিকে টার্ন নেয়ার প্রবণতা বেশি। পূর্ব দিক থেকে আসা মৌসুমী বাযুর কারণে তা পশ্চিমে (বাম দিকে) বেঁকে পড়তে পারে। তবে এখন যেহেতু ঝড়টি উপকূলের ৭০০ কিলোমিটারের মধ্যে চলে এসেছে তাই আগামীকাল শনিবার ই বাঁক নেয়ার চূড়ান্ত সময়। যদি বাঁক নেয় তাহলে তা ভারত-বাংলাদেশের সুন্দরবনের উপর দিয়ে অতিক্রম করতে পারে। আর যদি বাঁক না না নেয় তাহলে খেপুপাড়ার উপর দিয়ে অতিক্রম করতে পারে।’

এ বিষয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মনোয়ার হোসেন বলেন,‘ এখনো ঝড়টি সম্পর্কে শতভাগ পূর্বাভাস দেয়া সম্ভব নয়। আগামীকাল শনিবার সাগরে অবস্থানের সময় এর গতিপথ কোন দিকে যায় এর উপর নির্ভর করবে। তবে এখন পর্যন্ত এর যে গতিপথ তা ২০০৭ সালে সিডর যে পথে আঘাত করেছিল সেই পথ দেখাচ্ছে। কিন্তু সিডরের সাথে শক্তি ও পরিধি সাথে এই ঝড়ের ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে।’

গতিপথ প্রসঙ্গে ড. মোহন কুমার দাশ আরও বলেন, ২০০৯ সালে আঘাত করা ‘আইলা’ পশ্চিমবঙ্গের উপর দিয়ে অতিক্রম করেছিল। কিন্তু দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল ঝড়ের ডান দিকে থাকায় সেসব এলাকায় বেশি ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছিল।

উল্লেখ্য, এপ্রিল ও মে মাস হলো ঘূর্ণিঝড়ের মৌসুম। এরমধ্যে মে মাস সবচেয়ে বেশি। কিন্তু এপ্রিল মাস জুড়ে সাগরে কোনো লঘুচাপ সৃষ্টি হয়নি। ইতিমধ্যে মৌসুমী বায়ুও সেট হয়ে গেছে। মৌসুমী বায়ু প্রবেশের আগে সাগরে একটি নিম্নচাপ বা ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়ে থাকে সাধারণত। আর এরই ধারবাহিকতায় সাগরে একটি নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে যাচ্ছে। গত ৩০ বছরের আবহাওয়ার উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০০৭ সালের ১১ মে সৃষ্টি হয়ে ১৫ মে আঘাত করেছিল ঘূর্ণিঝড় ‘আকাশ’, ২০০৮ সালের ২৭ এপ্রিল সৃষ্টি হয়ে ৩ মে আঘাত করেছিল ঘূর্ণিঝড় ‘নার্গিস’, ২০০৯ সালের ২৫ মে ঘূর্ণিঝড় ‘আইলা’ আঘাত করেছিল, ২০১০ সালের ১৬ মে সৃষ্টি হয়ে ২১ মে আঘাত করেছিল ঘূর্ণিঝড় ‘লায়লা’, ২০১৩ সালের ৮ মে সৃষ্টি হয়ে ১৬ মে আঘাত করেছিল ঘূর্ণিঝড় ‘মহাসেন’, ২০১৬ সালে ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানা’ ১৪ মে সৃষ্টি হয়ে ২২ মে আঘাত করেছিল, ২০১৭ সালে ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ ২৫ মে সৃষ্টি হয়ে ৩১ মে আঘাত করেছিল, এছাড়া ২০১৯ সালে ‘ফনি’ ৫ মে এবং ২০২০ সালে আম্ফান ১৩ মে থেকে ২১ মে এর মধ্যে আঘাত করেছিল। 

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button