আজিজ-বেনজীর ইস্যুতে মুখে কুলুপ আমলাদের, প্রকাশ্যে কথা বলছেন না কেউ, চলছে ফিসফাঁস
সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ এবং পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ ইস্যুতে প্রশাসনের সর্বস্তরে চলছে ফিসফাঁস। প্রকাশ্যে কেউ কোনো কথা বলছেন না। এ নিয়ে সরকারের মন্ত্রী বা রাজনৈতিক ব্যক্তিরা বিভিন্ন মন্তব্য করলেও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা। সচিবরা এ নিয়ে কিছুই বলছেন না। প্রকাশ্যে কথা না বললেও এ নিয়ে ভিতরে ভিতরে নানা ফিসফাস চলছে। সাবেক সেনাপ্রধান ও পুলিশপ্রধানের নানা দুর্নীতির বিষয় সামনে আসার পর এ নিয়ে সরকার বিব্রত নয় ইতোমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদের বিরুদ্ধে করা দুর্নীতির অভিযোগ শিডিউলভুক্ত হলে অনুসন্ধানের জন্য আমলে নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ।
অনেকটা কঠিন পরিস্থিতিতে যাচ্ছেন সাবেক দুই শীর্ষ কর্মকর্তা। এমন পরিস্থিতিতে কী ভাবছেন আমলারা তা জানতে গত কয়েকদিন সচিবালয়ের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে সচিবদের সঙ্গে কথা বললে এ নিয়ে কেউ মুখ খোলেননি। কমপক্ষে পাঁচজন সচিব বলেছেন, এ নিয়ে কিছু বলব না। দুজন সচিব বলেন, আমার মন্ত্রণালয় সম্পৃক্ত কিছু জানার থাকলে বলেন। সচিবালয়ের ৪ নম্বর ভবনে বসেন এমন এক সচিবের কাছে এ ইস্যু কীভাবে দেখছেন জানতে চাইলে বলেন, ভালো-মন্দ কিছুই বলব না। এ বিষয় বাদে অন্য কিছু থাকলে আলোচনা করব। আজিজ আহমেদ এবং বেনজীর আহমেদের দুর্নীতির আলোচনা তুললে সচিবালয়ে ৬ নম্বর ভবনের এক সচিব বলেন, আমার কাছে আসা অসংখ্য দর্শনার্থী, বন্ধু, ব্যাচমেটরাও আলোচনা তোলেন। আমার একটাই কথা সরকার আমাকে যে দায়িত্ব দিয়েছে তা ভালোভাবে করতে চাই। অপ্রাসঙ্গিক আলোচনা করতে চাই না।
এ বিষয়ে আপনাকেও কিছু বলব না। তবে জানা গেছে, বিভিন্ন ব্যাচের মধ্যে যারা ঘনিষ্ঠ তারা নিজেদের মধ্যে এসব বিষয়ে নানা কানাঘুষা করছেন। সিনিয়র জুনিয়র অনেকেই করছেন ফিসফাস। একাধিক অতিরিক্ত সচিবের সঙ্গেও যোগাযোগ করলে এ ইস্যুতে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি কেউ। যুগ্ম সচিব পর্যায়ের এক কর্মকর্তা বলেন, বিষয়টি ওপর পর্যায়ের খেলা, সেখানে আমার মতো চুনোপুঁটি কিছু না। তবে ব্যক্তিগত মত হিসেবে মনে করি তাদের যে দুর্নীতির আমলনামা দেখলাম সরকার তাদের এসব করতে বলেনি। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, তারা সাবেক হয়ে গেছেন। তাদের কী হবে তা সরকার দেখবে। উপসচিব পর্যায়ের এক কর্মকর্তা বলেন, একটা লোকের চাকরির সারা জীবনের অর্জন শেষ। এত সম্পদ মানুষ কেমনে করে। মরতে হবে সে চিন্তাও নেই। আদালত এখন ব্যাংক হিসাব, সম্পদ জব্দ করেছে তাহলে লাভটা হলো কী? সচিবালয় ঘুরে জানা গেছে, এ ইস্যুতে খুব ঘনিষ্ঠ হলে দুই বা তিনজন মিলে ফিসফাস আলোচনা চলে রুমে রুমে। তবে বেশিরভাগই এসব আলোচনা থেকে নিজেদের সরিয়ে রাখতে চাচ্ছেন। আর সিনিয়র বিশেষ করে সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা গভীর পর্যবেক্ষণ করে দেখছেন আসলে মোড় কোনদিকে যায়। পুলিশের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বেনজীরের ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির চিত্র সামনে আসায় পুলিশের একটা বড় অংশ ভিতরে ভিতরে বেশ খুশি।
সাবেক সচিব আবু আলম মো. শহিদ খান বলেন, এমন দুর্নীতির তথ্য সামনে এলে তা ব্যক্তির পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানও ক্ষতিগ্রস্ত হয়, সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়। এ নিয়ে তদন্ত চলছে, দুদক কাজ করছে। এ পর্যন্ত যা দেখেছি দুদক কঠোর পদক্ষেপই নিয়েছে। আমাদের অপেক্ষা করতে হবে ফলাফলের জন্য। আর দুদককে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে সব পক্ষ থেকে। সেনা ও পুলিশের সাবেক দুই কর্মকর্তার বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, দুর্নীতি নিয়ে নাম এসেছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের দিকেও এখন থেকে নজর দেওয়া দরকার। পুরো ব্যবস্থাই দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়ছে। সেনাপ্রধানের বিষয়ে আগেই আলোচনা এলেও সরকার সেসময় সাফাই গেয়েছে। তিনি আরও বলেন, সরকারের অন্যান্য প্রতিষ্ঠান-ব্যক্তি যারা এসব কাজে জড়িত চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। এগুলো মূলত হয়েছে দলীয়করণের কারণে। নিজেদের লোক বসানোর কারণে।