ব্যাংক ঋণ দেয়ার স্বক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে: বার্ষিক সাধারণ সভায় জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান
দেশের ব্যাংকগুলো থেকে যে পরিমাণ টাকা ঋণ হিসেবে বাইরে যাচ্ছে, সেই পরিমাণ টাকা ব্যাংকে আসছে না। খেলাপিরা সঠিক সময়ে ঋণ পরিশোধ করছে না। ফলে জনতাসহ অনেক ব্যাংকই মূলধন ঘাটতিতে ঋণ দেয়ার স্বক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে বলে জানিয়েছেন জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এস এম মাহফুজুর রহমান। সভাপতির ব্যাংকের চেয়ারম্যান বলেন, খেলাপি ঋণ বাড়ছেই। আর তাই আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে সহযোগিতামূলক পরিবেশ নিশ্চিত করতে করতে হবে। খেলাপি ঋণের হার কমিয়ে আনার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। বর্তমান প্রজন্মের আধুনিক ব্যাংকিয়ে নিজেকে উপযোগী হিসেবে গড়ে তুলতে প্রশিক্ষণ নিতে হবে।
গতকাল জনতা ব্যাংক পিএলসি এর ১৭তম বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) সভাপতির বক্তব্যে ব্যাংকের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এস এম মাহফুজুর রহমান এসব কথা বলেন। সভায় জানানো হয়, গত বছর জনতা ব্যাংকের মোট আমানতের পরিমাণ ৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে এক লাখ ১০ হাজার ৩৩৬ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। একইসঙ্গে ঋণ ও অগ্রীমের পরিমাণ ১৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৯৮ হাজার ৩৮৯ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। ২০২৩ সালে ব্যাংকের পরিচালন মুনাফার পরিমান ৫৮৪ কোটি টাকা এবং নীট মুনাফার পরিমাণ ৫৫ কোটি টাকা। সরকারের নিরাপত্তা বেষ্টনী প্রকল্পের আওতায় প্রদানকৃত সেবার আর্থিকমূল্য প্রায় ৭০০ কোটি টাকা ধরা হলে পরিচালন মুনাফা আরও বৃদ্ধি পেতো।
ব্যাংকের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এস এম মাহফুজুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় ব্যাংকের এমডি অ্যান্ড সিইও মো. আব্দুল জব্বার ব্যাংকের অর্জিত সাফল্যসহ বিভিন্ন বিষয়ে বক্তব্য রাখেন। সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের যুগ্ম সচিব কামরুল হক মারুফ, ব্যাংকের পরিচালক অজিত কুমার পাল, এফসিএ, কে এম সামছুল আলম, মো. আব্দুল মজিদ, রুবীনা আমীন, মেশকাত আহমেদ চৌধুরী, মোহাম্মদ আসাদ উল্লাহ ও বদরে মুনির ফেরদৌস ব্যাংকের ডিএমডি ও মহাব্যবস্থাপকরা এতে অংশগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠিত এজিএম’র সঞ্চালনা করেন ব্যাংকের কোম্পানী সচিব ও জিএম এমএইচএম জাহাঙ্গীর। এমডি অ্যান্ড সিইও মো. আব্দুল জব্বার জানান, ২০২৩ সালে শ্রেণিকৃত ঋণ হতে ২২৫ কোটি এবং অবলোপনকৃত ঋণ হতে ৭৮ কোটি টাকা নগদ আদায় করেছে জনতা ব্যাংক।
ব্যাংকের মোট সম্পদের পরিমাণ ১ লাখ ৩৮ হাজার ৭০৬ কোটি টাকা এবং ঋণ ও আমানত অনুপাত (এডি রেশিও) ৮৯ দশমিক ১৭ শতাংশ। লোকশানী শাখা ৩৩ টি থেকে এখন ২৮ টি শাখায় নিয়ে এসেছে জনতা ব্যাংক। তিনি জানান, অ্যাপস ভিত্তিক বিশ্বমানের স্মার্ট ব্যাংকিং সেবা ই-জনতা চালু করেছে জনতা ব্যাংক। কোন চেক বই ছাড়াই এনড্রয়েড মোবাইলে কিউ আর কোড স্ক্যান করে ই-জনতা অ্যাপসের মাধ্যমে ব্যাংকের যে কোন শাখা থেকে টাকা উত্তোলন করা যাবে। পাশাপাশি এ অ্যাপসের মাধ্যমে যে কোন ব্যাংকের শাখায় অর্থ প্রেরণ, ডিপিএস ও ঋণের কিস্তি পরিশোধেরও সুবিধা রয়েছে। এছাড়া বিকাশ বা নগদ ওয়ালেটেও টাকা পাঠানোর সুবিধা রয়েছে। সভায় এমডি অ্যান্ড সিইও আরও জানান, ২০২৩ সালে ভ্যাট ও আবগারি শুল্ক বাবদ জনতা ব্যাংক সরকারি কোষাগারে মোট ১ হাজার ৪৩৭ কোটি টাকা জমা করেছে। আগের বছর জমার পরিমান ছিল ১ হাজার ১৮০ কোটি টাকা। এছাড়া জনতা ব্যাংকের সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান জনতা ক্যাপিটাল অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড ১৮ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা অর্জন করেছে। জ নতা ব্যাংকের প্রতিটি কর্মীর অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে এসব অর্জন সম্ভব হয়েছে।