যুক্তরাষ্ট্র ফেরত চীনা বিজ্ঞানীর হাতে তৈরি হলো নতুন কোয়ান্টাম কম্পিউটিং যন্ত্র
গত এক দশক ধরে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে প্রযুক্তি নিয়ে ঠান্ডা যুদ্ধ দেখা যাচ্ছে। কোয়ান্টাম কম্পিউটার নিয়ে দুই দেশের মধ্যে প্রতিযোগিতা চলছে। এবার যুক্তরাষ্ট্র ফেরত বিজ্ঞানী ডুয়ান লুমিংয়ের হাত ধরে নতুন কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরিতে সাফল্য লাভ করেছে চীন। কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের দুনিয়াতে বিজ্ঞানী ডুয়ান আলোচিত এক নাম। ২০০০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয় যোগ দেওয়ার পর প্রায় ১৫ বছর কোয়ান্টাম কম্পিউটারের ওপরে আলোচিত সব গবেষণায় যুক্ত ছিলেন তিনি। পরে ২০১৮ সালে চীনে ফেরত আসেন এই বিজ্ঞানী। যুক্তরাষ্ট্র ফেরত এই বিজ্ঞানীর হাত ধরেই চীনে তৈরি হলো শক্তিশালী কোয়ান্টাম কম্পিউটার। চীনের সিংগুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারডিসিপ্লিনারি ইনফরমেশন সায়েন্সেস ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানী হিসেবে কর্মরত বিজ্ঞানী ডুয়ান লুমিংয়ের নেতৃত্বে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী আয়নভিত্তিক কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরি করেছেন চীনের বিজ্ঞানীরা।
কম্পিউটারে তথ্য সঞ্চয় করার জন্য কোয়ান্টাম বিট বা কিউবিট ব্যবহার করা হয়। তবে সিলিকনভিত্তিক কম্পিউটারে প্রচলিত বিটের বিপরীতে কিউবিট ব্যবহার করা হয়, যা একই সঙ্গে চালু ও বন্ধ থাকতে পারে, যা সুপারপজিশন নামেও পরিচিত। এর মাধ্যমে কোয়ান্টাম অ্যালগরিদম বিশ্বের দ্রুততম সুপারকম্পিউটারকে কম সময়ে বেশি তথ্য প্রক্রিয়া করার সুযোগ করে দেয়। বিজ্ঞানীরা এরই মধ্যে আয়ন বা চার্জযুক্ত কণাকে তড়িৎ–চৌম্বকীয় ক্ষেত্রের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছেন। কোয়ান্টাম সিস্টেমে চার্জযুক্ত কণাকে কিউবিট হিসেবে ব্যবহার করা যায়। তবে তাত্ত্বিকভাবে আয়নের মাধ্যমে কোয়ান্টাম তথ্য স্থানান্তর করা গেলেও এখনই এ সুবিধা ব্যবহারের সক্ষমতা নেই বিজ্ঞানীদের।
কোয়ান্টাম কম্পিউটারের চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে উঠতে বিজ্ঞানীরা আবদ্ধ বা ট্র্যাপড-আয়ন সিস্টেম ব্যবহার করেছেন। এ ধরনের সিস্টেমে বিজ্ঞানীরা একটি একমাত্রিক আয়ন–স্ফটিক ব্যবহার করেছেন, যা আয়নকে জালিকা কাঠামোর মধ্যে আবদ্ধ করে রাখে। পুরো বিষয়টিকে ট্র্যাপড-আয়ন সিস্টেম বলা হয়। সিংগুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা আপাতত ৫১২টি আয়নের দ্বিমাত্রিক স্ফটিক তৈরি করেছেন। কোয়ান্টামবিজ্ঞান দুনিয়ায় তাঁরাই প্রথম এ ধরনের স্ফটিক তৈরি করেছেন।
এই গবেষণার মাধ্যমে ভবিষ্যতে বড় আকারের কোয়ান্টাম কম্পিউটার নির্মাণের সুযোগ তৈরি হলো বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী আয়নভিত্তিক কোয়ান্টাম কম্পিউটিং সিস্টেম তৈরির গবেষণার ফলাফল নেচার জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।