Bangladesh

কী হচ্ছে বিমা খাতে, শেষ নেই অভিযোগের

অনিয়মে ডুবতে বসেছে বিমা খাত। ব্যক্তিস্বার্থে বিভিন্ন বিমা কোম্পানির বোর্ড ভেঙে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে প্রশাসক। এতে আতঙ্ক তৈরি হচ্ছে বিমা কোম্পানিগুলোতে। জানা গেছে, এক মাসের ব্যবধানে দেশের শীর্ষ জীবন বিমা কোম্পানি সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স ও স্বদেশ লাইফ ইন্স্যুরেন্সে প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ-আইডিআরএ। গোল্ডেন লাইফ ইন্স্যুরেন্স, সান লাইফ ইন্স্যুরেন্সসহ আরও কয়েকটি কোম্পানিতে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হবে বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে একের পর এক কোম্পানিতে অনভিজ্ঞ, অদক্ষ প্রশাসক নিয়োগ দেওয়ার ফলে হুমকির মুখে পড়েছে বিমা খাত। অদক্ষ প্রশাসকের কারণে সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির ব্যবসা কমেছে প্রায় অর্ধেক। আইডিআরএর এমন কর্মকাণ্ডে ব্যক্তিস্বার্থ হাসিল ও অনৈতিক সুবিধার বিনিময়ে এভাবে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সংস্থাটির চেয়ারম্যান জয়নুল বারীর বিরুদ্ধে। নিয়মবহির্ভূতভাবে জয়নুল বারী গত ২১ এপ্রিল সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে একজন অনভিজ্ঞ অযোগ্য প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছেন। একজন অদক্ষ, অনভিজ্ঞ ও একরোখা প্রশাসক নিয়োগের কারণে গত এক মাসে কোম্পানির ব্যবসা কমেছে প্রায় ৪২ শতাংশ।

এভাবে চলতে থাকলে খুব দ্রুতই কোম্পানিটি দেউলিয়া হবে এবং লাখ লাখ গ্রাহকের বিমা পলিসির টাকা অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। সেই সঙ্গে কর্মহীন ও নিঃস্ব হয়ে পড়বে হাজার হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী ও তাদের পরিবার। এর মধ্যেই বরখাস্তকৃত পরিচালকদের তদন্তের নামে সরিয়ে দিয়ে কোম্পানি দখলের পাঁয়তারা করছে সংশ্লিষ্ট ষড়যন্ত্রকারী মহলটি। মূলত সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের বোর্ড মেম্বারদের পুনর্বহাল ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে একজন দক্ষ, নিরপেক্ষ অবজারভার নিয়োগের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি ও এর ৮ লাখ গ্রাহকের আমানত নিরাপদ করার দাবি জানিয়েছেন বিমা কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সেই সঙ্গে আইডিআরএ চেয়ারম্যানের অনিয়ম-দুর্নীতি তদন্তেরও দাবি জানান তারা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশের সামাজিক নিরাপত্তা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০১৩ সালে যে ১৩টি ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি অনুমোদন পেয়েছে। তার মধ্যে চতুর্থ প্রজন্মের সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি অন্যতম একটি। প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোক্তা পরিচালক ও সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের সুযোগ্য নেতৃত্বে সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি বিমা দাবি নিষ্পত্তি ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শতভাগ দাবি-দাওয়া পরিশোধের অনন্য নজির স্থাপন করেছে।

কিন্তু সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির এই সাফল্যে ঈর্ষান্বিত ও দুর্নীতির মাধ্যমে সুবিধা গ্রহণ করতে না পেরে সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর রাশেদ বিন আমানসহ একটি মহল প্রতিষ্ঠানটি ধ্বংস করতে উঠেপড়ে লেগেছে। মূলত ওই মহলটি মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসসহ অন্যদের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের মিথ্যা অভিযোগ তুলে এবং সেই অভিযোগের তথ্য-উপাত্ত যাচাইবাছাই না করে, পরিচালনা পর্ষদের কাছে ব্যাখ্যা না চেয়ে নিয়মবহির্ভূতভাবে সোনালী লাইফে একজন অনভিজ্ঞ প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছেন আইডিআরএ চেয়ারম্যান। এই প্রশাসক মূলত ষড়যন্ত্রকারী গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষার জন্যই নিযুক্ত হয়েছেন। অর্থনীতিবিদদের মতে, যদি কোনো প্রতিষ্ঠানে আর্থিক অনিয়ম-দুর্নীতি অথবা মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ ওঠে, সেই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে নিয়মনীতি অনুসরণ করে। যেহেতু বিমা প্রতিষ্ঠানটি পাবলিক লিস্টেড কোম্পানি, সেহেতু এই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণের আগে সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) মতামত নেওয়ার দরকার ছিল। একই সঙ্গে মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ থাকলে তা দেশের অর্থ পাচার প্রতিরোধ সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটকে (বিএফআইইউ) অবহিত করতে হবে।

অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদের কাছে এ ব্যাপারে ব্যাখ্যা না চেয়ে কিংবা পর্ষদকে আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনো প্রকার সুযোগ না দিয়ে রাতারাতি পর্ষদ ভেঙে প্রশাসক নিয়োগের ঘটনা নজিরবিহীন। আইডিআরএর চেয়ারম্যান কেবল প্রশাসক নিয়োগ দিয়েই ক্ষ্যান্ত হননি। প্রতিষ্ঠানটিতে দীর্ঘদিন ধরে কর্মরত কর্মীদের বদলি এবং অভ্যন্তরীণ আইটির পাসওয়ার্ড চাচ্ছেন। না দিলে চাকরিচ্যুত করার হুমকি দিচ্ছেন। এটিও নজিরবিহীন ঘটনা বলে জানিয়েছেন বিমা খাত সংশ্লিষ্টরা। ব্যবসাসফল সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডকে ধ্বংস করার এমন নীলনকশা বাস্তবায়নে জড়িত থাকার অভিযোগে প্রশাসক নিয়োগের নিন্দা জানিয়েছেন ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন ও বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স ফোরাম। প্রশাসক নিয়োগ বাতিলের দাবিতে আইডিআরএ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ৩০ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীর পক্ষে অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক, উপব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা।

অভিযোগে বলা হয়, ১১ বছর ধরে সাফল্যের সঙ্গে ব্যবসা করছে সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি। কিছু অসাধু কর্মকর্তার ষড়যন্ত্রের কারণে প্রতিষ্ঠানটি ধ্বংসের মুখে। বিমা দাবি নিষ্পত্তি ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শতভাগ দাবি-দাওয়া পরিশোধের ক্ষেত্রে দেশের অন্যান্য কোম্পানির চেয়ে এগিয়ে সোনালী লাইফ। ৩০ হাজার মাঠকর্মীর অক্লান্ত পরিশ্রমে ৮ লক্ষাধিক গ্রাহক তৈরির মাধ্যমে যখন সাফল্যের শীর্ষে পৌঁছে যাচ্ছিল, ঠিক তখন সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের সাবেক সিইও মীর রাশেদ বিন আমান ও একটি স্বার্থান্বেষী মহলের সহযোগিতায় নিজেদের আর্থিক লাভ, জাল-জালিয়াতি ও চারিত্রিক অনৈতিক ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার উদ্দেশ্যে সোনালী লাইফের স্বপ্নদ্রষ্টা ও বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস ও তার পরিবারের সদস্যদের সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করা হচ্ছে।

আইডিআরএ চেয়ারম্যান জয়নুল বারী ও তার ছেলে মহসীনুল বারী শাকিরের পৃষ্ঠপোষকতায়, কোম্পানি ও মাঠকর্মীদের ভবিষ্যৎ ধ্বংসের লক্ষ্যে একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, ইন্স্যুরেন্স ব্যবসা সম্পর্কে যার কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তিনি কর্মীদের নানাবিধ সুযোগ-সুবিধা বন্ধের মাধ্যমে এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সুপরিকল্পিত চক্রান্তে মেতে উঠেছেন। সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স ছাড়াও একাধিক ব্যবসাসফল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির পর্ষদ ভেঙে দেওয়া ও তুলনামূলকভাবে বিমা দাবি মেটাতে অক্ষম ও দুর্নীতিপরায়ণ বিমা প্রতিষ্ঠানগুলোকে অবৈধ সুবিধা প্রদানের অভিযোগ করেছেন কোম্পানির জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা। এ ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে কোম্পানিটির হাজার হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী অনশনে যাওয়ার হুমকি দিয়েছেন। অভিযোগের বিষয়ে জানতে গতকাল আইডিআরএ চেয়ারম্যান জয়নুল বারীর মোবাইল ফোনে কল করা হলেও তিনি ধরেননি।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button