মৌসুমি বায়ু সর্বত্র তবুও কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টি নেই, কিছু এলাকায় চলছে তাপপ্রবাহ
মৌসুমি বায়ু এখন দেশের সর্বত্র বিরাজ করছে। তবুও কাক্সিক্ষত মানের বৃষ্টি হচ্ছে না। ফলে উচ্চ তাপমাত্রায় মানুষ হাঁসফাঁস করছে। বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকায় প্রচুর ঘাম হচ্ছে। অল্পতেই মানুষ ক্লান্ত হয়ে উঠছে। গরমের কারণে এবং পানির নিম্নমানের কারণে দেশের কিছু স্থানে মানুষ ডায়রিয়ায় ভুগছে। রাজধানীর আইসিডিডিআরবি হাসপাতালে কয়েক দিন যাবত দিনে এক হাজারের বেশি ডায়রিয়ার রোগী চিকিৎসা নিতে আসছেন। অবশ্য মৌসুমি বায়ু বিরাজ করায় দেশের অল্প কিছু স্থানে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হলেও বেশির ভাগ স্থানে খুব সামান্যই বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টি না হওয়ায় দেশের কিছু কিছু স্থানে উচ্চ তাপমাত্রা বিরাজ করছে, ফলে মৃদু তাপপ্রবাহ বিরাজ করছে এসব স্থানে।
আবহাওয়াবিদ মো: শাহীনুল ইসলাম বলেন, দেশের সর্বত্র মৌসুমি বায়ু বিরাজ করলেও সর্বত্র ভারী বৃষ্টি নাও হতে পারে। তবে কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া দেশের প্রায় সর্বত্রই গতকাল কমবেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। গতকাল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছে যশোরে ৩৭.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল সবচেয়ে কম বৃষ্টি হয়েছে খুলনা বিভাগে। ফলে খুলনা বিভাগের সর্বত্রই সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৬ অথবা এর কাছাকাছি ছিল। গতকাল দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল কুড়িগ্রামে ২২.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, আজ বৃহস্পতিবারও সারাদিন দেশের সার্বিক তাপমাত্রার তেমন কোনো পরিবর্তন হবে না, প্রায় একই রকম থাকবে। আজ বৃহস্পতিবার খুলনা বিভাগের প্রত্যেকটি জেলা তাপপ্রবাহের আওতায় থাকবে। এর বাইরে ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, পাবনা, রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ, রাঙ্গামাটি, বরিশাল ও পটুয়াখালী জেলা। এসব জেলায় ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে তাপমাত্রা থাকতে পারে। এটা অব্যাহত থাকবে বলে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে। বাতাসে অতিরিক্ত আর্দ্রতা থাকায় মানুষের মধ্যে অস্বস্তিকর অবস্থা বিরাজ করতে পারে। কারণ মানুষের মধ্যে ঘাম হওয়ার প্রবণতা বেশি থাকতে পারে।
এ দিকে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যার পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র আগামী দুই দিন দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর পূর্বাঞ্চল এবং এই অঞ্চলগুলোর সংলগ্ন উজানে মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। ফলে দেশের উত্তরাঞ্চল ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদীগুলোতে যে পানি বেড়েছে তা ধীরে ধীরে কমতে থাকবে। শুধু যে দেশের অভ্যন্তরে বৃষ্টি হয়েছে তা নয়, দেশের উজানেও একই সময় প্রচুর ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হয়েছে। সে পানিও বাংলাদেশের নদীগুলো দিয়ে নিচে নামতে শুরু করেছে। বিশেষ করে সিলেট অঞ্চলে কয়েক দিন ধরে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হয়ে আসছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত এর আগের ২৪ ঘণ্টায় সিলেটে ৯৭ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এর আগে গতকাল সকাল ৬টা পর্যন্ত এর আগের ২৪ ঘণ্টায় সিলেটে এবং মৌলভীবাজারে ১৪৩ মিলিমিটার করে বৃষ্টি হয়ে গেছে। এই দুই জেলা ছাড়া সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জেও মাঝারি মানের বৃষ্টি হয়েছে সিলেট বিভাগে এবং উজানে ভারতীয় অংশেও প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়েছে। এই ভারী বর্ষণের পানি ধীরে ধীরে সিলেট বিভাগের নদীগুলোতে নামতে শুরু করেছে। এসব কারণে সিলেট বিভাগের নদীগুলোতে বিরাজমান বন্যা ধীরে ধীরে কমবে বলে পাউবো পূর্বাভাসে জানিয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবারের পূর্বাভাসে পাউবো বলেছে, সিলেট জেলা এবং এর নিম্নাঞ্চলের পানি এবং বন্যা পরিস্থিতির ধীরে ধীরে উন্নতি হবে। অন্য দিকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাতের কারণে গঙ্গা-পদ্মা ও যমুনা-ব্রহ্মপুত্রের পানি বাড়তে থাকবে এবং তা কমপক্ষে আরো ৪৮ ঘণ্টা বাড়া অব্যাহত থাকতে পারে।
আবহাওয়া অফিস বলছে, আজ সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রাজশাহী, ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং খুলনা ও বরিশাল বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাত হবে। সেই সাথে রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে।