Bangladesh

খাল-নালায় কত প্রাণ গেলে টনক নড়বে চসিকের?

তিন বছরে ৮ মৃত্যু

  • ৪১টি ওয়ার্ডে নালা-নর্দমায় হাজারও মরণফাঁদ
  • ধারাবাহিক প্রাণহানির ঘটনায় ক্ষুব্ধ নগরবাসী
  • উন্মুক্ত নালা-নর্দমা ও খালে ৫৫২৭ ঝুঁকিপূর্ণ স্থান

চট্টগ্রাম নগরের পথে পথে খোলা নালাগুলো কি মরণফাঁদ? আর কত প্রাণ গেলে টনক নড়বে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক)? রবিবার (৯ জুন) সকাল ১০টার দিকে আগ্রাবাদ এলাকার নাসির খাল  থেকে জসিম উদ্দিন নামে ৭ বছর বয়সী এক শিশুর মরদেহ উদ্ধারের পর এই প্রশ্ন এলাকাবাসীর।

চসিকের উদাসীনতায় ৪১টি ওয়ার্ডে নালা-নর্দমায় হাজার মরণফাঁদ রয়েছে। এসবে পড়ে একের পর এক প্রাণহানির ঘটনায় নগরবাসীর মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

জানা গেছে, রবিবার সকালে নাসির খাল থেকে উদ্ধার হওয়া শিশু জসিমের বাবা আকবর হোসেন ডবলমুরিং থানাধীন সিডিএ কলোনি  এলাকার বাসিন্দা। পেশায় তিনি রিকশাচালক। স্থানীয়দের ধারণা, রিকশাচালক আকবরের বাসার অদূরে আছে স্ল্যাববিহীন নালা। লাশ উদ্ধারের ১৮ ঘণ্টা আগে নিখোঁজ হয় জসিম। খেলতে গিয়ে হয়তো খোলা নালায় পড়ে যায় জসিম।

সিডিএ কলোনি এলাকার বাসিন্দা আজমল হোসেন বলেন, ‘নাসির খালের পাশের রাস্তার ১৪/১৫টি স্থানে স্ল্যাব নেই। সেগুলো একেকটি যেন মৃত্যুকূপ। নালা ও খালে পড়ে এত মৃত্যুর পরেও টনক নড়ছে না সিটি করপোরেশনের। সাত বছরের শিশু জসিমও খোলা ম্যানহোলে পড়ে মারা যেতে পারে।’

এদিকে শিশু জসিমের মৃত্যুর কারণ তদন্ত করে দেখছে পুলিশ। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পেলে কীভাবে মৃত্যু হয়েছে তা জানা যাবে বলে জানিয়েছেন নগরের বন্দর জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার মাহমুদুল হাসান।

চসিক

রবিবার বেলা ১১টার দিকে ঘটনাস্থল সিডিএ কলোনিতে গিয়ে দেখা যায় আদরের শিশু সন্তানকে হারিয়ে স্তব্ধ রিকশাচালক আকবর হোসেন। সন্তান কীভাবে নিখোঁজ হলো জানতে চাইলে কান্নায় ভেঙে পড়েন আকবর। ‘কী কারণে আমার ছেলে মারা গেল জানতে চাই’ দেশ রুপান্তরকে বলেন আকবর।

স্থানীয় বাসিন্দা আজমল আলী, সৈয়দ মহসীন, ইমন সেন গুপ্তের অভিমত, নাসির খালের জলাবদ্ধতা নিরসনের কাজ করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ সিডিএ। তবে খালের পাশের রাস্তার নালায় স্ল্যাব দেয়নি চসিক। সিডিএ কলোনিতেও যে নালা আছে সেটির অনেক জায়গায় ম্যানহোল নেই। যেন একেকটি খাল-নালা মরণফাঁদ।

শনিবার (৮ জুন) বিকালের দিকে খেলাধূলা করতে গিয়ে হয়তো ম্যানহোলবিহীন নালায় পড়ে যায় জসিম। পরে তার লাশ পাওয়া যায় পাশের নাসির খালে। রবিবার সকালে শিশু জসিমের  লাশ দেখতে পেয়ে স্থানীয়রা পুলিশে জানান।

শুধু শিশু জসিম নয়, গেল তিন বছরে নগরের নালা ও খালে পড়ে প্রাণ গেছে এক কলেজছাত্রীসহ আরও সাতজনের। নালা ও খাল একে একে ৮টি প্রাণ গিলে খেলেও এসব মৃত্যুতে টনক নড়েনি চসিকের। চলতি বছরের ২৭ মে বিকালে ঘূর্ণিঝড় রিমালের পর নগরের আছদগঞ্জের কলাবাগিচা খালে পড়ে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। ওইদিন সাড়ে ৪টার দিকে তাকে উদ্ধার করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

২০২৩ সালের ৩ সেপ্টেম্বর নগরের ডবলমুরিং থানাধীন সিডিএ আবাসিক এলাকার খালে নেমে নিখোঁজ হয় আবদুল্লাহ (৫)। এক দিন পর তার লাশ পাওয়া যায় খালে। একই বছরের ২৭ আগস্ট বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে খেলতে গিয়ে নগরের রঙ্গিপাড়ার নালায় পড়ে নিখোঁজ হয় শিশু ইয়াসিন আরাফাত। নিখোঁজের পরদিন সকাল ৯টার দিকে ঘরের সামনে নালার আবর্জনার স্তূপ থেকে উদ্ধার করা হয় ওই শিশুর মরদেহ। এর আগে ২০২৩ সালের ৭ আগস্ট নগরের ১ নম্বর দক্ষিণ পাহাড়তলী ওয়ার্ডের ইসলামিয়া হাট সংলগ্ন বাদামতলা এলাকার নালায় পড়ে মারা যান কলেজছাত্রী নিপা পালিত।

২০২২ সালের ৬ ডিসেম্বর একই খালে তলিয়ে যায় শিশু মো. কামাল উদ্দিন। তিনদিন পর মির্জা খাল থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। একই বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর আগ্রাবাদের মাজার গেট এলাকার ফুটপাতে পা পিছলে নালায় পড়ে মৃত্যু হয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী  শেহেরীন মাহমুদ সাদিয়ার। নগরের উন্মুক্ত নালা-খালে পড়ে একাধিক মানুষের হতাহত হওয়ার ঘটনা ঘটলেও দায় নিচ্ছে না চসিক।

এর আগে ২০২১ সালের ৩০ জুন ষোলশহর এলাকার চশমা খালে পড়ে অটোরিকশাচালক ও এক যাত্রীর মৃত্যু হয়। একই বছর ২৫ আগস্ট সকালে মুরাদপুরে ড্রেনে পড়ে নিখোঁজ হন ব্যবসায়ী সালেহ আহমেদ। প্রায় তিন বছর পেরিয়ে গেলেও আজও হদিস মিলেনি ব্যবসায়ী সালেহ আহমদের। এই প্রসঙ্গে চসিক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী ও প্রধান নির্বাহী শেখ মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বিদেশ সফরে থাকায় তাদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। মেয়রের একান্ত সচিব ও পরিচ্ছন্নতা বিভাগের প্রধান আবুল হাশেমের মুঠোফোনে  যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনিও সাড়া দেননি।

চসিকের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, ‘নগরে উন্মুক্ত নালা-নর্দমা ও খালে ৫ হাজার ৫২৭টি ঝুঁকিপূর্ণ স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে। পথচারীদের নিরাপদে চলাচলের জন্য গত তিন বছরে প্রায় ২৫ হাজার বর্গফুট স্ল্যাব মেরামত এবং নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছে। আর ঝুঁকিপূর্ণ খালের পাড়ে ১৫ হাজার বর্গফুট রক্ষাপ্রাচীর নির্মাণ করা হয়েছে। জলাবদ্ধতা নিরসনে চলমান প্রকল্পের কাজ চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ শেষ হলে অরক্ষিত নালা ও খাল চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacan4d
bacan4d
bacan4d online