Bangladesh

ডলার-সংকটের মূল কারণ অর্থ পাচার, পাচারকারীদের চিহ্নিত করার দাবি সংসদে

ডলার-সংকটের জন্য দেশ থেকে অর্থ পাচারকেই দায়ী করলেন একাধিক সংসদ সদস্য। গতকাল সোমবার সংসদে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেট পাশের আগে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের মঞ্জুরি দাবির ওপর ছাঁটাই প্রস্তাবের আলোচনায় বিরোধী দল জাতীয় পার্টির (জাপা) এক জন এবং দুই জন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য কারা অর্থ পাচার করেছেন তাদের চিহ্নিত করার, কারা অর্থ পাচার করে ইউরোপ-আমেরিকায় বাড়ি-হোটেল বানিয়েছেন তাদের নাম প্রকাশের এবং পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনার দাবি জানান। আর্থিক খাতে বিভিন্ন অনিয়ম-বিশৃঙ্খলা নিয়েও তোপ দাগান এই তিন এমপি।

তাদের সমালোচনার জবাবে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেছেন, ‘অনিয়মের যেসব কথা বলা হয়েছে, সেগুলো অনেকটা ঢালাও অভিযোগ। তবে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি।’

পরে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৩৭ হাজার ৮১৭ কোটি ৪০ লাখ ৫৭ হাজার টাকার সম্পূরক বাজেট সংসদে পাশ হয়েছে। অর্থমন্ত্রী ‘নির্দিষ্টকরণ (সম্পূরক) বিল, ২০২৪’ সংসদে উত্থাপনের পর তা কণ্ঠভোটে পাশ হয়। আগামী ৩০ জুন শেষ হতে যাওয়া অর্থবছরের কার্যক্রম নির্বাহের জন্য সংযুক্ত তহবিল থেকে মঞ্জুরিকৃত অর্থের বেশি বরাদ্দ ও নির্দিষ্টকরণের কর্তৃত্ব দেওয়ার জন্য এই সম্পূরক বিল আনা হয়। বিলটি পাশের আগে কণ্ঠভোটে ছাঁটাই প্রস্তাবগুলো নাকচ হয়। সম্পূরক বাজেটে ২০টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মঞ্জুরি দাবির ওপর ৬৬টি ছাঁটাই প্রস্তাব দেওয়া হলেও আলোচনা হয় আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের ওপর। অন্য প্রস্তাবগুলো আলোচনা ছাড়াই ভোটে দেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।

বিলটি পাশের আগে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেটে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের মঞ্জুরি দাবির ওপর ছাঁটাই প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ ও জাপার মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, আর্থিক বিভাগের অনিয়মের প্রতিবাদ হিসেবেই আমি ছাঁটাই প্রস্তাব দিয়েছি। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের বড় কাজ ব্যাংকিং খাত তদারক করা। কিন্তু জনগণের টাকা লুটপাট হচ্ছে, ব্যাংকে অনিয়ম হচ্ছে, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ বা বাংলাদেশ ব্যাংক কী তদারকি করছে? পি কে হালদার কয়েক হাজার কোটি টাকা নিয়ে চলে গেছেন। বিভিন্ন সময়ে বড় বড় প্রতিষ্ঠান ঋণ নেয়, পরে তাদের সুদ মওকুফ করা হয়। এসবের জবাব কি অর্থমন্ত্রী দিতে পারবেন?

বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ বলেন, ২ হাজার ২০০ কোটি টাকা সুদ মওকুফ করা হয়েছে। অথচ ৫০ হাজার টাকার জন্য কৃষককে গ্রেফতার করা হয়েছে। আর্থিক খাতে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে না পারলে এখানে টাকা খরচ করা কেন? চুপ থাকাই ভালো। তিনি বলেন, ডলার-সংকটের বড় কারণ পাচার। আগের অর্থমন্ত্রী এ বিষয়ে কিছুই শুনতে চাইতেন না। ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ, আমলা যেই হোক, যারা বিদেশে টাকা পাচার করেছেন; কানাডা, ইউরোপ, আমেরিকায় বাড়ি ও হোটেল করেছেন; তদন্ত করে তাদের চিহ্নিত করা হোক। টাকা ফেরত আনতে না পারলেও তাদের চিহ্নিত করার দাবি জানান তিনি।

ছাঁটাই প্রস্তাবের আলোচনায় স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য পঙ্কজ নাথ বলেন, দেশ থেকে টাকা পাচার হচ্ছে। এ বিষয়ে কঠোর হতে হবে। ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এলসি খোলার ক্ষেত্রে যে সংযত নীতি, তা পরিহার করে আরও উদার হওয়া দরকার। ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা জরুরি।

আরেক স্বতন্ত্র সদস্য হামিদুল হক খন্দকার বলেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ কেন অতিরিক্ত মঞ্জুরি দাবি করেছে, এর সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা নেই। অতীতে আরাফাত রহমান কোকোর পাচার করা টাকা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। এখন দেশে লুটপাট করে যারা অর্থ পাচার করেছেন, তাদের সেই অর্থ কেন ফিরিয়ে আনা যাবে না? আমি আশা করি তাদের অর্থও ফিরিয়ে আনা হবে।

আইসিটি খাতে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ

ছাঁটাই প্রস্তাবের আলোচনায় তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং প্রকল্পগুলো সঠিকভাবে চলছে কি না, তার খবর নেওয়ার দাবি জানিয়ে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, এই প্রকল্পে যারা লার্নিং করতে আসে, তারা সঠিকভাবে আত্মস্থ করতে পারে না। এখানে অপব্যয় হচ্ছে।

স্বতন্ত্র এমপি পংকজ নাথ বলেন, আইসিটি খাতে কাজ যে হচ্ছে না তা ঠিক নয়। তবে ‘দোয়েল’-এর (ল্যাপটপ) বাক্স খুললে যদি চাইনিজ কম্পিউটার পাওয়া যায়, তাহলে এটা কি অপচয় না দুর্নীতি? এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থাটা কী নিয়েছেন তা সংসদ জানতে চায়। দোয়েলের বাক্স খোলার পরে দেখা গেল চাইনিজ পচা মাল। এরপর বন্ধ করে দিলেন। তিনি বলেন, শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাবের নামে যে কম্পিউটার দিয়েছেন, তা কি আদৌ কাজ করছে, নাকি জং ধরে গেছে? ডাক বিভাগের আধুনিকায়নের নামে দুর্নীতির প্রমাণ মিলেছে। ডাক বিভাগের জমির অবস্থা কী, সে সম্পর্কেও জানতে চান পঙ্কজ নাথ।

সম্পূরক বাজেটে যা আছে

চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য গতকাল সংসদে পাশ হয়েছে ৩৭ হাজার ৮১৭ কোটি ৪০ লাখ ৫৭ হাজার টাকার সম্পূরক বাজেট। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে ৬২টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের অনুকূলে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল। সংশোধিত বাজেটে ২২টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের বরাদ্দ বেড়েছে ৩৭ হাজার ৮১৭  কোটি টাকা। ৪০টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের বাজেট অপরিবর্তিত রয়েছে বা হ্রাস পেয়েছে। সার্বিকভাবে ৪৭ হাজার ৩৬৭ কোটি টাকা হ্রাস পেয়ে সংশোধিত বাজেট হয়েছে ৭ লাখ ১৪ হাজার ৪১৮ কোটি টাকা। সম্পূরক বাজেটে সর্বোচ্চ ১২ হাজার ৬৪৯ কোটি ৩৩ লাখ ৬৮ হাজার টাকা পেয়েছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button