International

ম্যাক্রোঁ কি আর ফ্রান্সের ক্ষমতায় থাকতে পারবেন?

ফ্রান্সে পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়ে আগাম নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। ম্যাক্রোঁর সিদ্ধান্তে আগামী ৩০ জুন ফ্রান্সে প্রথম দফার জাতীয় নির্বাচন। এরপর দ্বিতীয় দফার নির্বাচন হবে ৭ জুলাই। এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রতিদ্বন্দ্বীরা এবং মিত্ররা বেপরোয়া জুয়ায় মেতেছেন। 

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, এই খেলায় রাজনৈতিক ক্ষমতা চলে যেতে পারে উগ্র ডানপন্থিদের হাতে। যদি তাই হয়, তাহলে দেশটিতে অভিবাসন নীতিতে আমূল পরিবর্তন আসবে। কারণ, উগ্র ডানপন্থিরা তীব্রভাবে অভিবাসী বিরোধী। এ অবস্থায় প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ ফ্রান্সের রাজনীতি নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করবেন। 

কিন্তু জনমত বলছে, সেটা নাও ঘটতে পারে। ইউরোপিয়ান নির্বাচনে ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর জোট রিনিউ’কে পরাজিত করে জর্ডান বারডেলা এবং মেরি লা পেনের উগ্র ডানপন্থি ন্যাশনাল র‌্যালি (এনআর) পার্টি। এর কয়েক ঘণ্টা পরই প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ টিভিতে উপস্থিত হন।

ঘোষণা দেন, যা ঘটে গেছে তাকে কিছু ঘটেনি বলে তিনি বলবেন না। নির্বাচনে ন্যাশনাল র‌্যালি শতকরা ৩১.৪ ভাগ ভোট পায়। অন্যদিকে ম্যাক্রোঁর দল পায় শতকরা মাত্র ১৪.৬ ভাগ ভোট। ম্যাক্রোঁ বলেন, ফরাসি জনগণ এবং রাজনীতিকদের এখনই সময়, যারা নিজেদেরকে উগ্রপন্থি হিসেবে মনে করেন না, তাদের সামনে একটি নতুন জোট গড়ার।  

২০২২ সালের জুনে সর্বশেষ ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি নির্বাচন হয়েছে। ফলে নতুন করে এই নির্বাচন ডাকার কোনো প্রয়োজন তার ছিল না। কারণ, নিয়ম অনুযায়ী পরবর্তী নির্বাচন হওয়ার কথা ২০২৭ সালে। ম্যাক্রোঁ মনে করেন, আগাম নির্বাচন আহ্বান করা সবচেয়ে দায়িত্বশীলের মতো কাজ। 

কিন্তু ম্যাক্রোঁর নিজের শহর অ্যামিয়েন্সের লোকজনই এখন আর তাকে চায় না। তাদের অভিযোগ, ম্যাক্রোঁ তার দেওয়া কোনো প্রতিশ্রুতিই রক্ষা করেননি। তাই ম্যাক্রোঁ যখন প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন তাতে যতটা গর্ববোধ করেছিলেন অ্যামিয়েন্সবাসী; এখন ঠিক ততটাই তারা বিরক্ত ম্যাক্রোঁর প্রতি। তাই নিজের শহরের লোকজনের মন যেখানে ম্যাক্রোঁ রক্ষা করতে পারেননি সেখানে সারাদেশে তার অবস্থা কী তা সহজেই অনুমেয়। 

এসব দিক বিবেচনায় নিয়ে বিবিসি লিখেছে, প্রথমবারের মতো ফ্রান্সে ক্ষমতায় আসতে পারে ন্যাশনাল র‌্যালি। এর নেতৃত্বে আছেন ২৮ বছর বয়সী জর্ডান বারডেলা এবং পার্লামেন্টারিয়ান মেরি লা পেন। এর মধ্যে মেরি লা পেন তিনবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করে প্রতিবারই হেরেছেন। কিন্তু প্রতিবারই তিনি ভোট পেয়েছেন বেশি। এখন জনমত বলছে, মেরি লা পেনের দল ফ্রান্সে সবচেয়ে বড় দল হয়ে উঠতে পারে। একক সংখ্যাগরিষ্ঠতার কাছাকাছি পৌঁছে যেতে পারে।

ফ্রান্সের ন্যাশনাল এসেম্বলিতে আসন আছে মোট ৫৭৭টি। এর মধ্যে ১৩টি আছে ওভারসিজ ডিস্ট্রিক্ট এবং ১১টি আসন প্রবাসী ফরাসিদের প্রতিনিধিত্ব করে। একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে একটি দলকে কমপক্ষে ২৮৯টি আসন পেতে হবে। বিদায়ী পার্লামেন্টে ম্যাক্রোঁর জোটের আসন ছিল মাত্র ২৫০টি। ফলে কোনো আইন পাস করতে গিয়ে তাকে প্রতিবারই অন্য কোনো দলের সমর্থনের দিকে তাকিয়ে থাকতে হতো। আর সেই কারণেই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে তিনি এই আগাম নির্বাচনের ঘোষণা দেন।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button