পরিকল্পনার ভুলে বারবার মেয়াদ-ব্যয় বৃদ্ধি, খুলনায় অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ কনভেনশন সেন্টার নির্মাণ
‘খুলনায় অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ কনভেনশন সেন্টার নির্মাণ’ প্রকল্প পরিকল্পনাতেই ছিল ভুল। ফলে বাস্তবায়ন পর্যায়ে গিয়ে হোঁচট খেয়েছে। বারবার বদল করতে হয়েছে নকশা। এ কারণে বেড়েছে মেয়াদ ও ব্যয়। এছাড়া এতে মানা হয়নি ক্রয় পরিকল্পনাও। একই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পেয়েছে ৫টি প্যাকেজের কাজ। ফলে তা বাস্তবায়নে বিঘ্ন ঘটেছে। সেই সঙ্গে রয়েছে দুর্বল তদারকি। ঠিকমতো প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) এবং প্রজেক্ট স্টিয়ারিং কমিটির (পিএসসি) সভাও করা হয়নি। গত এপ্রিলে বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) তৈরি করা নিবিড় পরিবীক্ষণ সমীক্ষার খসড়া প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
আইএমইডির সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন রোববার বলেন, এটি পরিচালনার জন্য একটি নীতিমালার সুপারিশ দেওয়া হয়েছে। কেননা পাঁচতারকা মানের এ কনভেনশন সেন্টার কীভাবে পরিচালনা করা হবে, এর থেকে পাওয়া অর্থ কোথায় জমা হবে, সরকার কোনো অংশ পাবে কি না প্রভৃতি নানা বিষয় নীতিমালা চূড়ান্ত হলে স্পষ্ট হয়ে যাবে। এ বিষয়ে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না।
সূত্র জানায়, খুলনা শহরে অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ কনভেনশন সেন্টার নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছিল ১২৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা। এরপর প্রথম সংশোধনীর মাধ্যমে ১৭ কোটি ৩৭ লাখ টাকা বাড়িয়ে মোট ব্যয় করা হয় ১৪৬ কোটি ২৭ লাখ টাকা। পরবর্তী সময়ে দ্বিতীয় সংশোধনী প্রস্তাবে ব্যয় আরও ১৩ কোটি ৫ লাখ টাকা বাড়িয়ে মোট ১৫৯ কোটি ৩৩ লাখ টাকা করার কথা বলা হয়েছে। শুধু তাই নয়, মেয়াদও বেড়েছে কয়েক দফা। প্রকল্পের মূল অনুমোদিত মেয়াদ ছিল ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু প্রথম সংশোধনীর মাধ্যমে এক বছর বাড়িয়ে করা হয় ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। এভাবে আরও চার দফায় সময় বাড়িয়ে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। কিন্তু এতেও শেষ হয়নি কাজ। ফলে দ্বিতীয় সংশোধনীতে আবারও মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে।
আইএমডির খসড়া প্রতিবেদনে প্রকল্প এলাকা নির্বাচনের যৌক্তিকতা সম্পর্কে বলা হয়, সরকারি পরিত্যক্ত সম্পত্তি প্রতীকী মূল্যে অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। অর্থাৎ বর্তমানে এ সম্পত্তি একটি সমিতির আওতাভুক্ত। মূলত এ প্রকল্পের মাধ্যমে একটি অত্যাধুনিক হোটেল নির্মাণ করা হবে। ৬৬টি বেড রুম, একটি সেমিনার হল, দুটি কনফারেন্স হল, তিনটি সভাকক্ষ, সেমিনার গ্যালারি, স্পা সেন্টার, সুইমিংপুল, রেস্টুরেন্টসহ পাঁচতারকা মানের একটি হোটেলে যে সুবিধা থাকে-সবই এতে থাকবে। প্রকল্পের এক্সিট প্ল্যানে বলা হয়েছে, এর নির্মাণ শেষ হলে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন সেন্টারটি পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ করবে।
প্রকল্প পরিচালক আইএমইডিকে জানান, প্রকল্পের কাজ শেষ হলে তৃতীয় পক্ষকে ভাড়া বা লিজ দেওয়া হবে। এতে যা আয় হবে, তা অ্যাসোসিয়েশনের হিসাবে জমা হবে। এক্ষেত্রে সরকারি কোষাগারে কোনো অর্থ জমা হবে কি না, সে বিষয়ে আরডিপিপিতে (সংশোধিত প্রকল্প প্রস্তাব) স্পষ্ট করা হয়নি। তাই আইএমইডি মনে করে, সরকারি অর্থব্যয়ে বাস্তবায়িত প্রকল্প থেকে অর্জিত আয় সরকারি কোষাগারে জমার বিষয়টি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। আরও বলা হয়েছে, প্রকল্পটি গ্রহণের আগে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করা হলেও পাঁচতারকা হোটেল নির্মাণে কতটা সময় প্রয়োজন, তা সঠিকভাবে নির্ধারণ করা হয়নি। ফলে প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় চারবার বৃদ্ধি করতে হয়েছে।
আইএমইডি বলছে, প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আরডিপিপিতে উল্লিখিত ক্রয় পরিকল্পনা যথাযথভাবে অনুসরণ করা হয়নি। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন কাজ তদারকিতে ঘাটতি আছে। প্রকল্পের বাস্তবায়নকাল ৫ বছরের বেশি সময় পার হলেও এখন পর্যন্ত (প্রতিবেদন তৈরির সময়) কোনো অডিট করা হয়নি। প্রকল্পে ধীরগতির অন্যতম কারণ হিসাবে বলা হয়েছে, বারবার ড্রইং ও লেআউট প্ল্যান পরিবর্তন হওয়ায় দেরি হয়েছে। এছাড়া একই ঠিকাদার ৫টি প্যাকেজের কাজ পাওয়ায় তাদের কাজের অগ্রগতিও আশাব্যঞ্জক নয়। পাশাপাশি বৈশ্বিক মন্দায় ডলারের দাম বৃদ্ধির কারণে যন্ত্রপাতি সময়মতো প্রকল্প সাইটে পৌঁছাতে পারেনি। ফলে বারবার তাগাদা দিয়েও কাজ হয়নি। করোনা মহামারির কারণে ৫-৬ মাস কাজে গতি ছিল না। প্রকল্পের শুরুতেই প্রকল্প পরিচালক (পিডি) নিয়োগে প্রায় ৩ মাস সময় লেগেছে। এছাড়া পিডি পরিবর্তন না করার প্রজ্ঞাপন থাকলেও এ প্রকল্পে একজন পিডি পরিবর্তন করা হয়েছে। এরকম নানা অসংগতি উঠে এসেছে প্রতিবেদনে।