International

ইরানে আসন্ন নির্বাচনে তরুণদের কেউ ভোট দেবেন কেউ দেবেন না

পুলিশি হেফাজতে কুর্দি তরুণী মাসা আমিনির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ২০২২ সালে ইরানে সৃষ্ট বিক্ষোভে যোগ দিয়েছিলেন ২২ বছর বয়সী আতুসা। তবে ওই বিক্ষোভ দমনে যাঁরা কাজ করেছিলেন, তাঁদের একজন ছিলেন ২৬ বছর বয়সী রেজা। দুই বছর পর ইরানের এই দুই তরুণের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে মতবিরোধ রয়ে গেছে। এই বিভক্তির বিষয়টি ২৮ জুন ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফলকে রূপ দেবে।

হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির মৃত্যুর পর তাঁর উত্তরসূরি নির্বাচনে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে আগামী শুক্রবার। তবে ওই দিন ভোট দিতে যাবেন না আতুসা। কারণ, তিনি এ নির্বাচনকে পরিহাস বলে মনে করেন।

তবে ইরানের বাসিজ মিলিশিয়ার সদস্য রেজা ভোট দিতে যাবেন। কারণ, তিনি ভোট দেওয়াকে ধর্মীয় দায়িত্ব বলে মনে করেন।

এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ছয়জন প্রার্থী অংশ নিচ্ছেন। তাঁদের মধ্যে পাঁচজন রক্ষণশীল ও একজন মধ্যপন্থী। দেশটিতে নির্বাচন-সংক্রান্ত বিষয় দেখভালের দায়িত্বে থাকা গার্ডিয়ান কাউন্সিল তাদের অনুমোদন দিয়েছেন। তাঁরা হলেন পার্লামেন্টের স্পিকার মোহাম্মদ বাঘের গালিবাফ, পরমাণু কর্মসূচিবিষয়ক সাবেক মধ্যস্থতাকারী সাইদ জালিলি, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোস্তফা পোউর মোহাম্মাদী, তেহরানের মেয়র আলী রেজা জাকানি, বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট আমির হোসেইন গাজিজাদেহ হাশেমি ও পার্লামেন্ট সদস্য মাসুদ পেজেশকিয়ান। এই ছয়জনের মধ্যে মাসুদ পেজেশকিয়ান ছাড়া সবাই রক্ষণশীল বলয়ের।

প্রেসিডেন্ট প্রার্থীরা নির্বাচনে জয় পেতে প্রচার চালাচ্ছেন। তাঁদের লক্ষ্য হচ্ছে দেশটির ৩০ বছরের কম বয়সী সাড়ে আট কোটি নাগরিকের অত্যন্ত ৬০ শতাংশের কাছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে পৌঁছানো।

আতুসা বলেন, ‘ইরানের অন্য সব নির্বাচনের মতোই এবারের নির্বাচনও একটি তামাশা। আমি যখন এই শাসকদেরই পতন চাই, সেখানে আমি কেন ভোট দেব?’ আতুসা আরও বলেন, ‘নির্বাচন যদি অবাধ ও স্বচ্ছ হয় এবং সব প্রার্থীকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে দেওয়া হয়, তার পরও ইরানে প্রেসিডেন্টের কোনো ক্ষমতা নেই।’

কয়েক সপ্তাহ ধরে ইরানে এক্স প্ল্যাটফর্মে ‘ইলেকশন সার্কাস’ হ্যাশট্যাগ ব্যাপক ছড়িয়ে পড়েছে। দেশ ও দেশের বাইরের অনেকে এ হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে নির্বাচন বয়কট করার আহ্বান জানাচ্ছেন।

ইরানে ২০২২ সালের বিক্ষোভের সময় রেভল্যুশনারি গার্ডসের পাশাপাশি নিরাপত্তার দায়িত্বে সাদাপোশাকে থাকা একটি বাহিনীর সদস্যদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। এ বাহিনীর নাম ছিল বাসিজ। তারা ওই বিক্ষোভ দমনে শক্তি প্রয়োগ করেছিল। ওই বিক্ষোভে ৫০০ জনের বেশি মারা যান। ওই বিক্ষোভে যুক্ত থাকার অভিযোগে সাত জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে ইরান। তবে বিক্ষোভে কতজন নিহত হয়েছিল তার সঠিক সংখ্যা ইরানি কর্তৃপক্ষ জানায়নি। ওই সময় সৃষ্ট দাঙ্গায় নিরাপত্তা বাহিনীর ১২ জনের বেশি সদস্য নিহত হয়েছিলেন।

রেজা বলেন, তিনি রক্ষণশীল কোনো প্রার্থীকে সমর্থন দেবেন, যিনি ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির রক্ষণশীল অর্থনীতিকে সমর্থন করেন। রক্ষণশীল অর্থনীতি বলতে অর্থনৈতিক স্বয়ংসম্পূর্ণতা, আঞ্চলিক প্রতিবেশীদের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক জোরদার করা এবং চীন ও রাশিয়ার  সঙ্গে অর্থনৈতিক লেনদেন মজবুত করার বিষয়টিকে বুঝিয়েছেন তিনি।

অর্থনীতি অব্যবস্থাপনা, রাষ্ট্রীয় দুর্নীতি এবং ২০১৮ সালের পরে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞায় ইরানের অর্থনীতি নাজুক হয়ে পড়েছে। ছয় বিশ্বশক্তির সঙ্গে ২০১৫ সালে ইরানের পারমাণবিক চুক্তি বাতিল হয়েছে।

রেজা ও আতুসা দুজনের দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা হলেও ২০২২ সালের বিক্ষোভ নিয়ে দুজনেরই দুঃখ রয়েছে। রেজা ওই ঘটনার জন্য বিক্ষোভকারীদের দোষারোপ করে বলেন, এতে পশ্চিমা দেশগুলোর চাপ পড়েছে ইরানের ওপর। ইরানের পক্ষ থেকেও ওই বিক্ষোভের জন্য পশ্চিমা দেশগুলোর দিকে অভিযোগ করা হয়েছে। রেজা বলেন, ওই বিক্ষোভ যদি না হতে তবে ভালো হতো। আমাদের শত্রুরা ওই বিক্ষোভের কথা বলে আমাদের দেশের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে।

আতুসা আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি মনে করি, দেশে পরিবর্তন আসবে এবং আমরা মুক্ত দেশে স্বাধীনমতো জীবনযাপন করতে পারব। আমাদের এর জন্য অনেক মূল্য দিতে হয়েছে; কিন্তু এখনো শাসকেরা রয়ে গেছেন।’

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button