ভারতের ইতিহাসে প্রথম স্পিকার পদে নির্বাচন
ভারতের লোকসভায় এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত হতে চলেছে। ১৯৪৬ সালের পর এবারই প্রথমবার স্পিকার পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে সরকার ও বিরোধী দল। ফলে এবার স্পিকার নির্বাচন অন্যবারের চেয়ে কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে। ক্ষমতাসীন এনডিএ জোটের প্রধান অংশীদার বিজেপি এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। ফলে মঙ্গলবার স্পিকার পদে সরকার পক্ষের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেন বিজেপি সদস্য ওম বিড়লা। সপ্তদশ লোকসভায়ও তিনিই ছিলেন স্পিকার। বিজেপি চায় সেই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে। তার পাশাপাশি মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন কেরালা থেকে আটবার জয়ী কংগ্রেস সদস্য কে সুরেশ। প্রোটেম বা অস্থায়ী স্পিকার তাঁরই হওয়ার কথা ছিল। যদিও বিজেপি তাঁকে সেই দায়িত্ব না দিয়ে বেছে নেয় সাতবারের জয়ী ভর্তৃহরি মহতাবকে, যিনি এবার ভোটের আগে উড়িষ্যায় বিজু জনতা দল (বিজেডি) ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়ে জয়ী হন।
ভারতে স্পিকার পদে আজ পর্যন্ত কোনো দিন ভোটাভুটি হয়নি। স্বাধীনতার সময় থেকেই ভারতীয় সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভার স্পিকার সর্বসম্মতভাবে নির্বাচিত হয়ে আসছেন। মঙ্গলবারের মধ্যে সরকার ও বিরোধী পক্ষের মধ্যে সমঝোতা না হওয়ায় প্রথম স্পিকার নির্বাচিত হবেন ভোটাভুটির মাধ্যমে। লোকসভার পাটিগণিত বলছে, বুধবার স্থানীয় সময় বেলা ১১টায় স্পিকার পদে ভোটাভুটিতে তাঁর জয় নিশ্চিত। সে ক্ষেত্রে স্পিকার পদে পুনর্নির্বাচিত হয়ে প্রয়াত বলরাম ঝাখরের নজির স্পর্শ করবেন ওম বিড়লা। ঘটনাচক্রে, ওই পদে বসলে ঝাখরের মতোই ওমও হবেন রাজস্থান থেকে নির্বাচিত সাংসদ, যিনি দ্বিতীয়বার স্পিকার পদে আসীন হবেন।
স্পিকার পদে সহমতের চেষ্টায় বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব দায়িত্ব দিয়েছিল প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং ও সংসদীয় মন্ত্রী কিরেন রিজিজুকে। তারা সোমবার কথা বলেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গের সঙ্গে। কংগ্রেস সভাপতি তাদের জানান, বিজেপি মনোনীত প্রার্থীকে মেনে নিতে তাদের আপত্তি নেই, যদি সংসদীয় রীতি মেনে ডেপুটি স্পিকারের পদটি বিরোধীদের ছাড়া হয়। খাড়গে তাদের বলেছিলেন, ‘ইন্ডিয়া’র সব শরিক দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে তিনি সিদ্ধান্তের কথা জানাবেন। খাড়গে অখিলেশ যাদব, এম কে স্ট্যালিন ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলেন। প্রত্যেকেই বলেন, ডেপুটি স্পিকার পদ পেলে স্পিকার পদে বিজেপি প্রার্থীকে সমর্থন জানাবেন। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীও ওই এক শর্ত দেন। কিন্তু তার পর রাজনাথ সিং আর খাড়গের সঙ্গে কথা বলেননি বলে রাহুল জানান। গতকাল ওম বিড়লা এনডিএর হয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেন। প্রায় একই সঙ্গে জমা পড়ে বিরোধী প্রার্থী হিসেবে সুরেশের মনোনয়নপত্রও।
এদিকে স্পিকার নির্বাচন নিয়ে কংগ্রেস যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা তাদের একার সিদ্ধান্ত। এ ব্যাপারে তৃণমূলের সঙ্গে তারা কোনো রকম আলোচনা করেনি বলে জানিয়ে দিলেন তৃণমূল সাংসদ তথা দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
মঙ্গলবার লোকসভা স্পিকার মনোনয়ন নিয়ে যখন রাজধানী দিল্লি সরগরম, তখনই সংসদ চত্বরে দাঁড়িয়ে অভিষেক বলেন, কংগ্রেসের তরফে সাংসদ কে সুরেশকে স্পিকার পদের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে, বিরোধী জোটের সব শরিকদের সঙ্গে কথা না বলেই। এ ব্যাপারে আমাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়নি। দুর্ভাগ্যজনক। কিন্তু বলতে বাধ্য হচ্ছি, এই সিদ্ধান্ত একতরফাভাবে নেওয়া হয়েছে। যদিও এই কথা বলার কিছু পরেই অভিষেককে দেখা যায় সংসদের ভেতরে রাহুল গান্ধীর সঙ্গে একান্তে কথা বলতে।