যে কারণে বলিভিয়ায় অভ্যুত্থানচেষ্টা
বলিভিয়ায় একটি অভ্যুত্থানচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। দেশটির সেনাবাহিনীর ওপর নিজের নিয়ন্ত্রণ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছেন প্রেসিডেন্ট লুইস আর্সে।
স্থানীয় সময় গতকাল বুধবার বিকেলে দেশটির সেনাবাহিনীর জেনারেল হুয়ান হোসে জুনিগার নেতৃত্বে এই অভ্যুত্থানচেষ্টা হয়। হুয়ানসহ অভ্যুত্থানচেষ্টায় জড়িত সেনারা দেশটির রাজধানী লা পাজের প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে হানা দেন। তাঁরা প্রাসাদের বাইরের চত্বরে অবস্থান নেন।
স্থানীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, একটি ট্যাংক প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের ফটক ভেঙে ফেলে। তবে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে জেনারেল হুয়ান তাঁর অনুগত সেনাদের অভ্যুত্থান থেকে সরে আসার আদেশ দেন।
অবশ্য হুয়ানের এমন আদেশের আগে বিশ্বনেতারা বলিভিয়ায় সেনাবাহিনীর অভ্যুত্থানচেষ্টাকে বেআইনি বলে বর্ণনা করেন। অভ্যুত্থানচেষ্টার তীব্র নিন্দা জানান। বলিভিয়ার লুইস সরকারের প্রতি সমর্থন জানান।
অভ্যুত্থানচেষ্টা থেকে সেনাদের সরে যাওয়ার ঘটনাকে স্বাগত জানান প্রেসিডেন্ট লুইস। তিনি একে বলিভিয়ার গণতন্ত্রের বিজয় হিসেবে অভিহিত করেন।
পরবর্তীতে প্রেসিডেন্ট লুইস দেশবাসীর উদ্দেশে ভাষণ দেন। তিনি বলিভিয়ার জনগণকেও অভিনন্দন জানান। কেননা, এই অভ্যুত্থানচেষ্টার প্রতিবাদে কিছু জনতা রাজপথে নেমে এসেছিল।
প্রেসিডেন্ট লুইস বলেন, বলিভিয়ার জনগণকে অনেক ধন্যবাদ। গণতন্ত্র দীর্ঘজীবী হোক।
অভ্যুত্থানচেষ্টার ঘটনা নিয়ে বলিভিয়ার টেলিভিশনে নাটকীয় ফুটেজে দেখা গেছে। এতে দেখা যায়, প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে জেনারেল হুয়ানসহ একদল সেনার মুখোমুখি অবস্থানে লুইস।
হুয়ানকে উদ্দেশ করে লুইসকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি তোমার সর্বাধিনায়ক। আমি তোমাকে তোমার সেনাদের প্রত্যাহারের আদেশ দিচ্ছি। আমি এই অবাধ্যতাকে মেনে নেব না।’
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্যর্থ অভ্যুত্থানচেষ্টার জেরে হুয়ানকে ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
কেন অভ্যুত্থানচেষ্টা
২০২০ সালে বলিভিয়ার প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেন লুইস। প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে তাঁর নেতৃত্বাধীন সরকার নানা সমস্যা-প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। বাম ও ডান উভয় পক্ষের চাপ তাঁর সরকারকে মোকাবিলা করতে হচ্ছে।
লুইস সরকারের নানা সিদ্ধান্তের জেরে সান্তা ক্রুজের মতো প্রদেশে সহিংস ধর্মঘট হয়। এতে নেতৃত্ব দেয় ডানপন্থী শক্তিগুলো। ডানপন্থী শক্তিগুলোর ধারণা, তাদের ক্ষমতা থেকে দূরে রাখার জন্যই লুইস সরকার নানান পদক্ষেপ নিচ্ছে।
গত বছর দেশটির সুপরিচিত ডানপন্থী বিরোধী নেতা লুইস ফার্নান্দো কামাচোকে গ্রেপ্তার করা হয়।
অন্যদিকে বামপন্থীদের দিক দিয়ে, বিশেষ করে সাবেক প্রেসিডেন্ট ইভো মোরালেসের কাছ থেকে চাপের মুখোমুখি লুইস। তাঁর সাবেক রাজনৈতিক গুরু মোরালেস। তিনি ২০২৫ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়াইয়ের আগ্রহের কথা ইতিমধ্যে ঘোষণা করেছেন।
বলিভিয়ায় রাজনৈতিক অস্থিরতা তো আছেই, সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দেশব্যাপী জ্বালানি ঘাটতি। আছে আর্থিক সংকট।
পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে আল-জাজিরার সংবাদদাতা জন হলম্যান বলেন, দেশটির প্রেসিডেন্ট লুইস বেশ কিছুটা সমস্যার মধ্যে আছেন। তাঁর জনপ্রিয়তা কমেছে। সবশেষ গত মার্চে তাঁর জনপ্রিয়তা ছিল ৩৮ শতাংশ। দেশটির অর্থনীতি মোটেও ভালো যাচ্ছে না। পাশাপাশি লুইস দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট মোরালেসের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়েছেন। ফলে সব মিলিয়ে প্রেসিডেন্ট লুইস এখন একটি কঠিন সময় পার করছেন।
বলিভিয়ার সেনাবাহিনীর ‘কমান্ডিং জেনারেল’ (সেনাপ্রধান) হিসেবে হুয়ানকে খোদ প্রেসিডেন্ট লুইসই বাছাই করেছিলেন।
তবে গতকাল হুয়ান প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে হানা দেওয়ার কারণ হিসেবে বলিভিয়ায় বিরাজমান অস্থিরতাকে ‘অজুহাত’ হিসেবে উল্লেখ করেন।
একটি স্থানীয় টেলিভিশনকে হুয়ান বলেন, বলিভিয়ার সশস্ত্র বাহিনীর তিন প্রধান নিজেদের হতাশা প্রকাশ করতে সেখানে গেছেন। নতুন একটি মন্ত্রিসভা হবে। অবশ্যই দেশের পরিস্থিতির পরিবর্তন হবে। দেশ এভাবে চলতে পারে না।
হুয়ান বলেন, ‘ধ্বংস বন্ধ করুন। আমাদের দেশকে দরিদ্র বানানো বন্ধ করুন। আমাদের সেনাবাহিনীকে অপমান করা বন্ধ করুন।’
হুয়ান আরও বলেন, তিনি প্রেসিডেন্ট লুইসকে আপাতত ‘কমান্ডার-ইন-চিফ’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে যাবেন।
হুয়ান তাঁর কর্মকাণ্ডের ব্যাখ্যায় বলেন, এর লক্ষ্য হলো বলিভিয়ার গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার। রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্ত করা।
স্থানীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়, লুইস সম্প্রতি হুয়ানকে তাঁর দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেন। এই পদক্ষেপ দুজনের মধ্যকার উত্তেজনাকে বাড়িয়ে দেয়।