Jannah Theme License is not validated, Go to the theme options page to validate the license, You need a single license for each domain name.
Bangladesh

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে উত্তাল বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়: কোটা পদ্ধতি বাতিলের দাবি

প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটাসহ ৫৬ শতাংশ কোটা সংক্রান্ত আদালতের রায় প্রত্যাহার করে ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। লাগাতার আন্দোলনের দ্বিতীয় দিনে গতকাল কয়েক হাজার শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক, নীলক্ষেত, নিউমার্কেট, সায়েন্স ল্যাব, বাটা সিগন্যাল হয়ে শাহবাগ পর্যন্ত বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হয়। একই কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। আর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা পুরান ঢাকা, বাহদুর শাহ পার্ক এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেন। এসময় তারা অবিলম্বে কোটা পদ্ধতি বাতিলের দাবি জানান অন্যত্থায় ৪ জুলাই থেকে সারাদেশ অচল করে দেয়ার হুঁশিয়ারি দেন।

গতকাল বেলা আড়াইটা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে কোটাবিরোধী শিক্ষার্থীরা। হাজার হাজার শিক্ষার্থীদের স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয় পুরো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। এসময় শিক্ষার্থীরা ‘সংবিধানের/মুক্তিযুদ্ধের মূলকথা, সুযোগের সমতা’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে’, ‘আঠারোর হাতিয়ার, গর্জে উঠুর আরেকবার”, ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে’, ‘লেগেছে রে লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছে’, “কোটা প্রথা, বাতিল চাই বাতিল চাই’, ‘কোটা প্রথার বিরুদ্ধে, ডাইরেক্ট একশন’, ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’, ‘আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম’, ‘মুক্তিযুদ্ধের বাংলায়, বৈষম্যের ঠাই নাই’’- ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।

গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিতে কেউ মাথায় ছাতা নিয়ে, কেউ বা বৃষ্টিতে ভিজে জাতীয় পতাকা উড়াতে উড়াতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি থেকে এক বিরাট বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বিভিন্ন হলের সামনে দিয়ে নীলক্ষেত, সায়েন্স ল্যাব ও বাটা সিগন্যাল মোড় ঘুরে শাহবাগ মোড়ে গিয়ে থামে শিক্ষার্থীরা। এরপর ঘন্টা খানেক সেখানে অবস্থান করে বিকাল পৌনে পাঁচটার দিকে শাহবাগ মোড় ত্যাগ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন তারা। শাহবাগ মোড় অবরোধের সময় বিপুল সংখ্যক পুলিশের উপস্থিতি দেখা যায় এবং তারা শিক্ষার্থীদের গতিরোধ করার চেষ্টা করে। পুলিশের উদ্দেশ্যে শিক্ষার্থীরা ভূয়া ভূয়া স্লোগান দেওয়ার পর তারা সরে দাঁড়ায়। এসময় আন্দোলনের পরবর্তী কর্মসূচির ঘোষণা করে ‹বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের› সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, দাবি আদায়ে বুধবার বেলা আড়াইটায় তাঁরা আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারের সামনে অবস্থান নেবেন। দেশের সব কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একই ব্যানারে একই সময়ে কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানান তিনি।

নাহিদ ইসলাম বলেন, এটা শুধু শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীদের আন্দোলন নয়। এটা একটা রাষ্ট্রের বিষয়। মুক্তিযোদ্ধা কোটা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এক জিনিস নয়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কোনো বংশগত পরম্পরার বিষয় নয়, এটা একটা রাষ্ট্রীয় আদর্শ। এই আদর্শকে আমরা তরুণেরা ধারণ করি। সে জন্যই আমরা বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলেছি।

ঢাবির সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুল কাদির বলেন, আমাদের এ আন্দোলন আগামী ৪ জুলাই সুপ্রিম কোর্টে সুনানি না হওয়া পর্যন্ত চলবে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে আন্দোলন চালিয়ে যাবে। রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আবু মুসা বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এ বৈষম্য স্বাধীনতা পূর্বের শোষণ-নিপীড়নের কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়। এভাবে একটি রাষ্ট্রকে মেধা থেকে বঞ্চিত করা উন্নয়ন ও সুশাসনের পথে বড় বাধা সৃষ্টি করবে।

আন্দোলনে অংশ নেওয়া আরবি বিভাগের শিক্ষার্থী জুনায়েদ বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে সরকারি চাকরি করব না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কিন্তু শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনে না এসে পারিনি। কারণ এই দাবি তো সর্বজনীন, এই দাবি অধিকার আদায়ের দাবি, এই দাবি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার দাবি। সুতরাং আমিও চাই শিক্ষার্থীদের এই দাবি পূরণ হোক। শিক্ষার্থীরা তো ক্লাসে থাকার কথা, লাইব্রেরিতে থাকার কথা। কিন্তু কেন আমাদেরকে আজ রাস্তায় নামতে হলো? এই শুভবুদ্ধি যেন শিগগিরই সরকারের মাথায় উদিত হয় সেই প্রত্যাশাই করছি।

কোটা বিরোধী এ আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক আব্দুল হান্নান মাসুদ ইনকিলাবকে বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে আল্টিমেটাম দিয়েছিলাম ৩০ জুনের মধ্যে অবশ্যই সরকারকে হাইকোর্ট থেকে ‹১৮ এর পরিপত্র বাতিল করা রায়ের স্থগিতাদেশ আনতে হবে এবং সকল ধরণের বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে শুধুমাত্র পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনায় রেখে কোটাকে সিঙ্গেল ডিজিটে নিয়ে আসতে হবে। কিন্তু সরকার আমাদের দাবি আমলে নেয়নি। যার কারণে সারাদেশের শিক্ষার্থীদের নিয়ে আমরা সোমবার থেকে সর্বাত্মক আন্দোলনে নেমেছি। যতদিন আমাদের দাবি আদায় না হবে, আমরা রাজপথ ছাড়বো না, শ্রেণিকক্ষে ফিরবো না। প্রয়োজনে এদেশের শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়ে সারাদেশ অচল করে দিবো। সরকারকে যেকোন উপায়ে আমরা বাধ্য করবো, দাবিতে কোন আপোষ হবে না।

অর্থমন্ত্রণালয়ের সর্বজনীন পেনশন সংক্রান্ত প্রত্যয় স্কিম নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের চলমান আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে মাসুদ বলেন, পাশাপাশি আমরা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের আন্দোলনে সমর্থন জানাচ্ছি এবং দাবি জানাচ্ছি আগামীকাল সকালের মধ্যে দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরী ও মেডিকেল সার্ভিস সচল করতে হবে। না হয় তা সচল করার দায়িত্ব শিক্ষার্থীরা নিজ হাতে তুলে নিতে বাধ্য হবে।

ঢাকা-আরিচা অবরোধের ঘোষণা: সরকারি চাকরিতে কোটাপদ্ধতি বাতিল, মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখাসহ চার দফা দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সমাবেশে বুধবার দুপুর তিনটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত দুই ঘণ্টা ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধের ঘোষণা দেন তারা। এর আগে গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে একটি মিছিল বের হয়। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মুরাদ চত্ত্বর,পুরাতন প্রশাসনিক ভবন,পরিবহণ চত্বর, চৌরঙ্গী, ছাত্রী হল সড়ক হয়ে প্রধান ফটকের সামনে এসে শেষ হয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক সংলগ্ন ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক বিশ মিনিট প্রতীকী অবরোধ করে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের উভয় লেনে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।

শিক্ষার্থীদের অন্য দাবিগুলো হলো- ২০১৮ সালের পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরিতে (সব গ্রেডে) অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দিতে হবে এবং সংবিধান অনুযায়ী কেবল অনগ্রসর ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করা যেতে পারে; সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে না।কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্য পদগুলোয় মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দিতে হবে; এ ছাড়া দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।

সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৯ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী তৌহিদ সিয়াম বলেন, আগামী ৪ জুলাই কোটা নিয়ে আপিল বিভাগের শুনানি হবে। তাই এই আন্দোলন বেগবান করতে বুধবার বিকেলে দুই ঘণ্টা ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা পেনশন স্কিম নিয়ে আন্দোলন করছেন। তাদের আন্দোলনে আমাদের মৌন সমর্থন রয়েছে। কিন্তু তাই বলে যদি তারা লাইব্রেরি বন্ধ করে, হল বন্ধ করার পাঁয়তারা করে তাহলে প্রশাসনকে ছাড় দেওয়া হবে না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মাহফুজুল ইসলাম মেঘ বলেন, আমরা স্বাধীনতার ৫০ বছর পরেও এসে দেখছি সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা বিদ্যমান। এই বৈষম্যের জন্য কি আমরা ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করোছিলাম? আমাদের বীর মুক্তিযুদ্ধারা কি এই বৈষম্যের জন্য যুদ্ধ করেছিলেন? আমরা আবারও যুদ্ধে নেমেছি এই বৈষম্য দূর করার জন্য। আগামী ৪ জুলাই যদি সরকার আমাদের দাবি মেনে না নেয় তাহলে সারাদেশ অচল করে দেওয়া হবে। আমরা কর্তৃপক্ষকে বলতে চাই, আপনারা সর্বসাধারণের রায় মেনে নিয়ে এ বৈষম্য দূর করুন। আর যদি এই বৈষম্য জারি রাখেন তাহলে বাংলার অদম্য সেনারা তাদের আন্দোলন অব্যাহত রাখবে।

দাবি না মানলে টানা আন্দোলনের হুশিয়ারী শিক্ষার্থীদের: চলমান কোটা বাতিলের দাবিতে ছাত্র সমাবেশ করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। কোটা বাতিলের টানা আন্দোলনের হুশিয়ারী দেন প্রতিনিধিরা। গতকাল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে এ ছাত্র সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। পরে ক্যাম্পাসে প্রদক্ষিণ করে মিছিলটি রায়সাহেব মোড় হয়ে বাহাদুর শাহ পার্ক প্রদক্ষিণ করে ক্যাম্পাসে অবস্থান করেন। সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বলেন, একটি স্বাধীন দেশে এই কোটা প্রথা একটি অযৌক্তিক। হাজার হাজার শিক্ষার্থীর পরিশ্রম ও মেধাকে অবমাননা করা হচ্ছে। এই মূহুর্তে লাইব্রেরি ছেড়ে আমরা পথে নেমেছি। আমাদের দাবীগুলো মানতে হবে।

এর আগে শিক্ষার্থীরা চার দফা দাবি পেশ করেন। ১. ২০১৮ সালে ঘোষিত সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখতে হবে। ২. ‘১৮-এর পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরিতে (সকল গ্রেডে) অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দিতে হবে এবং কোটাকে ন্যূনতম পর্যায়ে নিয়ে আসতে হবে। সেক্ষেত্রে সংবিধান অনুযায়ী কেবল অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করা যেতে পারে। ৩. সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে না এবং কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্য পদগুলোতে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দিতে হবে। ৪. দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। এসময় শিক্ষার্থীরা ‘চাকরিতে কোটা, মানি না, মানবো না’, শেখ হাসিনার বাংলায়/শেখ মুজিবের বাংলায়, কোটার ঠাঁই নাই’, মুক্তিযুদ্ধের বাংলায়, কোটার ঠাঁই নাই’, ‹সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথা কবর দে›, ‹কোটা পদ্ধতি নিপাত যাক, মেধাবীরা মুক্তি পাক’ সহ নানা স্লোগান দেন।

উল্লেখ্য, ২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা প্রচলিত ছিল। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা, ১০ শতাংশ নারী কোটা, অনগ্রসর জেলার বাসিন্দাদের জন্য ১০ শতাংশ কোটা, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের জন্য ৫ শতাংশ আর প্রতিবন্ধীদের জন্য ১ শতাংশ আসন সংরক্ষিত ছিল। ওই বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোটা সংস্কারের দাবিতে বড় বিক্ষোভ হয়। কোটাব্যবস্থার সংস্কার করে ৫৬ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবি জানিয়েছিলেন আন্দোলনকারীরা। পরে সে বছরের ৪ অক্টোবর কোটা বাতিলবিষয়ক পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এর মাধ্যমে ৪৬ বছর ধরে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে যে কোটাব্যবস্থা ছিল, তা বাতিল হয়ে যায়। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

পরবর্তীতে ২০২১ সালে ২০১৮ সালের সেই পরিপত্রের মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের অংশটিকে চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে রিট করেন কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। সেই রিটের প্রেক্ষিতে গত ৫ জুন পরিপত্রের ওই অংশ অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেয় আদালত। এর পর থেকেই চাকরিপ্রত্যাশী শিক্ষার্থীরা মাঠে নেমেছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’র ব্যানারে ঐক্যবদ্ধ এসব শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা ২০১৮ সালের সেই পরিপত্র পুনর্বহালের পাশাপাশি আরও কিছু দাবি জানাচ্ছেন। এগুলো হলো পরবর্তী সময়ে সরকার কোটাব্যবস্থা নিয়ে কোনো পদক্ষেপ নিতে চাইলে ২০১৮ সালের পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরিতে সব গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দেওয়া, সংবিধান অনুযায়ী অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করা, চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটাসুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করার সুযোগ বন্ধ করা, কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্য পদগুলোতে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দেওয়া এবং দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া।

চবি সংবাদদাতা জানান, বৃষ্টিতে ভিজে টানা দ্বিতীয় দিনের মতো কোটা পুনর্বহালে হাইকোর্টের রায়ের বিপক্ষে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ এর ব্যানারে মিছিল করেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষার্থীরা। গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১১টায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার থেকে চাকসু, কলা ভবন, প্রশাসনিক ভবন ও জিরো পয়েন্ট হয়ে চবি স্টেশন মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা।

মিছিলে শিক্ষার্থীদের “জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্র সমাজ জেগেছে”, “সারা বাংলা খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে”, “মেধা না কোটা? মেধা, মেধা”, “আমার সোনার বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নাই”, “মেধাবীদের কান্না, আর না, আর না”, “আঠারোর হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেক বার” প্রভৃতি সেøাগান দিতে দেখা যায়।

এর আগে শিক্ষার্থীরা চবি শহিদ মিনার প্রাঙ্গণে অবস্থান নেয়। এসময় চবি ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আব্দুর রহমান বলেন, আমরা কোনোভাবেই মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী না। মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের মাথার মুকুট। তবে তাদের যুদ্ধ তো ছিলো বৈষম্যের বিরুদ্ধে। একজন মুক্তিযোদ্ধা ২০ হাজার টাকা মাসিক ভাতা পায়। তাঁর পরিবারের চিকিৎসা খরচ ফ্রি তারা কোনো দিক দিয়ে পিছিয়ে নেই। দরিদ্রপীড়িত এই দেশে আজকে কয়টা পরিবারের মাসিক ইনকাম ২০ হাজার টাকা আছে? তাই, এখানে কোটা প্রথা মানে তেলা মাথায় তেল দেওয়া। আমরা চাই দেশের কৃষক, শ্রমিক, মজদুরের পরিবার থেকেও মেধাবী ছাত্ররা চাকুরী পাক। তাই, আমরা কোটা প্রথার অবসান চাই।”

সমাবেশে নাট্যকলা বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী খান তালাত মাহমুদ রাফি বলেন, চোখের পানিতে ভেজার চেয়ে বৃষ্টির পানিতে ভেজা ভালো। আমার চেয়ে কম মেধাবী কেউ কোটার কারণে চাকরি পাবে, গরিবের এই দেশে এমন বৈষম্য মেনে নেয়ার মতো না।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
bacan4d
bacantoto4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d toto
slot toto
bacan4d
bacan4d
togel online
Toto Slot
saraslot88
Bacan4d Login
bacantoto
Bacan4d Login
bacan4d
bacan4drtp
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot maxwin
slot bacan4d
slot maxwin
bacan4d togel
bacan4d login
bacan4d login
bacan4d login
bacantoto 4d
slot gacor
bacansport
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot77 gacor
JAVHD
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacan4d
bacan4d
bacansport
bacansport
gacor slot
slot gacor777
slot gacor bacan4d
bacan4d
bacansport
toto gacor
bacan4d
bacansports login
slot maxwin
slot dana
slot gacor
slot dana
slot gacor
bacansports
bacansport
bacansport
bacansport
bawan4d
bacansports
bacansport
slot gacor
judi bola
slot maxwin
slot maxwin
bacansport
bacan4d
bacansport
slot gacor
slot demo
slot gacor
slot gacor
slot gacor
toto slot
slot gacor
demo slot gacor
slot maxwin
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacansport
slot gacor
slot toto