নতুন শিক্ষাক্রমের মূল্যায়ন পদ্ধতি চূড়ান্ত
পাঁচ ঘণ্টাব্যাপী মাধ্যমিকে ষাণ্মাসিক পরীক্ষা আজ শুরু
বছরের মাঝামাঝি সময়ে এসে চূড়ান্ত হলো নতুন শিক্ষাক্রমের মূল্যায়ন পদ্ধতি। যদিও এটি প্রকাশ হতে আরও সময় লাগবে। গত সোমবার শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন পদ্ধতির খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম সমন্বয় কমিটি (এনসিসিসি)। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এনসিসিসির বৈঠকে ছোট-খাটো কিছু পরিবর্তন আনা হয়। এই পরিবর্তনগুলো সংযোজন করে এনসিটিবি ওয়েবসাইটে প্রকাশ করবে। এতে আরও কয়েক দিন সময় লাগবে বলে এনসিটিবিরি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
চূড়ান্ত অনুমোদনের ফলে নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষার সামষ্টিক মূল্যায়নের লিখিত অংশের ওয়েটেজ ৬৫ শতাংশ। আর কার্যক্রম ভিত্তিক অংশের ওয়েটেজ ৩৫ শতাংশ। আর মূল্যায়নের ক্ষেত্রে কার্যক্রম বলতে সহজে বললে হাতে-কলমে কাজ। কার্যক্রমভিত্তিকের মধ্যে থাকবে অ্যাসাইনমেন্ট, উপস্থাপন, অনুসন্ধান, প্রদর্শন, সমস্যার সমাধান করা, পরিকল্পনা প্রণয়ন ইত্যাদি। এছাড়া এই বিষয়ের সঙ্গে মিল রেখে লিখিত অংশের মূল্যায়ন হবে।
এসএসসি পরীক্ষা হবে পাঁচ ঘণ্টায়। তবে এ বিষয়টি নিয়ে সভায় উপস্থিত অনেক কর্মকর্তাও আপত্তি জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, পাঁচ ঘণ্টায় পরীক্ষা হলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভীতি তৈরি হতে পারে। একজন শিক্ষার্থী স্কুলে যতক্ষণ থাকে, ঠিক ততটুকু সময়ের মধ্যেই পরীক্ষা শেষ করতে হবে। এ বিষয়টিতে সংশোধন আসতে পারে।
চূড়ান্ত অনুমোদনের ফলে, কোনো শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় এক বা দুই বিষয়ে অনুত্তীর্ণ হলে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির সুযোগ পাবে। তবে তাকে পরবর্তী দুই বছরের মধ্যে এসএসসি পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ করা বিষয়ে পাশ করতে হবে। আর তিন বা বেশি বিষয়ে অনুত্তীর্ণ হলে একাদশ শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হওয়া যাবে না। নতুন শিক্ষাক্রমে এসএসসির আগে কোনো টেস্ট বা নির্বাচনি পরীক্ষা হবে না। দশম শ্রেণিতে ৭০ শতাংশ উপস্থিত থাকলেই এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে।
নতুন শিক্ষাক্রমে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ বা অন্য কোনো গ্রেডিং থাকবে না। এমনকি ‘ত্রিভুজ’, ‘বৃত্ত’ বা ‘চতুর্ভুজ’ দিয়েও মূল্যায়ন করা হবে না। শুধু বিষয়ভিত্তিক পারফরম্যান্স ইনডিকেটর দেওয়া হবে। আর প্রত্যেক বিষয় মূল্যায়নে সাতটি পর্যায় বা স্কেল দেওয়া হবে। এই পর্যায়গুলো ইংরেজি বর্ণ দিয়ে বোঝানো হবে।
মাদ্রাসায় নতুন শিক্ষাক্রম চূড়ান্ত না হওয়ায় দাখিল পরীক্ষা আগের নিয়মেই হবে। তবে বিশেষায়িত বিষয়গুলো বাদে বাকি বিষয়গুলোর মূল্যায়ন শুধু দশম শ্রেণির পাঠ্যসূচির ভিত্তিতে হবে। বর্তমানে যা নবম ও দশম শ্রেণির পাঠ্যসূচির ভিত্তিতে হয়। এখন নবম শ্রেণির পাঠ্যসূচি মাদ্রাসা পর্যায়েই মূল্যায়ন করা হবে।
অন্যদিকে নতুন কারিকুলামের আলোকে প্রথমবারের মতো পাঁচ ঘণ্টাব্যাপী ষাণ্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়ন শুরু হচ্ছে আজ। যদিও এই মূল্যায়ন নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা এখনো ধোঁয়াশার মধ্যে রয়েছে। নতুন মূল্যায়ন পদ্ধতি চলতি গত সোমবার চূড়ান্ত হলেও এখনো প্রকাশ করতে পারেনি জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। কীভাবে এই মূল্যায়ন নেওয়া হবে তা বিভিন্ন সময় পৃথক পৃথকভাবে সরবরাহ করা হয়েছে। আজ ষষ্ঠ শ্রেণির বাংলা, সপ্তম ধর্ম, অষ্টমে জীবন ও জীবিকা এবং নবম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ে মূল্যায়ন অনুষ্ঠিত হবে।
এই পরীক্ষার জন্য প্রশ্নপত্র নৈপুণ্য অ্যাপস-এ দেওয়া হয়েছে। যেটি শুধুমাত্র প্রধান শিক্ষক ডাউনলোড করার সুযোগ ছিল। গতকাল প্রধান শিক্ষকরা এই প্রশ্নপত্র প্রিন্ট করেছেন। তারা প্রশ্ন করছেন, বাংলাদেশের সব প্রতিষ্ঠানে কি এভাবে এতসংখ্যক প্রশ্ন প্রিন্ট করার সুযোগ আছে? বিশেষ করে গ্রামে বর্তমান বিদ্যুৎ সংকটের সময় প্রশ্নপত্র প্রিন্ট ও ফটোকপি করে মূল্যায়ন পরীক্ষা নেওয়া কীভাবে সম্ভব হবে।
গত শিক্ষাবর্ষে প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম শুরু হয়। চলতি শিক্ষাবর্ষে দ্বিতীয়, তৃতীয়, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতেও চালু হয় এ শিক্ষাক্রম। নতুন শিক্ষাক্রম ২০২৭ সালে দ্বাদশ শ্রেণিতে চালু হবে ।
বর্তমানে যেসব শিক্ষার্থী নবম শ্রেণিতে পড়ছে, তারাই প্রথমবারের মতো নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেবে।