রাষ্ট্রদ্রোহ আইন বদলাতে ভারতে নতুন বিল
অবশেষে দেশদ্রোহ বা রাষ্ট্রদ্রোহ আইন বাতিল হতে চলেছে। ব্রিটিশ আমলে তৈরি ১৮৬০ সালের ওই আইন বদলে নতুন আইন আসছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ আজ শুক্রবার লোকসভায় এ-সংক্রান্ত নতুন বিল পেশ করেছেন।
পার্লামেন্টে অমিত শাহ বলেন, প্রস্তাবিত নতুন আইনে গণপিটুনিতে হত্যা বন্ধে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। দলবদ্ধ ধর্ষণ ও নাবালিকা ধর্ষণের মতো অপরাধ রুখতে ২০ বছর, যাবজ্জীবন কারাবাস এমনকি মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। নতুন এসব বিল আরও যাচাই-বাছাইয়ের জন্য সংসদীয় স্থায়ী কমিটির কাছে পাঠানো হয়েছে।
এই বিলের মধ্য দিয়েই বদলে দেওয়া হচ্ছে ব্রিটিশ আমলে তৈরি ভারতীয় দণ্ডবিধির নাম। নতুন বিলের নাম হবে ‘ভারতীয় ন্যায় সংহিতা’। ভারতীয় ফৌজদারি বিচারবিধি বদলে করা হয়েছে ‘ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা’। ভারতীয় ‘এভিডেন্স অ্যাক্ট’ বদলে করা হচ্ছে ‘ভারতীয় সাক্ষ্য আইন’। স্থায়ী কমিটি তিনটি বিল পর্যালোচনার পর প্রয়োজনীয় অদল-বদল ঘটালে তা নতুনভাবে লোকসভায় পেশ করা হবে।
অমিত শাহ বলেন, ব্রিটিশ সরকারের মূল লক্ষ্য ছিল অপরাধীদের শাস্তি দেওয়া, ন্যায়বিচার নয়। এই তিন বিলের লক্ষ্য নাগরিকদের অধিকার রক্ষার মাধ্যমে ন্যায়বিচার সুনিশ্চিত করা।
রাষ্ট্রদ্রোহ আইন বাতিল করার কথা অনেক দিন ধরেই চলছে। ২০২২ সালের মে মাসে সুপ্রিম কোর্ট ওই আইন ও ধারা বাতিলের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। সরকারকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, নতুন আইন তৈরি না হওয়া পর্যন্ত ১২৪(ক) ধারায় কাউকে যেন গ্রেপ্তার করা না হয়। সরকার সেই নির্দেশ পালন করার কথাও জানিয়েছিল। সেই অনুযায়ী নতুন বিলে দেশদ্রোহ বা ইংরেজি ‘সিডিশন’ শব্দটাই রাখা হয়নি। নতুন বিলের ১৫০ নম্বর ধারায় বিচার করা হবে দেশের অখণ্ডতা, সংহতি ও সার্বভৌমত্বের পক্ষে বিপজ্জনক অভিযোগগুলোর।
প্রস্তাবিত আইনে রাষ্ট্রদ্রোহের নতুন সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, দেশের সার্বভৌমত্ব, অখণ্ডতা ও সংহতি নষ্ট করার মতো কোনো কাজ সজ্ঞানে অথবা অজ্ঞানে কেউ করলে, কিংবা সেই বিষয়ে লিখিতভাবে, মুখের কথায়, অঙ্গভঙ্গি করে অথবা ইলেকট্রনিক বার্তা মারফত কিছু বললে অথবা টাকাকড়ি খরচ করে বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তিকে প্ররোচিত করলে তার শাস্তি হবে সাত বছর থেকে যাবজ্জীবন কারাবাস, জরিমানা কিংবা উভয় দণ্ড।
দেশদ্রোহ বা রাষ্ট্রদ্রোহ শব্দ উচ্চারণ না করে এ ধরনের অপরাধের পরিধি হিসেবে প্রস্তাবিত বিলে যা লেখা হয়েছে তার ব্যাপকতা স্থায়ী কমিটি কতটা নির্ধারণ করবে, সে বিষয়ে কৌতূহল থাকবে। কারণ, ইউএপিএ বা এনআইএ আইন ইতিমধ্যে এ ধরনের প্রতিটি অপরাধের মোকাবিলায় তৈরি এবং তার অপব্যবহার নিয়ে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে।
গণপিটুনিতে হত্যার ঘটনা ইদানীং ব্যাপক হারে বেড়ে গেছে। বিশেষ করে গোহত্যা বন্ধে রাজ্যে রাজ্যে গণপিটুনিতে বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এই প্রবণতা বন্ধে নতুন আইনে বিশেষ ধারা রাখা হয়েছে। দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনাও মাত্রাতিরিক্তভাবে বেড়ে গেছে। বেড়েছে নাবালিকা ধর্ষণ ও হত্যার প্রবণতাও। এ ধরনের অপরাধের সাজা হবে ২০ বছরের কারাবাস থেকে মৃত্যুদণ্ড।
অমিত শাহ বলেন, নতুন বিলে শিশু ও নারীর বিরুদ্ধে অত্যাচার, হত্যা ও রাষ্ট্রের বিরুদ্ধাচরণকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। সাধারণ অপরাধের সাজা হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে সমাজসেবাকে। এ ধরনের সাজা চালু করার প্রস্তাব এই প্রথম নতুন বিলে দেওয়া হয়েছে। অপরাধ না করার মানসিকতা ও সচেতনতা যাতে বাড়ে, তা নিশ্চিত করাই হবে শাস্তিদানের লক্ষ্য।