Trending

মূল্যস্ফীতি হ্রাসে লাগাম টাকার প্রবাহে: মুদ্রানীতি নিয়ে আজ বৈঠক

মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে চলতি অর্থবছরের মুদ্রানীতিতেও বাজারে টাকার প্রবাহ কমানোর নীতি গ্রহণ করা হবে। অর্থাৎ মুদ্রানীতি হবে সংকোচনমুখী। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিনির্ধারণী সুদের হার বাড়বে কি না, এ ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। পলিসি রেট বা নীতিনির্ধারণী সুদের হার আর বাড়ানোর পক্ষে নয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে বাজারে অনুৎপাদনশীল খাতে ঋণের সুদের হার আরও কিছুটা বাড়ানোর ইঙ্গিত দেওয়া হতে পারে।

চলতি অর্থবছরের আগাম মুদ্রানীতি প্রণয়ন নিয়ে ইতোমধ্যে মনিটারি পলিসি বিভাগ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছে। ওইসব বৈঠকে মুদ্রানীতি নিয়ে কর্মকর্তারা এমন পরামর্শই দিয়েছেন। এর আলোকে প্রাথমিকভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রানীতির এমন একটি কাঠামো তৈরি করেছে। এ বিষয়ে আজ কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশের খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদ, গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় করবে। এতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন। তাদের মতামতের ভিত্তিতে পরবর্তী এক সপ্তাহের মধ্যে তা চূড়ান্ত করা হবে। ১৬ জুলাই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পর্ষদ সভায় মুদ্রানীতির খসড়া উপস্থাপন করা হতে পারে। পর্ষদের মতামতের ভিত্তিতে মুদ্রানীতি চূড়ান্ত করা হবে। ১৮ জুলাই মুদ্রানীতি ঘোষণার প্রাথমিক দিন ধার্য করা হয়েছে। তবে এটি পরিবর্তন হতে পারে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সেক্ষেত্রে চতুর্থ সপ্তাহে মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হবে।

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য টানা দুই বছর সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি অনুসরণ করা হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে সুদের হার। ডলারের প্রবাহ বাড়ানোর আশায় এর দাম বাড়ানো হয়েছে। ডলারের প্রবাহ বাড়েনি। ফলে কমেনি মূল্যস্ফীতি। উলটো সুদের হার ও ডলারের দাম বাড়ানোর প্রভাবে মূল্যস্ফীতিও বেড়েছে।

চলতি অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৬ শতাংশে নামানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বর্তমানে আছে ৯ দশমিক ৭২ শতাংশ। এ হার লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে নামানো অসম্ভব বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ওই লক্ষ্যমাত্রাকে সামনে রেখেই মুদ্রানীতি প্রণয়ন করবে।

এদিকে আইএমএফ নীতিনির্ধারণী সুদের হারের কাঠামো পরিবর্তনের সুপারিশ করেছে। বর্তমানে রেপো বা ট্রেজারি বিল পুনঃক্রয় চুক্তি হচ্ছে নীতিনির্ধারণী সুদের হার। এ হার ৪ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৮ শতাংশ করা হয়েছে। আইএমএফ বলেছে ব্যাংক রেটকে নীতিনির্ধারণী সুদের হার হিসাবে ঘোষণা করতে। কিন্তু বর্তমানে ব্যাংক রেট খুব বেশি কার্যকর নয়। এর পরিবর্তে রেপো রেটই বেশি সক্রিয়। বর্তমানে ব্যাংক রেট ৪ শতাংশ। করোনার সময় এ হার কমানো হয়েছিল। এরপর আর বাড়ানো হয়নি। সুদের হার বাড়লেও ব্যাংক রেট বাড়েনি।

এদিকে আগামী মুদ্রানীতিতে অনুৎপাদনশীল খাতে বা বিলাসী খাতে আমদানি যেমন আরও নিয়ন্ত্রণ করা হবে, তেমনই এসব খাতে ঋণের সুদহারও কিছুটা বাড়ানো হবে। ফলে এসব খাতে টাকার প্রবাহ কমে মূল্যস্ফীতি কমবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ছাপানো টাকায় সরকারকে আর নতুন ঋণ দেওয়া হবে না। একই সঙ্গে ছাপানো টাকায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের যেসব তহবিল রয়েছে, সেগুলোর আকার ছোট করার পাশাপাশি ঋণের জোগান কমানো হবে। তবে উৎপাদন খাতে ঋণের জোগান বাড়ানো হবে।

আজকের বৈঠকের শুরুতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশের সার্বিক অর্থনীতির পরিস্থিতি নিয়ে একটি প্রতিবেদন তুলে ধরবে। এরপর মুদ্রানীতির প্রেক্ষাপট সম্পর্কেও কথা বলবে। এর ভিত্তিতে অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীদের মতামত জানতে চাইবে।

এদিকে বিদায়ি অর্থবছরের মুদ্রানীতির বেশির ভাগ লক্ষ্যমাত্রাই অর্জিত হয়নি। এর আলোকে লক্ষ্যমাত্রায় সংশোধন আনা হতে পারে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে টাকার প্রবাহ বেশি কমানোর পরও মূল্যস্ফীতি কমেনি। ফলে টাকার প্রবাহের ভিত্তিতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা কতটুকু সম্ভব হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অর্থনীতিবিদরা।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button