চ্যাটজিপিটি জ্বর ছড়িয়ে পড়ছে যুক্তরাষ্ট্রে! কর্মক্ষেত্রে শঙ্কা বাড়ছে!
মূলত ইমেইল লেখা, কোনো ডকুমেন্টকে সংক্ষিপ্ত করা এবং গবেষণার ক্ষেত্রে প্রাথমিক তথ্য যোগাড়ের মতো বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে চ্যাটজিপিটির ব্যবহার করা হচ্ছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কর্মীদের একটা বড় অংশ নিজেদের কাজকে সহজ করতে প্রতিনিয়ত আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স (এআই) চালিত চাটবট চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করছে। যদিও মাইক্রোসফট এবং গুগলের মতো বেশকিছু প্রতিষ্ঠান চ্যাটবটটি ব্যবহারের ক্ষেত্রে কর্মীদের নিরুসাহিত করেছে।
সম্প্রতি রয়টার্স পরিচালিত একটি পোলে ব্যাপক পরিসরে চ্যাটজিপিটি ব্যবহারের এমন তথ্য ফুটে উঠেছে। শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই নয়, বরং বিশ্বের নানা প্রান্তের বহু কোম্পানির পক্ষ থেকেও ভাবা হচ্ছে যে, কীভাবে চ্যাটবটটি সবচেয়ে কার্যকরীভাবে ব্যবহার করা যায়। তবে অন্যদিকে নিরাপত্তা সংস্থা এবং কিছু কোম্পানি চ্যাটবটটি ব্যবহারের ক্ষেত্রে মেধাস্বত্ব ও কৌশল ফাঁসের শঙ্কা প্রকাশ করেছে।
মূলত ইমেইল লেখা, কোনো ডকুমেন্টকে সংক্ষিপ্ত করা এবং গবেষণার ক্ষেত্রে প্রাথমিক তথ্য যোগাড়ের মতো বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে চ্যাটজিপিটির ব্যবহার করা হচ্ছে।
অনলাইন পোলটিতে মূলত ১১ জুলাই থেকে ১৭ জুলাই পর্যন্ত তথ্য সংগ্রহ করা হয়। পোলের শতকরা ২৮ ভাগ উত্তরদাতা জানান, তারা নিজেদের কর্মক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করছেন।
অন্যদিকে ২২ ভাগ উত্তরদাতা জানান, তাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ স্পষ্টভাবে চ্যাটবট ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে। আর ১০ ভাগ উত্তরদাতা জানান, তাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বাহ্যিক এআই টুলের ব্যবহার স্পষ্টভাবে নিষিদ্ধ করেছে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, আর ২৫ ভাগ ব্যবহারকারী ঠিক জানেই না যে, এআই চ্যাটবট ব্যবহারে তাদের কোম্পানি ঠিক কী ধরণের নির্দেশনা দিয়েছে।
এদিকে গত বছরের নভেম্বরে চালুর পর চ্যাটজিপিটি প্রযুক্তি ইতিহাসে সবচেয়ে দ্রুত ছড়িয়ে যাওয়া অ্যাপ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। অ্যাপটি প্রথমদিকে বেশ আলোড়ন তৈরি করলেও ধীরে ধীরে ইউরোপের নানা নিয়ন্ত্রক সংস্থার নিয়মের বেড়াজালে আটকে যেতে থাকে। বিশেষ করে গণহারে নানা কোম্পানির তথ্য সংগ্রহের মতো অভিযোগ থাকায় চ্যাটজিপিটি নানা প্রাইভেসি ওয়াচডগ গ্রুপের সমালোচনার মুখে পড়ে।
এক্ষেত্রে শঙ্কা রয়েছে যে, হিউম্যান রিভিউরারেরা চ্যাটবটে অন্য কোম্পানির জেনারেটেড চ্যাট পড়ে ফেলতে পারেন। এমনকি গবেষণায় দেখা যায়, অনুরূপ এআই টুলগুলো ট্রেনিংয়ের সময় ইনপুটকৃত ডেটা পুনরায় তৈরি করতে পারে; যা তথ্যের মালিকানার জন্য একটি সম্ভাব্য ঝুঁকি।
এ বিষয়ে সিকিউরিটি ফার্ম অক্টা এর কাস্টমার ট্রাস্টের ভাইস প্রেসিডেন্ট বেন কিং বলেন, “জেনারেটিভ এআই পরিষেবাগুলি ব্যবহারের সময় কীভাবে ডেটার ব্যবহার করতে হবে সেটা অনেকেই বুঝতে পারেন না। ব্যবসার ক্ষেত্রে এটি আরও জটিল।”
কর্মীদের চ্যাটজিপিটি ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রভাব ঠিক কেমন হতে পারে সেটা রয়টার্সের পক্ষ থেকে ওপেনএআইয়ের কাছে জানতে চাওয়া হয়। তবে কোম্পানিটির পক্ষ থেকে এই বিষয়ে কোনো উত্তর প্রদান করা হয়নি।
সম্প্রতি ওপেনএআইয়ের একটি ব্লগ পোস্টে কর্পোরেট পার্টনারদের আশ্বস্ত করা হয় যে, অনুমতি ছাড়া কোনো কোম্পানির ডেটাই আর চ্যাটবটের প্রশিক্ষণের জন্য ব্যবহার করা হবে না।
অন্যদিকে ব্যবহারকারীরা যখন গুগলের চ্যাটবট বার্ড ব্যবহার করেন, তখন এআই প্ল্যাটফর্মটি ব্যবহারকারীদের ইনপুটকৃত ছবি, লোকেশন ও অন্য তথ্যগুলো সংরক্ষণ করে। যদিও পূর্ববর্তী কার্যক্রম মুছে দেওয়ার মতো একটি ফিচারও প্লাটফর্মটিতে যুক্ত রয়েছে। তবে এই সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে যোগাযোগ করা হলেও গুগলের পক্ষ থেকে সাড়া প্রদান করা হয়নি।
অন্যদিকে সোশ্যাল মিডিয়া টিন্ডারে কর্মরত যুক্তরাষ্ট্রের এক কর্মী জানান, ডেটিং অ্যাপটির কর্মীরা ইমেইল লেখার মতো সহজ নানা কাজে চ্যাটজিপিটির ব্যবহার করছে। যদিও কোম্পানির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে চ্যাটবটটি ব্যবহারের কোনো অনুমতি প্রদান করা হয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঐ কর্মকর্তা বলেন, “চ্যাটজিপিটি ব্যবহারের ক্ষেত্রে টিন্ডারের নির্দিষ্ট কোনো নিয়ম নেই। তবে তবুও কর্মীরা কোম্পানির তথ্য সংক্রান্ত গোপনীয়তা রক্ষা করে সাধারণ কাজে চ্যাটবটটি ব্যবহার করছে।”
এই বিষয়ে টিন্ডারের কাছে জানতে চাওয়া হলে সরাসরি কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বলা হয়, “তথ্যের সর্বোত্তম নিরাপত্তা নিশ্চিতে এবং ডেটা অনুশীলনের জন্য কর্মীদের নিয়মিত নির্দেশনা প্রদান করা হয়।”
গত মে মাসে প্রযুক্তি জায়ান্ট স্যামসাং ইলেক্ট্রনিক্স কর্তৃপক্ষ জানতে পারে যে, তাদেরই একজন কর্মী চ্যাটজিপিটিতে কোম্পানিটির সংবেদনশীল কোড ইনপুট দিয়েছে। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে স্যামসংয়ের পক্ষ থেকে কর্মীদের চ্যাটজিপিটি এবং অনুরূপ অন্যান্য অ্যাপ ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা হয়।
গত ৩ আগস্ট স্যামসাংয়ের পক্ষ থেকে একটি বিবৃতিতে বলা হয়, “জেনারেটিভ এআই ব্যবহারের ক্ষেত্রে একটি নিরাপদ পরিবেশ তৈরির জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। যাতে করে কর্মীদের উত্পাদনশীলতা এবং দক্ষতা বাড়ানো সম্ভব হয়। তবে এমন ক্ষেত্র প্রস্তুত না হওয়া পর্যন্ত আমরা কর্মীদের জেনারেটিভ এআইয়ের ব্যবহার সাময়িকভাবে সীমাবদ্ধ রেখেছি।”
রয়টার্সের রিপোর্ট অনুযায়ী, গত জুন মাসে অ্যালফাবেটের পক্ষ থেকে কর্মীদের চাটবট ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছিল। এই তালিকায় নিজেদের তৈরি গুগল বার্ডকেও যুক্ত করেছিল তারা। যদিও একই সময়ে তারা এআই চ্যাটবটটি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিয়েছে।
গুগলের পক্ষ থেকে বলা হয়, অনেক সময় বার্ড অনাকাঙ্ক্ষিত কোড সাজেশন তৈরি করলেও সর্বোপরি প্রোগ্রামারদের সহযোগিতাই করে থাকে। একইসাথে বার্ডের সীমাবদ্ধতা নিয়ে স্বচ্ছ থাকতে কাজ করা হচ্ছে বলেও গুগলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
অন্যদিকে কিছু কোম্পানি রয়টার্সকে জানায়, তারা চ্যাটজিপিটিসহ অন্যান্য এআই চ্যাটবট প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার শুরু করেছে। তবে এগুলো ব্যবহারের সময় নিরাপত্তার বিষয়টি তারা বিশেষভাবে বিবেচনায় রাখছে।
কোকাকোলার জর্জিয়া অঞ্চলের এক মুখপাত্র বলেন, “কাজের ক্ষেত্রে এআই কীভাবে আরও কার্যকারিতা বাড়াতে পারে সে সম্পর্কে আমরা পরীক্ষা করছি এবং শিখছি।”
অন্যদিকে কিছু কর্মী জানায়, তারা নিজেদের কোম্পানিতে থাকা কম্পিউটার দিয়ে চ্যাটজপিটিতে প্রবেশই করতে পারেন না।
এ বিষয়ে প্রক্টর এন্ড গ্যাম্বল (পি এন্ড জি) এর এক কর্মকর্তা বলেন, “আমাদের অফিস নেটওয়ার্কে চ্যাটজিপিটি একেবারে নিষিদ্ধ। বলতে গেলে কোনো কাজই করা যায় না।”
পিএন্ড জি এর কাছে এ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে কোম্পানিটি মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। অন্যদিকে পি এন্ড জি সত্যিকার অথেই চ্যাটজিপিটির ব্যবহার বন্ধ করেছে কি-না সেটি নিশ্চিত করতে পারেনি রয়টার্স।
এদিকে সাইবার সিউকিউরিটি ফার্ম নর্মিনেটের প্রধান তথ্য নিরাপত্তা কর্মকর্তা পল লুইস বলেন, “চ্যাটবটগুলোর উন্নতির ফলে বহু বাড়তি সুবিধা পাওয়া যায়। কিন্তু ঐসব তথ্য সম্পূর্ণরূপে সুরক্ষিত নয় এবং তাই এটিকে নিয়মতান্ত্রিকভাবে ব্যবহার করতে হবে। তবে ঠিকভাবে প্রম্পট উদ্ধৃত করতে না পারলে এআই চ্যাটবট কর্তৃক তথ্য প্রকাশের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। তাই চ্যাটবট ব্যবহারে সাবধানতার পরিচয় দিতে হবে।”