Jannah Theme License is not validated, Go to the theme options page to validate the license, You need a single license for each domain name.
Bangladesh

আন্দোলন সহিংসতা কারফিউ ছুটি ইন্টারনেট বন্ধ অর্থনীতিতে ক্ষতি ৭৭ হাজার কোটি টাকা

কোটাবিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ব্যাপক সহিংসতা, ইন্টারনেট বন্ধ ও নির্বাহী আদেশে সরকারি ছুটির কারণে দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে স্থবিরতা নেমে আসে। আমদানি-রপ্তানিসহ শিল্পের চাকা বন্ধ হয়ে যায়। ব্যবসা-বাণিজ্যসহ মানুষের দৈনন্দিন চলাচলও বাধাগ্রস্ত হয়। এসব কারণে অর্থনীতিতে প্রতিদিন গড়ে ১০০ কোটি ডলার বা ১১ হাজার ৮০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত টানা ৬ দিন প্রায় সবকিছুই বন্ধ ছিল।

এ হিসাবে ক্ষতি হয়েছে ৬০০ কোটি ডলার বা ৭০ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। গত ১৬ জুলাই সন্ধ্যা থেকে ও ১৭ জুলাই আধাবেলা আন্দোলনের কারণে আংশিক বন্ধ ছিল। এ দুই দিনের আধাবেলার ক্ষতি ৫০ কোটি ডলার বা ৫ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। এ হিসাবে সাড়ে ৬ দিনে মোট ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ৭৬ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। তবে অনেকের মতে, এ ক্ষতি ৭০০ কোটি ডলার বা ৮২ হাজার ৬০০ কোটি টাকাও হতে পারে।

দেশের শীর্ষস্থানীয় অর্থনীতিবিদ, গবেষক ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। ব্যবসায়ীরা আরও বলেছেন, ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি হবে। কারণ ডলারের দাম ১১৮ টাকা করে ধরলে ওই পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু ডলার ১২২ থেকে ১৩০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। এ কারণে ক্ষতির পরিমাণ টাকার অঙ্কে আরও বাড়বে। সৃষ্ট ক্ষতি মোকাবিলার জন্য তারা সব বন্দরের পণ্য খালাসে দেরি হওয়ায় ডেমারেজ চার্জ মওকুফ, নতুন চার্জ আরোপ না করা, ঋণের বিপরীতে বাড়তি সুদ আরোপ না করা, কম সুদে ঋণ দেওয়াসহ অন্যান্য নীতিসহায়তার দাবি করেছেন। একই সঙ্গে রপ্তানি আয় বিদেশ থেকে আমান মেয়াদ বৃদ্ধি, দেশীয় ও বৈদেশিক ঋণের কিস্তি পরিশোধের মেয়াদ বাড়ানোর দাবি করেছেন।

এদিকে চট্টগ্রাম ব্যুারো জানায়, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে মোট আমদানি-রপ্তানির প্রায় ৯৫ শতাংশ সম্পন্ন হয়। ফলে এ বন্দরের কার্যক্রম টানা পাঁচ দিন বন্ধ থাকায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে আমদানি কার্যক্রম ও পণ্য ডেলিভারি বন্ধ থাকায় এ খাতে পাঁচ দিনে ক্ষতি হয়েছে কয়েক হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে কেবল চট্টগ্রাম কাস্টমসই ৯০০ কোটি টাকা রাজস্ব বঞ্চিত হয়েছে।

এ পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, অর্থনীতির চাকা বন্ধ হলে ক্ষতি হতেই থাকে। এই চাকা এক মুহূর্তেই বন্ধ করা যায়। কিন্তু চালু করতে সময় লাগে। ফলে ক্ষতির পুরো হিসাব এখনই করা যাবে না। তবে ক্ষতির অঙ্ক অনেক বড় হবে। গবেষণায় গড় হিসাবে প্রতিদিন অর্থনৈতিক ক্ষতি প্রায় ১০০ কোটি ডলার হবে। টানা ছয় দিন বলতে গেলে সবকিছুই বন্ধ ছিল। সাড়ে ৬৫০ কোটি থেকে ৭০০ কোটি ডলারের ক্ষতি হতে পারে।  

তিনি আরও বলেন, ক্ষতিটা সবচেয়ে বেশি হয়েছে সাধারণ মানুষের। বিশেষ করে যারা ‘দিন আনে দিন খায়।’ ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় ক্ষতির পরিমাণটা আরও বেড়েছে। এছাড়া উদ্যোক্তারাও অনেক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। অর্থনীতি এমনিতেই করোনার পর থেকে বহুমুখী চ্যালেঞ্জের ভেতর দিয়ে এগোচ্ছে। বৈশ্বিক মন্দায় এ চ্যালেঞ্জ আরও বাড়িয়েছে। সাম্প্রতিক অস্থিরতায় অর্থনীতিতে চ্যালেঞ্জ আরও বাড়বে।

তার মতে, এ ধরনের পরিস্থিতিতে সবচেয়ে ক্ষতির মুখে পড়বে দেশের ইমেজ। দেশের উদ্যোক্তাদের সঙ্গে যেসব বিদেশি উদ্যোক্তা ব্যবসা করছেন তারা অনিশ্চয়তায় ভুগবেন। ফলে এ ধরনের সংকট যাতে না হয় সেদিকে সরকারকে নজর রাখতে হবে।

উদ্যোক্তারা জানান, সৃষ্ট অস্থিরতায় রপ্তানি খাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। একদিকে কারখানায় উৎপাদন বন্ধ ছিল। অন্যদিকে ক্রেতাদের আদেশ অনুযায়ী রপ্তানি করা সম্ভব হয়নি। এতে এ খাতে এখনকার ক্ষতির চেয়ে আগামীতে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন উদ্যোক্তারা। এখন পর্যন্ত উৎপাদন ও রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হওয়ায় গত ৬ দিনের হিসাবে ক্ষতির পরিমাণ ৮ হাজার কোটি টাকার বেশি। এছাড়া বিভিন্ন চার্জ ও ঋণের সুদ ও রপ্তানি পণ্য স্টক লট হলে কম দামে বিক্রি করতে হবে। তখন ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ নিটওয়্যার প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, রপ্তানির সব খাতেই ক্ষতি হয়েছে। এ ক্ষতির পরিমাণ আগামীতে আরও বাড়বে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় ক্ষতি হচ্ছে ইমেজ সংকট। ক্রেতা ধরে রাখাটা এখন বড় চ্যালেঞ্জিং। কারণ ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় ক্রেতাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। অনেক ক্ষেত্রে ক্রেতা ধরে রাখতে পণ্য এখন বিমানে পাঠাতে হবে। এতে খরচ বাড়বে। যা রপ্তানিকারকদের ক্ষতির তালিকায় পড়বে।

চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়. আমদানি কার্যক্রম ও পণ্য ডেলিভারি বন্ধ থাকায় এ খাতে পাঁচ দিনে বিপুল আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। টাকার অঙ্কে এই ক্ষতির পরিমাণ কত তা  সুনির্দিষ্ট করে  বলা না গেলেও ক্ষতির অঙ্ক কয়েক হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করছেন আমদানিকারকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। এর মধ্যে কেবল চট্টগ্রাম কাস্টমসই ৯০০ কোটি টাকা রাজস্ব বঞ্চিত হয়েছে।

জানা গেছে, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৬৮ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করে। সে হিসাবে প্রতিদিন গড়ে ১৮০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে। কোটা সংস্কার আন্দোলন, সংঘর্ষ ও রাষ্ট্রীয় স্থাপনায় দুর্বৃত্তদের হামলার জেরে বৃহস্পতিবার রাত থেকে বন্ধ হয়ে যায় ইন্টারনেট পরিষেবা। শুক্রবার রাত ১২টার পর থেকে জারি করা হয় কারফিউ। ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ হওয়ার কারণে কাস্টমসের রাজস্ব আদায়ের অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেমও বন্ধ হয়ে যায়।  তাই শুল্ক আদায়ও বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ হয়ে যায় পণ্য ডেলিভারি। বুধবার থেকে ম্যানুয়ালি এবং বৃহস্পতিবার থেকে ইন্টারনেট সেবা চালু হওয়ার পর পুরোদমে বন্দর-কাস্টমসে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শুক্রবার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত শুল্কায়ন কার্যক্রম বন্ধ থাকায় প্রতিদিন গড়ে ১৮০ কোটি টাকা করে ৫ দিনে ৯০০ কোটি টাকার রাজস্ব বঞ্চিত হয় সরকার।  প্রতিদিন আমদানি পণ্য ছাড়ের জন্য ৪-৫ হাজার বিল অব এন্ট্রি (বিই) দাখিল হতো। ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ থাকার কারণে এসব পণ্যের বিএই দাখিল করা যায়নি। এ ছাড়া প্রতিদিন চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ৮-১০ হাজার ট্রাক-কাভার্ডভ্যান, লরি পণ্য নিয়ে বের হয়।

এই পাঁচ দিন কোনো পণ্য ডেলিভারি হয়নি। শিল্পের কাঁচামাল না পাওয়ায় শত শত মিল-কারখানায় বন্ধ ছিল উৎপাদন। স্টিল সেক্টর, সিমেন্ট সেক্টরসহ প্রায় সব সেক্টরেই পড়েছে এই প্রভাব। এছাড়া বন্দর থেকে সময়মতো পণ্য ছাড় করতে না পারায় আমদানিকারকদের ওপর উঠেছে পোর্ট ও শিপিং লাইনের বিপুল অঙ্কের ডেমারেজ। বন্দরে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অতিরিক্ত ৬-৭ হাজার কনটেইনার জমে যায়।

চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি ওমর হাজ্জাজ বলেন, পাঁচ দিন সব কিছু বন্ধ থাকার কারণে কেবল আমদানি খাতেই কয়েক হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। তবে সুনির্দিষ্ট করে টাকার অঙ্কে এই ক্ষতি নিরূপণ করা সম্ভব নয়। তবে বন্দর-কাস্টমসহ সব সেক্টরে প্রতিদিন গড়ে ১২ হাজার থেকে ১৩ হাজার কোটি টাকার ব্যবসায়িক ক্ষতি হয়েছে বলে তারা ধারণা করছেন। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার থেকে সবকিছু স্বাভাবিক হয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দর ও কাস্টমস পুরোদমে কাজ শুরু করেছে। উদ্ভুত পরিস্থিতির কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যের যে ক্ষতি হয়েছে তা কাটিয়ে উঠতে করণীয় নির্ধারণে চেম্বার বৃহস্পতিবার সব সেক্টরের প্রতিনিধি এবং প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বৈঠক থেকে বলা হয়েছে, বড় ধরনের বিপদ থেকে দেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে।  আর একটি সেকেন্ডও যাতে ওয়েস্টেজ না হয় সেভাবে সবাইকে কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহŸান জানানো হয়। এ ক্ষেত্রে সরকার ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যবসায়ীদের সব ধরনের সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরওয়ার্ডারস অ্যাসোসিয়শনের সহসভাপতি ও শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক খাইরুল আলম সুজন বলেন, ‘পণ্য নিয়ে অনেক জাহাজ এলেও চার দিনে খালাস করতে পারেনি। পণ্য ডেলিভারি না হওয়ায় চট্টগ্রাম বন্দরে জমে যায় বাড়তি ৬-৭ হাজার কনটেইনার। পণ্য না পেয়ে মিল-কারখানায় উৎপাদন বিঘিœত হয়েছে। যার ভয়াবহ প্রভাব ভোক্তাদের ওপর পড়েছে।

উদ্যোক্তারা জানান, ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় সফটওয়্যার রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হয়েছে। অফিস বন্ধ থাকায় সফটওয়্যার তৈরির কাজও করা সম্ভব হয়নি। এসব কারণে গত ৫ দিনে এ খাতে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। দেশ থেকে যারা সফটওয়্যার বা তথ্যপ্রযুক্তি পণ্য কিনেছেন তাদের রপ্তানিকারকরা বিভিন্ন সেবা দিয়ে থাকেন অনলাইনে। কিন্তু ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় এ সেবা দেওয়া সম্ভব হয়নি। ফলে সেবা বাবদ অর্থও মিলবে না।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ সফটওয়্যার ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সভাপতি রাসেল টি আহমেদ বলেন, ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় ক্রেতাদের সেবা দেওয়া সম্ভব হয়নি। এ ধরনের পরিস্থিতির কারণে ক্রেতারা সেবা না পাওয়ায় তাদেরও ক্ষতি হয়েছে। এতে দেশের ইমেজ নষ্ট হয়েছে। ফলে ভবিষ্যতে দেশ থেকে তথ্যপ্রযুক্তি পণ্য রপ্তানিতে জটিলতা দেখা দিতে পারে। কারণ এসব পণ্য রপ্তানির পর পরিচালনার ক্ষেত্রে সমস্যা হলে সেবা দিতে হয়।  
জানা গেছে, ওষুধ উৎপাদন, রপ্তানি ব্যাহত, কাঁচামাল ছাড় করাতে না পারায় ফার্মাসিউটিক্যালস খাতে ক্ষতি হয়েছে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা। এ খাতে যেসব কাঁচামাল বন্দরে আটকে ছিল সেগুলোর গুণগত মান কমার আশঙ্কা রয়েছে। কারণ এ খাতের সবকিছুই চলে ঘণ্টা গুণে।

রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হওয়ায় সিরামিক খাতে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। রি-রোলিং মিলস খাতে শুধু উৎপাদন ক্ষতি হয়েছে হাজার কোটি টাকার বেশি। ই-কমার্স খাতে ক্ষতি হয়েছে ৩০০ কোটি টাকা। ইন্টারনেট না থাকায় দেশের কলসেন্টারগুলোর কার্যক্রম একেবারেই মুখ থুবড়ে পড়েছে। ৫ দিনে এ খাতে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ২০০ কোটি টাকা।

গণপরিবহণ না চলার কারণে এ খাতেও অনেক ক্ষতি হয়েছে। অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের কারণে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ২২ কোটি টাকা। এছাড়া গণপরিবহণ বন্ধ থাকায় এ খাতেও মোটা অঙ্কের ক্ষতি হয়েছে।

কৃষির উৎপাদন ব্যবস্থায় তেমন ক্ষতি হয়নি। তবে বিপণন ব্যবস্থায় ক্ষতি ব্যাপক হয়েছে। কারফিউর কারণে পণ্য পরিবহণ বাধাগ্রস্ত হয়েছে। ফলে কৃষকের পণ্য পচে নষ্ট হয়েছে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
bacan4d
bacantoto4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d toto
slot toto
bacan4d
bacan4d
togel online
Toto Slot
saraslot88
Bacan4d Login
bacantoto
Bacan4d Login
bacan4d
bacan4drtp
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot maxwin
slot bacan4d
slot maxwin
bacan4d togel
bacan4d login
bacan4d login
bacan4d login
bacantoto 4d
slot gacor
bacansport
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot77 gacor
JAVHD
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacan4d
bacan4d
bacansport
bacansport
gacor slot
slot gacor777
slot gacor bacan4d
bacan4d
bacansport
toto gacor
bacan4d
bacansports login
slot maxwin
slot dana
slot gacor
slot dana
slot gacor
bacansports
bacansport
bacansport
bacansport
bawan4d
bacansports
bacansport
slot gacor
judi bola
slot maxwin
slot maxwin
bacansport
bacan4d
bacansport
slot gacor
slot demo
slot gacor
slot gacor
slot gacor
toto slot
slot gacor
demo slot gacor
slot maxwin
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacansport
slot gacor
slot toto