USA

বিতর্কের আগে জরিপে সমতায় কমলা হ্যারিস-ডোনাল্ড ট্রাম্প

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের বিতর্কে প্রথমবারের মতো মুখোমুখি হতে চলেছেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিস ও রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যম এবিসির আয়োজনে স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাত ৯টায় (বাংলাদেশ সময় বুধবার সকাল ৭টা) ফিলাডেলফিয়ায় বিতর্কটি হওয়ার কথা। বিতর্কের আগে প্রকাশিত জনমত জরিপে দেখা গেছে, জনসমর্থনের দিক থেকে সমতায় রয়েছেন দুই প্রার্থী।

সবশেষ জনমত জরিপে দেখা গেছে, ফৌজদারি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়া এবং ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফল পাল্টে দেওয়ার চেষ্টা উসকে দেওয়ায় ভূমিকা থাকা সত্ত্বেও অর্ধেক ভোটারের সমর্থন ধরে রেখেছেন ৭৮ বছর বয়সী ট্রাম্প।

অন্যদিকে গত জুলাইয়ে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সরে যাওয়ার পর নির্বাচনী লড়াইয়ে নাম লেখানো কমলা হ্যারিস দ্রুতই একজন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে রূপান্তরিত হয়েছেন। যদিও জনমত জরিপ বলছে, বড় ধরনের কোনো অগ্রগতি হয়নি ৫৯ বছর বয়সী কমলার।

নিউ ইয়র্ক টাইমস/সিয়েনা পোলের জরিপ বলছে, জাতীয় পর্যায়ে প্রায় সম-অবস্থানে রয়েছেন ট্রাম্প ও কমলা। ৪৮ শতাংশ ভোটারের সমর্থন রয়েছে সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রতি।

অন্যদিকে ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসকে সমর্থন দিয়েছেন ৪৭ শতাংশ ভোটার।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল জনগণের ভোটে নয়, বরং রাজ্য পর্যায়ের ইলেকটোরাল কলেজ ভোটের ওপর নির্ভরশীল। অর্থাৎ কোনো প্রার্থী পুরো দেশে বেশি ভোট পেলেও তাঁর নির্বাচিত হওয়া নিশ্চিত নয়। রাজ্যভিত্তিক মোট ৫৩৮টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোটের মধ্যে ন্যূনতম ২৭০টি ভোট পেতে হবে প্রার্থীকে। অর্থাৎ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ক্ষেত্রে গুটিকয়েক দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্য নির্ণায়ক হয়ে উঠবে।

জরিপে দেখা গেছে, উইসকনসিন, মিশিগান ও পেনসিলভানিয়ার মতো দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যে ট্রাম্পের চেয়ে সামান্য ব্যবধানে এগিয়ে আছেন কমলা। তবে নেভাডা, জর্জিয়া, নর্থ ক্যারোলাইনা ও আরিজোনার মতো অঙ্গরাজ্যে সমতায় রয়েছেন দুজন।

সিবিএস নিউজ/ইউগভের জরিপ বলছে, মিশিগান ও উইসকনসিনে ট্রাম্পের চেয়ে ১ পয়েন্টের ব্যবধানে এগিয়ে আছেন কমলা। তবে পেনসিলভানিয়ায় সমতায় রয়েছেন দুজন।

মার্কিন নির্বাচন ঘিরে এরই মধ্যে বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। বয়স নিয়ে উদ্বেগের পরিপ্রেক্ষিতে বাইডেনের সরে যাওয়া, প্রাণঘাতী হামলা থেকে অল্পের জন্য ট্রাম্পের রক্ষা পাওয়া এবং নির্বাচনে হারলে ট্রাম্প পরাজয় স্বীকার করবেন না বলে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। যদিও সর্বশেষ জনমত জরিপ বলছে, প্রত্যেক প্রার্থী উল্লেখযোগ্য মাত্রায় তাঁদের অনুগতদের সমর্থন ধরে রাখতে পেরেছেন।

এমন পরিস্থিতিতে মঙ্গলবারের বিতর্ক পটপরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে মত বিশ্লেষকদের। তাঁরা বলছেন, যেহেতু কমলা যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম নারী, কৃষ্ণাঙ্গ ও ভারতীয় বংশোদ্ভূত প্রেসিডেন্ট হওয়ার লড়াইয়ে আছেন, তাই প্রতিদ্বন্দ্বীকে অপমান ও হুমকি দেওয়ার স্বভাবগত আচরণে লাগাম টানতে চাপ থাকবে ট্রাম্পের ওপর।

বিশ্লেষকদের ভাষ্য, বিতর্কটি বিপুলসংখ্যক দর্শক দেখবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাই এর মাধ্যমে আমেরিকানদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে হবে কমলাকে, যা ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে এবং অল্প সময়ের প্রচারাভিযানে অর্জন করতে পারেননি তিনি।

একই সঙ্গে ট্রাম্পের সঙ্গে কিভাবে বিতর্ক করা যায়, সেই ধাঁধার সমাধান করতে হবে কমলাকে। কারণ ট্রাম্প অভ্যাসগতভাবে প্রায় প্রতিটি বিষয়ে মিথ্যা বিবৃতি দিয়ে থাকেন এবং প্রতিদ্বন্দ্বীকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করতে পছন্দ করেন। সর্বশেষ প্রেসিডেনশিয়াল বিতর্কে ট্রাম্পের কাছে ধরাশায়ী হয়ে নির্বাচন থেকে সরে গেছেন বাইডেন।

এরই মধ্যে কমলার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সমাবেশে বর্ণবাদী বক্তব্য দিয়েছেন ট্রাম্প। ইচ্ছা করে কমলার নাম ভুলভাবে উচ্চারণ করেছেন এবং তাঁকে ‘উন্মাদ’ ও ‘মার্ক্সবাদী’ আখ্যা দিয়েছেন।

কমলার সমর্থক ও পরিবহনমন্ত্রী পিট বুটিগিগ বলেছেন, ‘বিতর্কে ট্রাম্পকে মোকাবেলা করতে অতিমানবীয় মনোযোগ ও শৃঙ্খলা প্রয়োজন।’

ভোটাররা কী ভাবছেন

এদিকে বিতর্কের মঞ্চে কমলা কি আদৌ প্রতিদ্বন্দ্বী ট্রাম্পকে ঘায়েল করতে পারবেন, নাকি প্রতিদ্বন্দ্বীর আক্রমণাত্মক বক্তব্যে নিজেই ধরাশায়ী হবেন, এ নিয়ে ভোটারদের মধ্যে আলোচনা চলছে। বিষয়টি নিয়ে বেশ কয়েকজন মার্কিন ভোটারের সঙ্গে কথা বলেছেন এএফপির প্রতিনিধিরা।

ভোটারদের ভাষ্য, বিতর্কে ট্রাম্প ও কমলার নীতি ও মূল্যবোধ নিয়ে আলোচনা শোনার পাশাপাশি তাঁদের অঙ্গভঙ্গি, সংযম ও পারদর্শিতা সূক্ষ্মভাবে পর্যক্ষেণ করবেন তাঁরা।

সম্প্রতি পেনসিলভানিয়ায় ট্রাম্পের একটি সমাবেশে যোগ দেওয়া অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফ্লো এবারহার্ট (৭৩) বলেন, ‘আমার মতে, ট্রাম্প সুবিধাজনক অবস্থানে আছেন। কারণ মূলত যা কিছু ঘটছে, তার কিছুই জানেন না কমলা। তিনি কথাই বলতে পারেন না।’

তিনি আরো বলেন, ‘ট্রাম্প পুরোপুরি ঠিক থাকবেন। এমন কোনো বিষয় নেই, যা সম্পর্কে ট্রাম্প জানেন না।’

কমলার তরুণ সমর্থক নিউ হ্যাম্পশায়ার অঙ্গরাজ্যের জ্যামিলা স্কেলস মনে করেন, ট্রাম্পের বিরুদ্ধে নিজের শক্ত অবস্থান ধরে রাখতে সক্ষম কমলা। তিনি বলেন, কমলা ভালো করবেন। তিনি খুব ভালোভাবেই তাঁকে (ট্রাম্প) ঘায়েল করবেন।

স্কেলস আরো বলেন, ‘আমার আর তর সইছে না। সত্যিই পারছি না। আমার বিশ্বাস, যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অসাধারণ দিন হতে যাচ্ছে এটি।’

বিতর্কে ট্রাম্পের আক্রমণাত্মক বক্তব্যর বিষয়টি অপরিচিত নয়। তবে ট্রাম্পের সমর্থক জিমি ট্যাগার্ট মনে করেন, কমলাকে মোকাবেলায় ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করতে হবে ট্রাম্পকে। তিনি বলেন, তাঁকে (ট্রাম্প) চুপ থাকতে হবে। তিনি (কমলা) নিজেই ধরা খাবেন। কারণ তিনি (কমলা) কিছুই করতে পারবেন না। ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে গত সাড়ে তিন বছরে কিছুই করেননি তিনি।’

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button