Hot

উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক: শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ আইনি প্রক্রিয়ায়, সংস্কার প্রতিবেদনের পর সংলাপ, এর পর নির্বাচন

গণহত্যা, নির্যাতন-নিপীড়নের বিচারের জন্য ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে দেশে ফেরত আনা হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সভায় গতকাল বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। এ সময় যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম উপস্থিত ছিলেন।

শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরত আনা প্রসঙ্গে রিজওয়ানা হাসান বলেন, এ ব্যাপারে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট– গণহত্যা, নির্যাতন-নিপীড়নের বিচারের স্বার্থে, সর্বোপরি একটা ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার মুখপাত্র হিসেবে বিচারের প্রক্রিয়ায় তাঁকে থাকতে হবে। কারণ এখানে তাঁর দায়-দায়িত্বের একটা ব্যাপার আছে। উপদেষ্টা আরও বলেন, প্রত্যাবর্তনের কথা বলা হয়েছে। সেই প্রত্যাবর্তন কোন প্রক্রিয়ায় হবে; দুই দেশের মধ্যে কীভাবে কথা হবে, সেগুলো পরের ব্যাপার। যখন আইনি প্রক্রিয়া শুরু হবে তখন এগুলো আমরা দেখব।

বৈঠকে ভবিষ্যতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করণীয় নিয়ে আলোচনা করেন উপদেষ্টারা। এ ছাড়া বৈঠকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়েছে। বৈঠক শেষে জানানো হয়, দেশে লোডশেডিংয়ের কারণে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে। আগামী দু’তিন সপ্তাহের মধ্যে লোডশেডিং সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। 
উপদেষ্টা পরিষদের সভায় বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যে পারস্পরিক বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার পথ প্রশস্ত করার লক্ষ্যে আয়ের ওপর দ্বৈত কর আরোপ পরিহার ও রাজস্ব ফাঁকি রোধ সংক্রান্ত স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুসমর্থনের প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। এ ছাড়া ফারমার্স ব্যাংক (বর্তমান পদ্মা ব্যাংক) লিমিটেডের বিভিন্ন শাখায় বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ও জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের স্থায়ী আমানত আদায়ে ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়। 

সংস্কার প্রতিবেদনের পর সংলাপ, এর পর নির্বাচনের সিদ্ধান্ত
রিজওয়ানা হাসান বলেন, সংস্কারের জন্য সরকার যে ছয়টি কমিশন গঠন করেছে, সেগুলো আগামী তিন মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে পারবে বলে আশা করছে সরকার। তারপর এক পর্যায়ে তা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে যাবে সরকার। ওই সংলাপের মাধ্যমে রাজনৈতিক মতৈক্য গড়ে সংস্কার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অঙ্গীকার, সুনির্দিষ্ট কোনো কোনো ক্ষেত্রে সংশোধনী এনে তারপর নির্বাচনের কথা ভাবছে সরকার।
ব্রিফিংয়ে একজন সাংবাদিক এরশাদ সরকারের সময়েও এ রকম কিছু সংস্কার কমিশন গঠিত হয়েছিল উল্লেখ করে তা বাস্তবায়ন করে যেতে না পারার কথা উল্লেখ করেন। একই সঙ্গে এবারের সংস্কার কাঠামো বাস্তবায়ন বিষয়েও জানতে চান।

জবাবে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, এরশাদ সরকারের সঙ্গে এই সরকারের বড় পার্থক্য রয়েছে। এই সরকার একটি গণঅভ্যুত্থানের ফসল। এই গণঅভ্যুত্থানে দুটি শব্দ ছিল। একটি হলো বৈষম্যবিরোধী, আরেকটি হচ্ছে সংস্কার। এর উদ্দেশ্যই হচ্ছে একটি প্রকৃত গণতন্ত্রের দিকে দেশটিকে নিয়ে যাওয়া। যেহেতু এরশাদ সরকারে সঙ্গে এই সরকারের মৌলিক পার্থক্য আছে, তাই সেই সরকারের কর্মপদ্ধতি, কর্মপরিকল্পনা ও উদ্দেশ্যকে কোনোভাবেই মেলানো যাবে না।

রিজওয়ানা হাসান আরও বলেন, ‘কমিশনের প্রতিবেদন আদৌ বাস্তবায়িত হবে কিনা, তা নির্ভর করবে এর সপক্ষে রাজনৈতিক ঐক্য গড়ে তুলতে পারি কিনা। এ জন্য সংস্কার বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোরও মতামত চাচ্ছি। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও নিশ্চয় এতদিনে উপলব্ধি হয়েছে যে, এরশাদ সরকার করে যেতে পারেনি, তার ফল কী হয়েছে, এটি রাজনৈতিক দলগুলো দেখেছে। তারাও কোনো সংস্কার করেনি। এর ফল কী হয়েছে, এটাও ৫ আগস্ট গোটা জাতি দেখেছে। কোনো রাজনৈতিক দল নিশ্চয় অজনপ্রিয় হয়ে আবার একই রকম ফলাফল দেখতে চাইবে না। এ জন্য প্রথম থেকেই আমরা মতবিনিময়ে তাদের অন্তর্ভুক্ত করেছি। এক পর্যায়ে আমরা সংলাপে যাব। ওই সংলাপের মাধ্যমে রাজনৈতিক মতৈক্য গড়ে সংস্কার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অঙ্গীকার, সুনির্দিষ্ট কোনো কোনো ক্ষেত্রে সংশোধনী এনে তারপর নির্বাচনের কথা ভাবছি। রাজনৈতিক দলগুলোই ইতোমধ্যে স্পষ্ট করেছে– আগে সংস্কার, পরে তারা নির্বাচনে যেতে চায়। কাজেই আজকের দিনে বাস্তবতা ও প্রেক্ষিতও ভিন্ন।’

তিনি বলেন, সংস্কার প্রস্তাব যেগুলো আসছে তার মধ্যে কিছু কিছু জিনিস কিন্তু পত্রপত্রিকায় জনগণের মতামত হিসেবেও আছে। কারও কারও গবেষণা হিসেবেও আছে। এগুলো নিয়ে হয়তো তারা কাজ শুরু করবেন। এর মধ্যে কংক্রিট যে প্রস্তাবগুলো রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে আহ্বান করেছি, এগুলো চলে আসবে। সুতরাং তাদের টার্মস অব রেফারেন্স বা কর্মপরিধি ঠিক করতে আমাদের হয়তো আরও দু’তিন সপ্তাহ লাগবে। সংলাপের মাধ্যমে রাজনৈতিক ঐক্য গড়ে সংস্কার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অঙ্গীকার ও সংশোধনী আনার পরই সরকার নির্বাচনের কথা ভাবছে বলে স্পষ্ট করেন তিনি।

শ্রমিক অসন্তোষের পেছনে বিদেশি ষড়যন্ত্র
দেশের তৈরি পোশাক খাতে অস্থিতিশীলতার পেছনে বিদেশি ষড়যন্ত্র এবং শ্রমিকদের কিছু যৌক্তিক দাবি আছে বলে এ সময় জানান শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। শ্রমিক অসন্তোষে অর্ডার ক্যান্সেল হচ্ছে বলেও জানান তিনি। ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, এখানে ভেতরে ষড়যন্ত্র যেমন আছে, আবার শ্রমিকদের জেনুইন কিছু দাবিও আছে। দীর্ঘ ১৬ বছর শ্রমিকরা যে বঞ্চনার শিকার হয়েছে, তারা তাদের কথাগুলো বলতে পারত না। যে দাবিগুলো আছে, সেগুলো একটা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আমাদের কাছে এলে আমরা সেগুলো সমাধান করব।

উস্কানিদাতাদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর হবে জানিয়ে শ্রমবিষয়ক উপদেষ্টা বলেন, যারা বহিরাগত এবং ঝুট ব্যবসা দখলকে কেন্দ্র করে সেখানে অস্থিতিশীলতা করছে বা সেখানে উস্কানি দিচ্ছে তাদের ব্যাপারে সরকার ইতোমধ্যে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে এবং ভবিষ্যতে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেবে। খুব দ্রুততম সময়ে শ্রমিক অসন্তোষ নিয়ন্ত্রণে আসবে এবং শ্রমিকদের যৌক্তিক দাবিগুলো সরকার সমাধান করতে পারবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, আমরা দেখেছি, বেকার যুব সংঘের নামে যারা বিভিন্ন ফ্যাক্টরিতে হামলা করেছে; অনেক ফ্যাক্টরিতে শ্রমিকরা বেরিয়ে এসে প্রতিহত করেছে। আপনারা দেখেছেন বেকার যুব সংঘের একজনকে নেত্রকোনা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দেখা গেল, তিনি ছাত্রলীগের পদধারী নেতা ছিলেন।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button