USA

সাবেক প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারের শতবর্ষে পদার্পণ, বাইডেনের শুভেচ্ছা

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার গতকাল মঙ্গলবার শতবর্ষে পদার্পণ করেছেন। শততম জন্মদিন উপলক্ষে তাঁকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাসহ বিশিষ্টজন এবং তাঁর শুভাকাঙ্ক্ষীরা।

জিমি কার্টারই হলেন প্রথম কোনো সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট, যিনি শতবর্ষে পদার্পণের মাইলফলক অর্জন করলেন।

যুক্তরাষ্ট্রের যেকোনো প্রেসিডেন্টের চেয়ে সবচেয়ে দীর্ঘ আয়ুর অধিকারী প্রেসিডেন্ট কার্টার ১৯৭৭–এর জানুয়ারি থেকে ১৯৮১ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত এ পদে দায়িত্বপালন করেন। হোয়াইট হাউস ছাড়ার পর দশকের পর দশক ধরে বিভিন্ন মানবিক কর্মকাণ্ডে নিজেকে যুক্ত করে রেখেছেন জিমি কার্টার। এর মধ্যে রয়েছে মানবাধিকার রক্ষা, দেশে দেশে দারিদ্র্য হ্রাসে কর্মসূচিও।

১৯ মাস ধরে যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের প্লেইনস এলাকায় নিজ বাসভবনে নিবিড় সেবাযত্নে রয়েছেন সাবেক এই প্রেসিডেন্ট। তাঁর নাতি জেসন কার্টার বলেছেন, নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিসকে ভোট দেওয়ার আগ্রহ ব্যক্ত করেছেন জিমি কার্টার।

জিমি কার্টারের জন্মদিনে তাঁকে শুভেচ্ছা জানিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সরকারি বাসভবন হোয়াইট হাউসের প্রাঙ্গণে বড় বড় অক্ষরে ‘হ্যাপি বার্থডে প্রেসিডেন্ট কার্টার’ লেখা চিহ্ন স্থাপন করা হয়েছে। এ ছাড়া বাইডেন (৮১) এক বিবৃতিতে তাঁর পূর্বসূরি এই প্রেসিডেন্টকে বিশ্ববাসী ও মার্কিনদের জন্য ‘নৈতিক শক্তি’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

সাবেক প্রেসিডেন্ট ওবামাও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক ভিডিও বার্তায় বলেছেন, ‘শুভ ১০০তম জন্মদিন, প্রেসিডেন্ট কার্টার! আপনার বন্ধুত্ব, আপনার মৌলিক শিষ্টাচার এবং @কার্টারসেন্টারের মাধ্যমে অসাধারণ সব কর্মকাণ্ডের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। এ দেশের জন্য আপনি যা করেছেন, মিশেল ও আমি সে জন্য আপনার কাছে কৃতজ্ঞ।’

এদিকে কার্টারকে শুভেচ্ছা জানাতে গতকাল তাঁর বাড়িতে পরিবারের প্রায় ২৫ জন সদস্য সমবেত হন বলে জানিয়েছে অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস। সেখানে কেক কেটে তাঁর জন্মদিন উদ্‌যাপন করা হয়।

জিমি কার্টারের ছেলে চিপ কার্টার বার্তা সংস্থা এপিকে বলেন, তাঁর লক্ষ্য আসছে নির্বাচনে ভোট দেওয়া। এ বিষয়ে উদ্‌গ্রীব হয়ে আছেন তিনি। চিপ আরও বলেন, ‘দুই মাস আগে তাঁর কাছে আমি জানতে চেয়েছিলাম, আপনি কি শতবর্ষী হতে চান। তখন তাঁর জবাব ছিল, ‘‘আমি কমলা হ্যারিসকে ভোট দেওয়ার জন্য বাঁচতে চাই।’’’

জিমি কার্টারের শততম জন্মদিন উপলক্ষে হোয়াইট হাউস প্রাঙ্গণে শুভেচ্ছা চিহ্ন। ১ অক্টোবর ২০২৪ছবি: এপি

কার্টারকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনও। জন্মদিনে এক্সে পাঠানো এক বার্তায় তাঁর মঙ্গল কামনা করেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রের যেকোনো প্রেসিডেন্টের চেয়ে সবচেয়ে দীর্ঘ আয়ুর অধিকারী প্রেসিডেন্ট কার্টার ১৯৭৭–এর জানুয়ারি থেকে ১৯৮১ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত এ পদে দায়িত্বপালন করেন। ১৯৮০ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রতিদ্বন্দ্বী রোনাল্ড রিগ্যানের কাছে পরাজিত হয়ে হোয়াইট হাউস ছাড়েন কার্টার।

শুভ ১০০তম জন্মদিন, প্রেসিডেন্ট কার্টার! আপনার বন্ধুত্ব, আপনার মৌলিক শিষ্টাচার এবং কার্টারসেন্টারের মাধ্যমে অসাধারণ সব কর্মকাণ্ডের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। এ দেশের জন্য আপনি যা করেছেন, মিশেল ও আমি সে জন্য আপনার কাছে কৃতজ্ঞ।

বারাক ওবামা, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট

হোয়াইট হাউস ছাড়ার পরও দশকের পর দশক ধরে বিভিন্ন মানবিক কর্মকাণ্ডে নিজেকে যুক্ত করে রেখেছেন জিমি কার্টার। এর মধ্যে রয়েছে মানবাধিকার রক্ষা, দেশে দেশে দারিদ্র্য হ্রাসে কর্মসূচিও। আন্তর্জাতিক সংঘাতের শান্তিপূর্ণ সমাধান খুঁজে পেতে নিরলস প্রচেষ্টা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নতিসাধন এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখার স্বীকৃতি হিসেবে ২০২২ সালে তাঁকে নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়া হয়।

জিমি কার্টার প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতায় থাকাকালে যুক্তরাষ্ট্রে অর্থনৈতিক দুর্দশা চলছিল। তাঁর শাসনকালেই ইরানে মার্কিন দূতাবাসে যুক্তরাষ্ট্রের ৫২ জন কূটনীতিক ও নাগরিককে জিম্মি করা হয়েছিল। তিনি ক্ষমতা ছাড়ার পর এই জিম্মিদশার অবসান হয়। অবশ্য ক্যাম্প ডেভিড চুক্তি স্বাক্ষরের ক্ষেত্রে কার্টারের ভূমিকা ছিল। এর মধ্য দিয়ে মিসর ও ইসরায়েলের মধ্যে শান্তিচুক্তি সম্ভব হয়।

রোজেলিন কার্টারের সঙ্গে জিমি কার্টারের দাম্পত্য জীবন ছিল দীর্ঘ ৭৭ বছরের। গত বছরের নভেম্বরে মারা যান রোজেলিন। সর্বশেষ কার্টারকে জনসমক্ষে দেখা গিয়েছিল তাঁর স্ত্রীর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার অনুষ্ঠানে। সেখানে হুইলচেয়ারে বসে ছিলেন তিনি।

জিমি কার্টার কয়েক বছর ধরে ত্বকের ক্যানসার মেলানোমাসহ বিভিন্ন শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন। ইতিমধ্যে তাঁর যকৃৎ ও মস্তিষ্কে ক্যানসার ছড়িয়ে পড়েছে। তিনি আনুষ্ঠানিক কোনো চিকিৎসা না নিয়ে গত বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে বাকি জীবন কাটিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button