Bangladesh

উচ্চ সুদেও ব্যাংকে টাকা রাখতে অনীহা

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাজারভিত্তিক সুদহার নির্ধারণ করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে বাড়ছে ঋণ ও আমানতের সুদ হার। মূলত টাকার প্রবাহ কমিয়ে আনতেই সুদের হার ধারাবাহিকভাবে বাড়ানো হচ্ছে। তবে বিভিন্ন ব্যাংকের আকর্ষণীয় সুদেও নগদ টাকা ব্যাংকে না রেখে হাতেই রাখছেন বেশি। এতে করে ব্যাংক ব্যবস্থায় তারল্য সংকট আরও বেড়েছে।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিগত সরকারের আমলে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা ঋণের নামে ব্যাংকের বিপুল পরিমাণের অর্থ লুট করায় পুরো খাতটির ওপর আস্থার সংকট বিরাজ করছে। তাই টাকা তুলে হাতে রাখছেন মানুষ। এতে বাড়ছে আর্থিক ঝুঁকি। চুরি-ডাকাতি বেড়ে যাওয়াসহ অনিরাপদ খাতে বিনিয়োগের মাধ্যমে নিঃস্ব হতে পারেন অনেকে।

বর্তমানে ব্যাংক ব্যবস্থায় আমানতের সুদ হার ১৩ থেকে ১৫ শতাংশ। তবে এমন উচ্চ সুদহার সত্ত্বেও এক বছরের ব্যবধানে ব্যাংকের বাইরে টাকা রাখার পরিমাণ বেড়েছে ১৩ শতাংশের বেশি। ২০২৩ সালের আগস্টে ব্যাংকের বাইরে থাকা টাকার পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৫৮ হাজার ৩৫৬ কোটি টাকা, যা চলতি বছরের আগস্ট শেষে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৯২ হাজার ৪৩৪ কোটি টাকা। এক বছরে বাইরে থাকা টাকার পরিমাণ বেড়েছে ৩৪ হাজার ৭৮ কোটি টাকা। সর্বশেষ গত জুলাই মাসের তুলনায়ও আগস্টে ১ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা বেড়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোতে নানা কেলেঙ্কারির কারণে ২০২৩ সাল থেকেই সংকট দেখা দেয় খাতটিতে। এতে করে গত বছরের নভেম্বর থেকে ব্যাংকের বাইরে থাকা টাকার পরিমাণ বাড়তে শুরু করে। যেটা চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত অব্যাহত আছে। গত ১০ মাস ধরে মানুষের হাতে নগদ টাকা বা ব্যাংকের বাইরে থাকা টাকার পরিমাণ ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, গত বছরের অক্টোবরে ব্যাংকের বাইরে মানুষের হাতে নগদ টাকার পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৪৫ হাজার ৯৪৩ কোটি টাকা। পরের মাস নভেম্বরে সেটা বেড়ে দাঁড়ায় ২ লাখ ৪৮ হাজার ৪৪১ কোটি টাকা, ডিসেম্বরে ২ লাখ ৫৪ হাজার ৮৬০ কোটি, জানুয়ারিতে ২ লাখ ৫৭ হাজার ২৯৫ কোটি, ফেব্রুয়ারিতে ২ লাখ ৫৭ হাজার ৫৭৪ কোটি, মার্চে ২ লাখ ৬১ হাজার ১৯৫ কোটি, এপ্রিলে বেড়ে দাঁড়ায় ২ লাখ ৭০ হাজার ৬৫৮ কোটি, মে মাসে ২ লাখ ৭০ হাজার ৬৫৮ কোটি, জুনে ২ লাখ ৯০ হাজার ৪৩৬ কোটি এবং সর্বশেষ জুলাইয়ে বেড়ে দাঁড়ায় ২ লাখ ৯১ হাজার ৬৩০ কোটি টাকা এবং সর্বশেষ আগস্টে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৯২ হাজার ৩৪৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ ১০ মাসে ব্যাংকের বাইরে মানুষের হাতে নগদ টাকা ধারাবাহিক বেড়েছে ৪৩ হাজার ৯০২ কোটি টাকা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বেশ কিছু কারণে মানুষের হাতে থাকা নগদ অর্থের পরিমাণ বেড়েছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের খরচ বেশি হয়। এজন্য ব্যাংক থেকে টাকা তুলে হাতে রাখে। তারপর ব্যাংক খাতের সামগ্রিক পরিস্থিতির কারণে কিছু ব্যাংকের প্রতি মানুষের আস্থায়ও চিড় ধরেছে। ওই সব ব্যাংক থেকে আমানত তুলে নেন আমানতকারীরা। ফলে মানুষের হাতে নগদ অর্থের পরিমাণ বেড়ে যায়।

সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, ব্যাংকে জমা রাখা টাকা ফেরত পাওয়া নিয়ে ক্ষুদ্র আমানতকারীদের দুশ্চিন্তার কিছু নেই। সব আমানতকারীর পাশে আছে সরকার। দুর্বল হয়ে পড়া ব্যাংকগুলোর সঙ্গে প্রতিদিন সভা হচ্ছে জানিয়ে আহসান মনসুর বলেন, প্রতিদিন তাদের তদারকির ওপর রাখা হয়েছে। এসব ব্যাংক যেন আরও নিয়মের মধ্যে পরিচালিত হয়, সেই চেষ্টা চলছে। সব সমস্যা চিহ্নিত হলে প্রয়োজনে ব্যাংক আইনে পরিবর্তন আনা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের লক্ষ্য সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button