কালো পতাকা নিয়ে মাঠে এরা কারা?
সম্প্রতি ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কালেমা লেখা কালো ও সাদা পতাকা নিয়ে মিছিলের বেশকিছু ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এসব মিছিলে ফিলিস্তিনে গণহত্যা বন্ধ ও ইসলামী খেলাফত কায়েমের দাবি তোলা হয়েছে। সমাবেশে মহানবী হযরত মুহম্মদ (সা.)-এর কটূক্তির প্রতিবাদও করা হয়েছে। কিন্তু কারা এসব কর্মসূচি পালন করছে। তাদের নেপথ্যে কারা আছে এ নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। গোয়েন্দারাও আশঙ্কা করছেন কোনো স্বার্থান্বেষী পক্ষ এই কাজে নেমে থাকতে পারে। সরকার পরিবর্তনের পর যখন সবকিছু স্থিতিশীল করার চেষ্টা করা হচ্ছে এই মুুহূর্তে বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করতেই আইএস ধাঁচের এসব কর্মসূচি দিয়ে মাঠে নামিয়েছে। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এ ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িতদের বিষয়ে খোঁজ নেয়া হচ্ছে। একটি নিষিদ্ধ সংগঠন এসবের নেপথ্যে ভূমিকা রাখছে বলে গোয়েন্দা তথ্যে উঠে এসেছে। তথ্য জানার পর সরকারের বিভিন্ন সংস্থা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধান ও শিক্ষার্থীদের এ বিষয়ে সচেতন করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। তবে পরিস্থিতির কারণে সব জায়গায় এসব কর্মসূচি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ইসলামী দল সংশ্লিষ্টরাও জানিয়েছেন এই মুহূর্তে কালো পতাকা নিয়ে মিছিল করার কোনো কারণ নেই। যারা করছে তাদের পেছনে কারও কোনো উদ্দেশ্য থাকতে পারে।
গত সপ্তাহে ঢাকার নটর ডেম কলেজ, ঢাকা কলেজ, উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের শিক্ষার্থীদের ঢাকায় আলাদা আলাদা মিছিল বের করতে দেখা যায়। ৬ই অক্টোবর ঢাকার জাতীয় সংসদ ভবনের সামনেও মিছিল করে শিক্ষার্থীরা। তাদের হাতে বাংলাদেশের পতাকা, ফিলিস্তিনের পতাকা এবং কালেমা লেখা পতাকাও ছিল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে অনেকেই নানা সমালোচনা করেছেন। গত শুক্রবার কিশোরগঞ্জের একটি মিছিলের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
এসব কর্মসূচির পেছনে হিযবুত তাহরিরের লোকজন উৎসাহ দিচ্ছে বলে গোয়েন্দা তথ্যে উঠে এসেছে। সর্বশেষ ৭ই অক্টোবর গাজায় হামলার বার্ষিকীর দিনে বড় ধরনের জমায়েতের প্রস্তুতি ছিল এ গ্রুপটির। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক ছিল। এসব গ্রুপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও তাদের কর্মসূচির ছবি প্রচার করছে। এসব কর্মসূচি কোনো রাজনৈতিক দল সাংস্কৃতিক সংগঠন সরাসরি জড়িত নয় বলে অনুসন্ধানে জানা গেছে।
গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক এডভোকেট হাসনাত কাইয়ূম বলেন, বাংলাদেশকে পরিকল্পিতভাবে অস্থিতিশীল করা কিংবা সরকারের ভাবমূর্তিকে ক্ষুণ্ন করতে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে কেউ নামছে। পরাজিত শক্তির এতে ইন্ধন থাকার সম্ভাবনা বেশি, অন্য কেউ হতে পারে যে তারা মাঝপথে ফায়দা লুটতে চায়। আমার ধারণা, এখানে মাফিয়াদের যে সকল সহায়ক শক্তি ছিল তারাই কোনোভাবে বিভিন্ন নামে যা যা করলে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কিংবা আন্দোলনকারী সংস্থাগুলোর ভাবমূর্তির সংকট করা যায় সেটাই পরিকল্পিতভাবে করার চেষ্টা চালাচ্ছে।
দেশের এমন অবস্থায় এই পতাকা নিয়ে মিছিল করার কোনো যৌক্তিকতা নেই বলে মনে করেন খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব অধ্যাপক আবদুল জলিল। তিনি বলেন, এই ধরনের পতাকা নিয়ে মিছিল করার কোনো কারণ দেখি না। এগুলা বাংলাদেশকে বাহিরের দেশে অন্যভাবে চিহ্নিত করার কোনো পরিকল্পনা কিনা এটা নিয়ে আমাদের সন্দেহ আছে।
গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা ও গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি জানান, এমন কয়েকটি মিছিল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখেছি। তবে তাদের উদ্দেশ্য কী সেটি আমলে নিয়ে সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
এই বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া বিভাগের ডিসি মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, এটা আমরা তদন্ত করছি। দেখছি এর সঙ্গে কারও সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা। পর্যবেক্ষণ চলছে। তাদের একজনকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। তদন্তে এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া গেলে পরবর্তীতে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।