Bangladesh

অপরাধ কমছে না রোহিঙ্গা ক্যাম্পে

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে বেড়েছে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড। ক্যাম্পগুলোতে প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে কোনো না কোনো অপরাধ। আধিপত্য বিস্তার, মাদক চোরাচালান, অস্ত্র ব্যবসা, খুন, ধর্ষণ, চুরি, ডাকাতি ইত্যাদি অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড যেন এখন ক্যাম্পগুলোতে নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। গত সোমবারও উখিয়া ১৭ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সন্ত্রাসীদের গুলিতে একই পরিবারের তিনজন নিহত হয়েছেন। সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ধরপাকড় অব্যাহত রাখলেও থামছে না অপরাধীদের তৎপরতা। একাধিক সূত্র জানায়, ক্যাম্পে আরাকান স্যালভেশন আর্মি (আরসা) নতুন করে সংঘটিত হওয়ার চেষ্টা করছে। বিভিন্ন ক্যাম্পের নিয়ন্ত্রণ নিতে আরসা প্রায় সময় আরাকান রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের (আরএসও) সঙ্গে সংঘর্ষে জড়াচ্ছে। সংঘর্ষে দুই পক্ষই ভারী অস্ত্র ব্যবহার করছে। এতে রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দারাও আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। তাদের সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে অনেক স্থানীয় লোকজনও আহত হচ্ছেন।

১৪ এপিবিএন অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মো. ইকবাল বলেন, ওইদিন ভোর সাড়ে ৪টার দিকে ১৫-২০ জন সন্ত্রাসী ক্যাম্প-১৭ এক্স ব্লকে প্রবেশ করে আহমদ হোসেন ও তার পরিবারের সদস্যদের গুলি করে। এতে ঘটনাস্থলে আহাম্মদ হোসেন ও তার ছেলে সৈয়দুল আমিন নিহত হয়। আহত অবস্থায় আহমদ হোসেনের মেয়ে আসমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় মারা যান তিনি। এর আগে ২ অক্টোবর উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নে ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আরসা ও আরএসওর মধ্যে গোলাগুলিতে আবদুর রহমান (১৯) নামে এক যুবক নিহত হন। আহত হন আরও অন্তত পাঁচজন। গত ১৭ অক্টোবর দিনভর উখিয়ার ১৪ ও ১৫ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দুই পক্ষের সংঘর্ষে এক বাংলাদেশিসহ পাঁচজন গুলিবিদ্ধ হন। আরও পাঁচজন আহত হন। রোহিঙ্গা শিবিরে অপরাধী কর্মকাণ্ড বন্ধে তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গত ২০ অক্টোবর ভোরে উখিয়া উপজেলার ১৫ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে অস্ত্র ও অ্যামোনেশনসহ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (৮-এপিবিএন)-এর হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে হোসাইন জোহর (৩২) নামে আরসার গান গ্রুপ কমান্ডার। তিনি আরএসও কমান্ডার খায়রুল আমিন হত্যার এজাহারভুক্ত আসামি। এ ছাড়া ১৯ সেপ্টেম্বর রাতে উখিয়া পালংখালী ক্যাম্প-১৩ থেকে একটি জি থ্রি রাইফেল ও ১০টি গুলিসহ নুরুল ইসলাম (৪৫) নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি আরসার কমান্ডার ছিলেন বলে জানিয়েছে এপিবিএন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নুরুল ইসলাম রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিভিন্ন অপরাধে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। এদিকে, স্থানীয় পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন জানান, ক্যাম্পে গোলাগুলিসহ নানা অপ্রীতিকর ঘটনা নিত্যদিনের। রোহিঙ্গারা গ্রেপ্তার হয় তবে তারা আইনের ফাঁকে বের হয়ে যায়। যার কারণে অপরাধ দমন অনেকটা কঠিন হয়ে পড়েছে। তারা যেন জেল থেকে ছাড়া না পায় সে ব্যবস্থা করতে হবে। তাহলে অপরাধী কর্মকাণ্ড কিছুটা কমতে পারে।

অপরদিকে, রোহিঙ্গা শিবিরে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বন্ধে পুলিশ প্রশাসন ব্যাপক তৎপর রয়েছে। উখিয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মোহাম্মদ আরিফ হোসাইন জানান, রোহিঙ্গা শিবিরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা অনেক তৎপর। আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি রোহিঙ্গা শিবিরে যেন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বন্ধ হয়। উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর হোসেন জানান, রোহিঙ্গারা যেন সীমানা প্রাচীর ভেদ করে বের হতে না পারে সেদিকে প্রশাসনের তীক্ষè নজর রয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রতিদিনই রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অভিযান পরিচালিত হচ্ছে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button