ইসরাইলকে হামলার ‘অনুমতি’ দিয়েছেন বাইডেন
জাতিসংঘে হুঁশিয়ারি ইরানের লেবানন-গাজায় ভয়াবহ হামলায় নিহত ৪৯ : আরো দুই ইসরাইলি রাজনীতিবিদকে হত্যার চেষ্টা করেছে হিজবুল্লাহ
ভয়াবহ হামলার প্রতিশোধ নিতে ইরানে বড় ধরনের পাল্টা হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরাইল। এ বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রকাশ্যে ইসরাইলকে ইরানে হামলা বারণ করলেও গোপনে ‘অনুমতি’ দিয়ে রেখেছেন। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করেছে ইরান।
সোমবার জাতিসংঘে ইরানের রাষ্ট্রদূত আমির সাঈদ ইরাভানি বাইডেনের এই সায় নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করে ইরানের রাষ্ট্রদূত বলেছে, যদি ইসরাইলের প্রতিশোধমূলকভাবে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের ওপর হামলা চালায়, তবে সেই ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রকে পূর্ণ দায়িত্ব বহন করতে হবে। কারণ এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইসরাইলের পরিকল্পনার বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন।
জাতিসংঘে ইরানের রাষ্ট্রদূত আমির সাঈদ ইরাভানি বাইডেনের মন্তব্যকে গভীরভাবে উদ্বেগজনক এবং উসকানিমূলক বলে অভিহিত করেছেন। তিনি জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এবং জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সুইস সভাপতির কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন। গত শুক্রবার যখন বাইডেনকে জিজ্ঞাসা করা হয় যে, বর্তমানে ইসরাইল কীভাবে এবং কখন ইরানের ১ অক্টোবরের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার প্রতিক্রিয়া জানাবে সে সম্পর্কে তার ধারণা রয়েছে কিনা। জবাবে বাইডেন বলেছেন হ্যাঁ এবং হ্যাঁ। এ সংক্রান্ত একটি গোপন নথি সম্প্রতি মার্কিন সেনা সদর দফতর পেন্টাগন থেকে ফাঁস হয়েছে। এরপর থেকেই এ নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে। বাইডেনের গোপন অনুমতি পেয়ে গত ১৫-১৬ অক্টোবর থেকেই ইসরাইলের বিমান ও নৌবাহিনী ইরানে হামলার প্রস্তুতি নিতে থাকে। এদিকে ইসরাইলকে ইরানে হামলার অনুমতি সংক্রান্ত নথি ফাঁস হওয়ার ঘটনায় বাইডেন বেশ বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছেন। হোয়াইট হাইজের নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র জন কিরবি সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, গোপন নথি ফাঁসের ঘটনায় বেশ উদ্বিগ্ন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
উল্লেখ্য, ইরানকে গত ১ অক্টোবরের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার জবাব দিতে সেখানে বড় ধরনের হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরাইল। সোমবার ইসরাইলের রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশন চ্যানেল কান ১১-কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এ তথ্য জানিয়েছেন দেশটির এক সরকারি কর্মকর্তা। সাক্ষাৎকারে ওই কর্মকর্তা বলেন, ইরানে একটি বড় হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরাইল। এছাড়া ইরানের যে কোনো সম্ভাব্য হামলা ঠেকানোর জন্য (ইসরাইলের) প্রতিরক্ষা বাহিনীকে আরও শক্তিশালী করা হচ্ছে।
লেবানন-গাজায় ভয়াবহ হামলায় নিহত ৪৯ : লেবানন ও ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা জুড়ে ইসরাইলি হামলা অব্যাহত রয়েছে। গাজা উপত্যকার জাবালিয়া শরণার্থীশিবিরে স্থানীয় সময় সোমবার ভোরে হামলা শুরু করে ইসরাইলি বাহিনী। এসব হামলায় অন্তত ৩৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এদিকে লেবাননজুড়ে ইসরাইলি হামলায় অন্তত ১৬ জনের প্রাণহানি ঘটেছে।
বৈরুত এবং লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে আরো বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। দেশটির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, হিজবুল্লাহকে সমর্থন দেয় এমন একটি ব্যাংকের কয়েকটি শাখায়ও হামলা করা হয়েছে। এর মধ্যে বৈরুতের দক্ষিণে দাহিয়েহ শহরে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। বেক্কা উপত্যকা ও লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলের মতো ওই এলাকাটিও হিজবুল্লাহ নিয়ন্ত্রণ করে। লেবাননের ২৫টি এলাকা, যার ১৪টিই রাজধানী বৈরুতে, সেসব এলাকায় রাতভর হামলা হতে পারে বলে সেখানকার বাসিন্দাদের ইসরাইল আগেই সতর্ক করে দিয়েছিল। অন্যদিকে হিজবুল্লাহ বলছে, গত রবিবারও ইসরাইলে সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে রকেট হামলা চালিয়েছে তারা। দক্ষিণ লেবাননে ইসরাইলি সেনাদের লক্ষ্য করে গুলি করা হয়েছে বলেও দাবি করেছে তারা। স্থানীয় সময় রবিবার সন্ধ্যায় আইডিএফ জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরাইলের উত্তরাঞ্চলে কয়েক ডজন রকেট নিক্ষেপ করা হয়েছে।
গত রবিবার লেবাননে থাকা জাতিসংঘের অন্তর্বর্তী বাহিনীর একটি পর্যবেক্ষণ টাওয়ার এবং লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর মারওয়াহিনে ইসরাইল সীমান্তে জাতিসংঘ অবস্থানের নিরাপত্তাবেড়া ধ্বংস করে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে আইডিএফের বিরুদ্ধে। ইউনাইটেড নেশনস ইনটেরিম ফোর্স ইন লেবানন বা ইউনিফিল এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘জাতিসংঘ অবস্থান অমান্য করা ও জাতিসংঘ সম্পদ ধ্বংসের মতো অপরাধ আন্তর্জাতিক আইন ও নিরাপত্তা পরিষদের ১৭০১ নম্বর প্রস্তাবের নিদারুণ লঙ্ঘন।’
আরও দুই ইসরাইলি রাজনীতিবিদকে হত্যার চেষ্টা করেছে হিজবুল্লাহ : সূত্রের বরাত দিয়ে আল আরাবিয়া টিভি চ্যানেলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লেবাননের শিয়া হিজবুল্লাহ আন্দোলন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর বাড়িতে হামলার পর আরও দুই ইসরাইলি রাজনীতিবিদকে হত্যার চেষ্টা করেছে। হত্যাচেষ্টার লক্ষ্যবস্তু যে রাজনীতিবিদরা ছিলেন তাদের নাম প্রকাশ করা হয়নি। যাইহোক, এটি উল্লেখ করা হয়েছে যে, ইসরাইলি কর্মকর্তাদের উপর হামলা অব্যাহত থাকলে, লেবাননের রাজধানী বৈরুতের দক্ষিণ উপকণ্ঠে সংগঠনের মূল ঘাঁটি দাহিয়াহকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করার হুমকি দিয়ে একটি বার্তা দিয়ে হিজবুল্লাহর পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ইসরাইল। আল আরাবিয়া টিভি চ্যানেল তাদের সূত্রের বরাত দিয়ে বলেছে, হিজবুল্লাহ ‘বার্তাটি পেয়েছে, তবে তারা এখনও এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি’।
এর আগে, ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ১৯ অক্টোবর সিজারিয়া শহরের কাছে একটি ড্রোন হামলায় তাকে এবং তার স্ত্রীকে হত্যার চেষ্টা করার জন্য একটি ইরানী প্রক্সিকে অভিযুক্ত করেছিলেন এবং প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে এটি হামাস এবং হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালিয়ে যাওয়া থেকে ইসরাইলকে বিরত করবে না। পরিবর্তে, ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের উপদেষ্টা দিমিত্রি গেন্ডেলম্যান বলেছেন যে, ড্রোনটি সিজারিয়াতে নেতানিয়াহুর বাড়ির দিকে হামলার জন্য পাঠানো হয়েছিল। তিনি বলেন, এ ঘটনায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি এবং হামলার সময় প্রধানমন্ত্রী ও তার স্ত্রী বাড়িতে ছিলেন না।