সেলফি যখন ঝুঁকি!
সারা দুনিয়ায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দৌরাত্ম্য। পুরোনো ছবি, কণ্ঠ বা সেলফি– যে কোনো সূত্র থেকে চকিত তথ্য মুহূর্তেই হাজির করবে। কিন্তু প্রযুক্তির অপব্যবহার জাগিয়েছে নতুন শঙ্কা। বিশেষ করে সেলফির ছবি থেকে অভূতপূর্ব কিছু অপরাধের ঘটনা ভাবাচ্ছে। লিখেছেন সাব্বিন হাসান
হুটহাট সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করা নিজের সেলফি থেকেও ঘটতে পারে বড় ধরনের প্রতারণা। কয়েকটি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এ বিষয়ে বিশেষ সতর্ক করেছেন সাইবার বিশেষজ্ঞরা।
যখন-তখন সেলফি তুলছেন, ভালো। কিন্তু তা নিজের সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করার আগে সতর্কতা মেনে চলার সময় এখন। নির্দেশ অমান্য করলে যত্রতত্র সেলফি হয়ে উঠতে পারে প্রতারণার ফাঁদ।
পরিবার-পরিজন নিয়ে ঘুরতে গেছেন, আনন্দ উপভোগ করছেন। সঙ্গে থাকা অত্যাধুনিক স্মার্টফোনে সেলফি তুললেন চটজলদি। মুহূর্তেই সেলফি ছবির ক্যাপশন দিয়ে তা উন্মুক্ত করে দিলেন সোশ্যাল মিডিয়ার দেয়ালে। আনন্দ আর ভালো লাগা মুহূর্তের তোলা ছবি সবার নজরে পৌঁছে দিতে সাধারণত আপত্তি থাকে না আজকাল।
সারাবিশ্বের কোটি কোটি সেলফিভক্ত এমন চর্চাই করেন। অনেক ছবি শেয়ার হয়ে সামাজিক মাধ্যমে আবার ভাইরাল হয়ে যায়। কিন্তু বর্তমানে সেলফি থেকেও বিপদে পড়ার ঘটনা ও আশঙ্কা খুঁজে পেয়েছেন সাইবার বিশেষজ্ঞরা।
কারণ, সপরিবারে বাইরে ঘুরতে গিয়ে তোলা ছবি থেকে সেলফি প্রতারণার পথ খুঁজে নিয়েছে অপরাধী চক্র। স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন আসতেই পারে– কীভাবে সেলফি থেকে প্রতারণার ফাঁদ তৈরি হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বদেশের যে কোনো প্রান্ত বা বিদেশে সপরিবারে বেড়াতে গিয়ে ছবি পোস্ট করলে প্রযুক্তির সহায়তায় ওই ছবির লোকেশন খুঁজে বের করা খুবই সহজ এখন। সাইবার জগতে বিচরণ করে এমন যে কেউ ওই ঘুরতে যাওয়া পরিবার সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে বহুবিদ উপায়ে প্রতারণার কৌশল সাজাতে পারে।
উদাহরণে বলা যায়, ওই পরিবার যদি তাদের বাড়ি অরক্ষিত রেখে যায়, তা হলে প্রতারক সেখানে চুরির পরিকল্পনা করতে পারে।
শুধু তাই নয়, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) সহায়তায় পরিচিত কারও গলা ক্লোন করে ওই পরিবারে ঘনিষ্ঠ কারও সঙ্গে যোগাযোগ করে বিপদের খবর পৌঁছে দিয়ে চাওয়া হতে পারে মোটা টাকা। বিশ্বের কয়েকটি দেশের রাজধানীতে এমন কিছু অভিযোগের প্রমাণ মিলেছে। এমন ঘটনাও ঘটেছে, সেলফি থেকে এক নারীর ছবি ক্রপ করে তা অশ্লীল ছবির সঙ্গে যোগ করে টাকা আদায়ের চেষ্টাও করা হয়। যদিও পুলিশ অভিযুক্ত পরিবারকে সতর্ক করেছে। তবে অপরাধীদের শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।
ঠিক একইভাবে চীন, জাপান, ভারতের কয়েকটি শহরে উল্লেখযোগ্য ঘটনা শনাক্ত করেছেন সাইবার বিশেষজ্ঞরা। ঘটনার বিবৃতিতে উল্লেখ, সময়ের আধুনিক ক্যামেরায় দুর্দান্ত কোয়ালিটির ছবি ধারণ করা সম্ভব। ফলে সাইবার প্রতারকরা ওই সব ছবির মধ্যে উপস্থিত কারও হাতের ছাপ কৌশলে স্ক্যানের মাধ্যমে আলাদা করে নিতে পারছে। ঠিক তার পরই টার্গেট করা ব্যক্তির নাম, ঠিকানা খুঁজে বের করে ব্যাংক অ্যাকাউন্টের খোঁজ নিয়ে বায়োমেট্রিক পদ্ধতির মাধ্যমে ব্যাংক বা ফিনটেক অ্যাপ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনা চিহ্নিত করেছেন বিশ্লেষকরা।
বিশ্বের কয়েকটি জনবহুল শহরে এমন বেশ কিছু অভিযোগ জমা পড়ে। ঠিক তখনই তা খতিয়ে দেখতে অনুসন্ধান চালিয়েছেন সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা। তখন থেকেই সেলফিকেন্দ্রিক সতর্কতার কথা বলতে শুরু করেছেন তারা। যে কেউ সেলফি সামাজিক যে কোনো মাধ্যমে প্রচার ও প্রকাশের সময়ে অবশ্যই থাম্বস আপ সাইনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন। এ ছাড়া অন্য কোনোভাবে যেন নিজের হাতের রেখা সুস্পষ্ট না হয়– এমন ছবি পোস্ট করা থেকে বিরত থাকবেন। নিরাপত্তার স্বার্থে এসব পরামর্শ মেনে চলার তাগিদ দিয়েছেন সাইবার বিশেষজ্ঞরা।
নিজের ও পরিবারের জীবনাচরণ সহজেই সবার নজরে আনা উচিত নয়। এমনকি ভ্রমণ করছেন, তা তাৎক্ষণিক আপডেট না দিয়ে বরং পরে তা শেয়ার করতে পারেন। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অনেক কঠিন কাজকে তুড়ি মেরে করে ফেলতে পারে; ঠিক সে কারণেই নিরাপত্তার ঝুঁকি বাড়ছে প্রতিনিয়ত, প্রতিমুহূর্তে, সবখানে।