আজ বিশ্বের ক্ষমতাধর পদের লড়াই
আজ শুরু হয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর পদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের লড়াই। শক্তিশালী গণতন্ত্রের দেশটির এ লড়াইয়ে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে রয়েছেন ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী কমলা হ্যারিস ও রিপাবলিকান দলীয় ডোনাল্ড ট্রাম্প। হোয়াইট হাউসের যাওয়ার দৌড়ে দু’জনেই আত্মবিশ্বাসী।
এমন অনিশ্চিত অবস্থা, উত্তেজনা সাম্প্রতিক সময়ের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আর দেখা যায়নি। কমালা হ্যারিস-ডোনাল্ড ট্রাম্প দু’জনের সামনেই ইতিহাস গড়ার হাতছানি। ট্রাম্প জিতলে ১৩০ বছরের মধ্যে প্রথম কোনো পরাজিত প্রেসিডেন্ট পুনঃনির্বাচিত হতে পারেন। অপরদিকে হ্যারিস জিতলে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো আমেরিকানরা পাবেন কোনো নারী প্রেসিডেন্ট। বিভিন্ন জরিপে তাদের দু’জনেরই ক্ষমতায় যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প বা কমলা হ্যারিসের মধ্যে যেকোনো একজন যদি দুই বা তিন পয়েন্ট এগিয়ে থাকতে পারেন, তা সহজেই জয়ের জন্য যথেষ্ট।
ভোটগ্রহণ
বেশিরভাগ ভোটার আজ মঙ্গলবার ভোটকেন্দ্রে গিয়েই ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন এবং এরপরে ব্যালট গণনা করা হবে। তবে পোস্টাল ভোটিং সিস্টেম ব্যবহার করে বা আগাম ভোটিংয়ের দিনগুলোতে অনেকে আগেই ভোট দিয়ে ফেলেছেন। ইতিমধ্যে ৭ কোটির বেশি ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন।
ভোট গণনা শুরু হয় কখন?
প্রতিটি অঙ্গরাজ্য নিজদের নিয়ম অনুযায়ী ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার সময় নির্ধারণ করে থাকে। এরপর শুরু হয় ভোট গণনা। তবে সাধারণত স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টা থেকে ভোট গণনা শুরু হয়। যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে সময়ের ব্যবধানের কারণে এমনও হতে দেখা যায়, পূর্বাঞ্চলীয় অঙ্গরাজ্যে ভোট গণনা শুরু হয়ে যায়, কিন্তু আলাস্কা ও হাওয়াইয়ের মতো অঙ্গরাজ্যের ভোটাররা তখনও ভোট দিতে থাকেন।
ভোট গণনা পদ্ধতি
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি রাজ্যে ভোটের পদ্ধতির নির্দিষ্ট বিধি রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই তা পরস্পরের থেকে আলাদা। তিনটি প্রাথমিক পদ্ধতির মাধ্যমে ভোট দেন। এগুলো হচ্ছে হ্যান্ডমার্ক করা কাগজের ব্যালট, ব্যালট মার্কিং ডিভাইস (বিএমডি) ও ডাইরেক্ট রেকর্ডিং ইলেকট্রনিক (ডিআরই)। এর মধ্যে সবচেয়ে প্রচলিত এবং সহজ পদ্ধতি কাগজের ব্যালট, প্রায় ৭০ শতাংশ কাগজের ব্যালট ব্যবহার করেন। ২৫ শতাংশেরও বেশি ভোটার ব্যবহার করেন এই কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত ভোটদান পদ্ধতি বিএমডি। ভোটারদের একটি স্ক্রিনে বিকল্প নির্বাচন করতে দেয় এবং তারপর তাদের পছন্দ নিশ্চিত করতে একটি কাগজের ব্যালট প্রিন্ট করা হয় এই ব্যবস্থায়। ডিআরই যন্ত্রনির্ভর পদ্ধতি অনেকটা ইভিএমের মতোই।
যুক্তরাষ্ট্রের ভোট গণনার পদ্ধতিতেও কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে। ভোটের দিন যে ভোট পড়ে তা প্রথমে গণনা করা হয়। এরপর আগাম ও ডাকযোগে আসা ভোট গণনা করা হয়। এরপর অভিবাসী ও সামরিক ভোটও গণনায় আনা হয়। স্থানীয় নির্বাচনী কর্মকর্তারা ভোট যাচাই, প্রক্রিয়াকরণ ও গণনার সঙ্গে যুক্ত থাকেন।
হাতে চিহ্নিত কাগজের ব্যালট এবং বিএমডিতে দেওয়া ভোটগুলো সাধারণত ‘অপটিক্যাল স্ক্যানার’ ব্যবহার করে স্ক্যান করা হয়। এর মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ফলাফল নথিভুক্ত করা যায়। এই প্রক্রিয়াটি একটি রাজ্য-স্তরের নির্বাচন কর্তৃপক্ষ পরিচালনা করেন। যান্ত্রিক পদ্ধতিতে গণনার পাশাপাশি প্রয়োজনে হাতে ভোট গণনারও ব্যবস্থা রয়েছে। এ ছাড়া আগাম ভোটের ক্ষেত্রে চালু ‘মেইল ইন ব্যালট’ ব্যবস্থায় দেওয়া ভোটের বৈধতা যাচাই এবং গণনার প্রক্রিয়াও রয়েছে কয়েকটি প্রদেশে। রাজ্য নির্বাচন কর্তৃপক্ষকে ১১ ডিসেম্বরের মধ্যে ফলাফল ফেডারেল কর্তৃপক্ষকে হস্তান্তর করতে হয়।
ভোট সমান হলে কী হবে
নির্বাচনে কোনো প্রার্থীই যদি স্পষ্ট সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পান, অর্থাৎ প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রার্থী ২৬৯-২৬৯ ইলেকটোরাল কলেজ ভোট পান কিংবা তৃতীয় কোনো প্রার্থী ইলেকটোরাল ভোট জেতেন, সে ক্ষেত্রে মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ ‘প্রতিনিধি পরিষদ’ ভোট দিয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করবে। এটি ‘কন্টিনজেন্ট ইলেকশন’ নামে পরিচিত।
এ ঘটনা মাত্র একবারই হয়েছে, ১৮২৪ সালে। সে বছর ইলেকটোরাল কলেজ ভোট চার প্রার্থীর মধ্যে ভাগাভাগি হওয়ায় কেউ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাননি। অবশ্য এখন রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেটিক পার্টি—এই দুই দলের আধিপত্যের কারণে একই রকম ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা নেই বললে চলে।
কন্টিনজেন্ট ইলেকশন এমন একটি প্রক্রিয়া, যেখানে বিজয়ী প্রেসিডেন্ট প্রার্থীকে নির্ধারণ করবে প্রতিনিধি পরিষদ বা হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভ। এ পরিষদে প্রতিটি অঙ্গরাজ্যের প্রতিনিধিদের থাকবে একটি করে ভোট। জয়ী প্রার্থীকে অবশ্যই সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রতিনিধির ভোট পেতে হবে।
এরপর কংগ্রেসের উচ্চ কক্ষ সিনেট ভাইস প্রেসিডেন্টকে নির্বাচিত করবে। প্রত্যেক সিনেটরের থাকবে একটি ভোট। ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে জিততে প্রার্থীকে সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা (৫১ ভোট) পেতে হবে।
ফলাফল কখন পাওয়া যাবে?
নির্বাচনের সম্ভাব্য বিজয়ী কে, তা জানতে হয়তো কয়েকদিন ধরে অপেক্ষায় থাকতে হবে না। যদিও অনেক সময় মাসের পর মাস ফলাফল ঠিকমতো চূড়ান্ত হয় না। তবে চূড়ান্ত ভোট গণনা হওয়ার অনেক আগেই অঙ্গরাজ্য এবং সম্পূর্ণ নির্বাচনের ফলাফলে সাধারণত বলা সম্ভব হয় যে, কোন প্রার্থী প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন। যেমন পেনসিলভেনিয়ার ফলাফল নিশ্চিত হয়ে যাওয়ায় ২০২০ সালের ৩ নভেম্বর ভোটগ্রহণের তিনদিন পরেই জো বাইডেনকে বিজয়ী বলা সম্ভব হয়েছিল। এ অঙ্গরাজ্য বাইডেনকে ২০টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট প্রদান করে। এর মধ্য দিয়ে জয়ের জন্য তার প্রয়োজনীয় ২৭০টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট নিশ্চিত হয়ে যায়।
২০১৬ সালে অবশ্য ভোটের পরদিন সকালেই ট্রাম্পকে বিজয়ী হিসেবে স্বীকার করে নেন হিলারি ক্লিনটন। জনমত সমীক্ষা বলছে, ট্রাম্পের সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে চলেছে কমলা হ্যারিসের। কিন্তু নির্বাচন বিশ্লেষকদের মতে, ইলেক্টোরাল কলেজের ভোটে এগিয়ে ট্রাম্পই।
এদিকে দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যগুলোতে শেষ মুহূর্তের প্রচারণায় ব্যস্ত দুই প্রার্থী কমলা হ্যারিস ও ডোনাল্ড ট্রাম্প। রবিবার (৩ নভেম্বর) মিশিগানে প্রচারণার সময় গাজায় যুদ্ধ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন কমলা হ্যারিস। আরব আমেরিকানদের ভোটারদের সমর্থন পেতেই এই ধরণের প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
কমলা বলেন, গাজায় মৃত্যু ও ধ্বংসের মাত্রা এবং লেবাননে বেসামরিক হতাহত ও বাস্তুচ্যুত পরিস্থিতির কারণে এ বছরটি কঠিন ছিল। ক্ষমতায় এলে গাজায় যুদ্ধ বন্ধে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। গাজা যুদ্ধ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিলেও ইসরাইলের নিরাপত্তার কথাও উঠে আসে কমলার বক্তব্যে।
একই দিন পেনসিলভানিয়া ও নর্থ ক্যারোলিনায় প্রচারণায় অংশ নেন রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। জো বাইডেনের শাসনামলে যুক্তরাষ্ট্র একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে মন্তব্য করে ট্রাম্প বলেন, ব্যর্থতার জন্য ডেমোক্র্যাটদের লজ্জিত হওয়া উচিত। রিপাবলিকান পার্টি জিতলে আগামী চার বছর স্বর্ণযুগে পরিণত করার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।