নির্বাচনে যেতে দলগুলোর তাড়া, সংস্কারে ঢিমেতাল
দ্রুত জাতীয় নির্বাচনের জন্য উশখুশ করছেন রাজনৈতিক নেতারা। নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণার চাপে আছে সরকার। যদিও সরকার থেকে বলা হচ্ছে, প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হবে। তবে সরকার গঠিত সংস্কার কমিশনের কাজে নেই কাঙ্ক্ষিত গতি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচন নিয়ে সরকারের ধীরে চলো নীতি এবং সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক দলের অমনোযোগ দু’পক্ষের মধ্যে দূরত্ব বাড়াচ্ছে। একে অপরের মধ্যে সন্দেহ ও অবিশ্বাস তৈরির শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আবারও ষড়যন্ত্র করে বিএনপিকে বাদ দিয়ে কিছু করার চেষ্টা করবেন না। মাইনাস টু ফর্মুলা আগেও কাজ করেনি, ভবিষ্যতেও করবে না। নির্বাচন দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের আগ্রহের বিষয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।
অন্যদিকে, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম বলেছেন, সংবিধান সংস্কারে কমিশনের কাছ থেকে পাওয়া সুপারিশ বর্তমান সরকারই বাস্তবায়ন করবে। নির্বাচিত সংসদ ছাড়া সুপারিশ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া সম্পর্কে তিনি অবশ্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ঠিক করা হবে বলে মন্তব্য করেছেন।
বর্তমান সরকারের অঙ্গীকার অনুযায়ী রাষ্ট্র ব্যবস্থা সংস্কারের অংশ হিসেবে নির্বাচন ব্যবস্থা, পুলিশ, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশন, জনপ্রশাসন এবং সংবিধান সংস্কারে ছয়টি কমিশন গঠন করা হয়। এর মধ্যে সংবিধান সংস্কারে গঠিত কমিশন ছাড়া বাকিগুলো এখনও পূর্ণাঙ্গ রূপ পায়নি। অন্য পাঁচটিতে একজন করে ছাত্র প্রতিনিধি রাখার কথা বলা হলেও তা পূরণ হয়নি। এর বাইরে স্বাস্থ্য, শ্রমিক অধিকার, নারী অধিকার ও গণমাধ্যম সংস্কারে আরও চারটি কমিশন গঠনের লক্ষ্যে কমিশনপ্রধানদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। তবে এর সদস্য কারা হবেন, তা ঠিক হয়নি। এসব কমিশনের সুপারিশ সরকারের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য তিন মাস সময় নির্ধারণ করা হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, আগামী রোববার নাগাদ এই চার কমিশনের সদস্যদের নামসহ প্রজ্ঞাপন জারি হতে পারে। তবে সরকারের তরফ থেকে শিক্ষা ব্যবস্থাসহ আরও কয়েকটি খাত সংস্কারে কমিশন গঠনের কথা জানা গেছে।
সরকার-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বঙ্গভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে রাজনৈতিক দলগুলো যেনতেনভাবে নির্বাচন আয়োজনের চেয়ে রাষ্ট্র ব্যবস্থা সংস্কারকেই বেশি গুরুত্ব দেওয়ায় ঐকমত্য পোষণ করে। এরই ভিত্তিতে নতুন সরকার গঠিত হয়। কিন্তু এখন দ্রুত নির্বাচনের দাবি সরকারকে অস্বস্তিতে ফেলছে।
কমিশনগুলো যাতে চাপমুক্ত থেকে সংস্কারকাজ এগিয়ে নিতে পারে, সে জন্য সব কমিশনকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ পরিহারের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কমিশনের সুপারিশ পাওয়ার পর সরকারের তরফ থেকেই এসব বিষয়ে দলগুলোর পরামর্শ নেওয়া হবে বলে জানা গেছে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গঠিত হয় ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার। শুরুতে ছাত্রদের পক্ষ থেকে বিদ্যমান সংবিধান পাশ কাটিয়ে ‘অভ্যুত্থানের বিপ্লবী সরকার’ গঠনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। পরে আদালতের পরামর্শ নিয়ে সংবিধানের অধীনেই শপথ নেন উপদেষ্টারা। সরকার গঠনের পর বিদেশি কূটনীতিকের সঙ্গে মতবিনিময়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস বলেছিলেন, ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বৈরশাসন দেশের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দিয়েছে। এমন একটি সময়ে এসে দেশের দায়িত্ব নিয়েছি, যখন প্রায় সব ক্ষেত্রেই চরম বিশৃঙ্খলা। তাই নির্বাচন কমিশন, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গণমাধ্যমে সংস্কারের পর যত দ্রুত সম্ভব অন্তর্বর্তী সরকার একটি অবাধ, সুষ্ঠু এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের আয়োজন করবে।’ এরই ধারাবাহিকতায় সরকার গঠনের এক মাস পূর্ণ হওয়ার দিন জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা ছয়টি কমিশন গঠনে ছয়জন বিশিষ্ট ব্যক্তির নাম ঘোষণা করেন।
এদিকে রাজনৈতিক দলগুলো বলছে, নির্বাচনী প্রস্তুতি ও সংস্কার কার্যক্রম একই সঙ্গে চলতে পারে। রাষ্ট্র সংস্কারে সরকারের উদ্যোগে দলগুলোর সমর্থন রয়েছে– এ কথা তারা মুখে বললেও তাদের সব মনোযোগ নির্বাচনে। দেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি ইতোমধ্যে তাদের সমমনা দলগুলোর সঙ্গে নির্বাচনী আসন নিয়ে সমঝোতার কাজ করছে। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান এবং জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদার জন্য আসন নির্ধারণ করে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার নেতাদের কাছে চিঠিও পাঠিয়েছে বিএনপি।
সংবিধান সংস্কার কমিশনের ওয়েবসাইট চালু
যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী অধ্যাপক আলী রীয়াজের নেতৃত্বে গঠিত সংবিধান সংস্কার কমিশন ইতোমধ্যে ধারাবাহিক বৈঠক করে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তাদের সাতটি লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের কথা জানিয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার এই কমিশনের ওয়েবসাইট চালু করা হয়েছে। যাতে ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত সংবিধান সংস্কারের বিষয়ে আগ্রহী ব্যক্তি বা সংগঠন পরামর্শ, মতামত ও প্রস্তাব দিতে পারবেন।
গতকাল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়ে বলা হয়েছে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক থেকেও মতামত দেওয়ার সুযোগ আছে। এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে কমিশন পরিচিতি, নোটিশ বোর্ডে এই কমিশনের সাম্প্রতিক তথ্য, অংশীজনের প্রস্তাব, কমিশনের প্রতিবেদন, যোগাযোগের ঠিকানা ও গুরুত্বপূর্ণ লিঙ্ক পাওয়া যাবে।
নির্ধারিত সময়ে প্রতিবেদন দিতে চায় নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারে গঠিত কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার জানিয়েছেন, আইনকানুন সংস্কারে সরকার নির্ধারিত তিন মাস সময়ের মধ্যেই তারা প্রতিবেদন সরকারের কাছে জমা দিতে পারবে। ওই সুপারিশ নিয়ে দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করবে সরকার।
তবে চলমান সরকার পদ্ধতি এবং নির্বাচন পদ্ধতি পরিবর্তনের বিষয়েও ইতোমধ্যে বিভিন্ন মহল থেকে দাবি উঠেছে। সে ক্ষেত্রে সংবিধান সংশোধনের আগে নির্বাচন ব্যবস্থার আইনকানুন সংস্কারে সুপারিশ তৈরি কতটা যৌক্তিক– এমন প্রশ্নে ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, সংবিধান সংশোধন কমিশনের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ রয়েছে। এরই ভিত্তিতে তারা কাজ এগিয়ে নিচ্ছেন।
কাজ চূড়ান্ত করতে পারেনি বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন
বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন এ পর্যন্ত কোনো বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। তবে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা চলছে বলে কমিশন সূত্রে জানা গেছে। সুপ্রিম কোর্টে বিচারক নিয়োগের নীতিমালা প্রণয়নের কাজ করছে কমিশন। সে ক্ষেত্রে অংশীজনের সঙ্গে আলোচনার পর প্রতিবেদন প্রস্তুত করার কথা জানিয়েছে তারা। তবে এ ক্ষেত্রে কোনো রাজনৈতিক দলের মতামত নেওয়া হবে না। কমিশনের দেওয়া সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কথা বলবে উপদেষ্টা পরিষদ।
এদিকে আজ বুধবার রাজধানীর বিচার প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে সংস্কার কমিশন ফের বৈঠকে বসতে যাচ্ছে। কমিশনের প্রধান আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মোমিনুর রহমান জানিয়েছেন, আজকের বৈঠকের পর কাজের অগ্রগতি জানাবেন তারা।
দুদক সংস্কার কমিশন
দুদক সংস্কার কমিশনের কাজ অনেকটাই এগিয়েছে। আগামী ৭ জানুয়ারির মধ্যে সরকারের কাছে কমিশন প্রতিবেদন পেশ করবে। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে কমিশনের প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামান ও কমিশনের সদস্যরা গ্রুপভিত্তিক দুদকের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মতামত নিয়েছেন। দুদককে কী ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়, আইনি দিকসহ নানা বিষয়ে তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। দুদকের পক্ষে যারা মামলা করেছেন, আসামিপক্ষের আইনজীবী, অর্থ পাচার বিষয়ে অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের মতামত নেওয়া হয়েছে। আলোচনা হয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সঙ্গেও। এরই মধ্যে ই-মেইলে সাধারণ মানুষের দুই শতাধিক মতামত পাওয়া গেছে। স্বপ্রণোদিতভাবে পরামর্শ দিয়েছেন অনেকে। দুদক সংস্কার নিয়ে বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গেও আলোচনা হয়েছে।
দুদক সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, গবেষণা প্রতিষ্ঠান, বিশেষজ্ঞ, যারা গভর্নমেন্ট, সুশাসন নিয়ে যারা কাজ করছেন শিগগির তাদের মতামত নেওয়া হবে। এ নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বসা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), দি ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএমএবি)সহ গবেষণাধর্মী আরও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।
পুলিশ বাহিনী সংস্কার
পুলিশ বাহিনী সংস্কারে সফর রাজ হোসেনের নেতৃত্বে এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি সভা হয়েছে। পুলিশের বিভিন্ন পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের সঙ্গে কমিশন বৈঠক করেছে। সেখানে সংস্কার ব্যাপারে নানা মত উঠে আসে। ১৮৬১ সালের ঔপনিবেশিক আইন বদলে তা যুগোপযোগী করার কথাও বলেছেন কেউ কেউ। পুলিশকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার থেকে বিরত রাখার পক্ষে মত দেন অনেকেই।
এ ছাড়া পুলিশ সংস্কারের অংশ হিসেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে ‘কেমন পুলিশ চাই’–শিরোনামে জনমত চাওয়া হয়েছে। ১৭ বিষয়ে এই মতামত নেওয়া হচ্ছে। পুলিশ সংস্কারের ব্যাপারে জানতে চাইলে সফর রাজ হোসেন বলেন, সবার মতামত নিয়ে কীভাবে জনবান্ধব পুলিশ বাহিনী গড়ে তোলা যায়, সেটাই সুপারিশ করা হবে।
স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশন গঠন প্রক্রিয়াধীন
অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর স্বাস্থ্য খাত দ্রুত পরিবর্তন হবে– এমনটাই প্রত্যাশা ছিল সংশ্লিষ্টদের। তবে বাস্তবে তেমন কিছুই ঘটেনি। এখনও স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশন গঠনের কাজ প্রক্রিয়াধীন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হলেও অনিয়ম-দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার অবসান ঘটিয়ে এ খাতকে ঢেলে সাজানোর দৃশ্যমান কোনো তৎপরতাও চোখে পড়ছে না। গুরুত্বপূর্ণ এ খাতে চলমান অস্থিরতা দূর করতে উদ্যোগও আশানুরূপ নয় বলে অভিযোগ তুলেছেন এ খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বিষয়ভিত্তিক সংস্কার, চিকিৎসাসেবার গুণগত মানোন্নয়ন, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার কাঠামো শক্তিশালীকরণে গত ৩ সেপ্টেম্বর ১২ সদস্যের বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক এম এ ফয়েজকে এ বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সভাপতি করা হয়। তবে দায়িত্ব পাওয়ার ১০ দিন পর ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেন তিনি।
সভাপতি ছাড়া এ কমিটি তিন দফায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নুরজাহান বেগমের সঙ্গে বৈঠক করেছে। এমন পরিস্থিতিতে ১৭ অক্টোবর সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, রাষ্ট্র সংস্কারের অংশ হিসেবে সরকারের নেওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জাতীয় অধ্যাপক ডা. এ কে আজাদ খানকে স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশনের প্রধান করা হয়েছে। এমন ঘটনার পর ২০ দিন পার হলেও সরকার থেকে এ বিষয়ে কোনো প্রজ্ঞাপন হয়নি।
ফলে বিশেষজ্ঞ কমিটি খাত সংস্কারের কাজ করবে না। নতুন করে স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশন গঠন করা হবে এ নিয়েও দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছেন খাতসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। প্রায় তিন মাসে স্বাস্থ্য খাত ঢেলে সাজাতে সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে অর্ধশতাধিক সুপারিশ দেওয়া হয়েছে, তবে এখনও কাজ শুরু হয়নি।
এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য খাত সংস্কারবিষয়ক বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সদস্য ডা. সরকার মাহবুব আহমেদ শামীম বলেন, কমিটি গঠনের পর তিন দফায় বৈঠক হয়েছে। সংস্কারে তিন ধরনের পরিকল্পনা রয়েছে। বুধবার সকাল ১০টায় আরও একটি বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। এখানে স্বল্প মেয়াদে স্বাস্থ্য খাত সংস্কারের ১৩ দফা প্রস্তাব দিবে বিশেষজ্ঞ কমিটি।
স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশন প্রধান অধ্যাপক ডা. এ কে আজাদ খান বলেন, সরকার এখনও স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশন গঠনে পুরো প্রক্রিয়া শেষ করতে পারেনি। স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশন প্রধান নিয়োগে প্রজ্ঞাপন এখনও দেওয়া হয়নি। অন্যান্য খাত সংস্কার কাজ শুরু করলেও স্বাস্থ্য সংস্থার কমিশন গঠন প্রক্রিয়া শেষ না করতে পারলে স্বাস্থ্য খাতের সংস্কার পিছিয়ে যাবে। এ খাত সংস্কারে সম্মিলিত উদ্যোগ নেওয়ার জরুরি বলেও মনে করেন এই বিশেষজ্ঞ।
অন্ধকারে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান
নারীবিষয়ক কমিশনের কাজ এখনও শুরু হয়নি। মঙ্গলবার সমকালের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা জানান এ কমিশনের প্রধান শিরিন হক। তিনি বলেন, ‘আমার হাতে কোনো কাগজ আসেনি। আমি এখনও সরকারের কাছে থেকে কোনো ফিডব্যাক পাইনি।’ কবে নাগাদ কাজ শুরু হতে পারে জানতে চাইলে এই মানবাধিকার কর্মী বলেন, ‘বলতে পারছি না। ওটা সরকার বলতে পারবে।’
শ্রমিক অধিকার সংস্কার কমিশন
শ্রমিক অধিকারবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান করা হয়েছে শ্রমবিষয়ক আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদকে। তিনি বলেন, দু-এক দিনের মধ্যে হয়তো পূর্ণাঙ্গ কমিটির গেজেট প্রকাশ করা হবে। তবে ইতোমধ্যে কমিশনের সম্ভাব্য সদস্যের নিয়ে কাজ শুরু করে দিয়েছেন তিনি। যাতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে একটি সুপারিশ উপস্থাপন করতে পারে কমিশন। সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ জানান, শ্রমিক সংখ্যার আওতা বাড়ানোকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন তারা। কারণ, এখন পর্যন্ত শ্রমসংক্রান্ত সরকারের সব আলোচনা ও মনোযোগ শুধু প্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের কেন্দ্র করেই চলছে। অথচ বিশাল সংখ্যক শ্রমিকশ্রেণি রয়েছেন অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে, যারা সরকারি মজুরি কাঠামো কিংবা কোনো ধরনের সুযোগ-সুবিধার আওতার মধ্যে নেই।
দ্বিতীয় অগ্রাধিকার হিসেবে কারখানা পর্যায়ে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির কথা ভাবছেন তারা। এ বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কারণ হচ্ছে, শ্রমসংক্রান্ত যে কোনো সমস্যা দেখা দিলে যাতে কারখানা পর্যায়েই দ্রুত সমাধান দেওয়া সম্ভব হয়। এ ধরনের বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি ব্যবস্থা শ্রমিক-মালিক– সব পক্ষের জন্যই মঙ্গলজনক।