International

উত্তর গাজায় যুদ্ধের রক্তাক্ত চক্র

কয়েক সপ্তাহে বাস্তুচ্যুত ১ লাখ, হাজারের বেশি মানুষ নিহত

ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী গত বছর প্রথম গাজায় প্রবেশের পর উত্তর গাজাকে লক্ষ্যে পরিণত করে। এটা ছিল অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা, যা সজ্জিত ছিল নান্দনিক ভবনে। ইসরায়েলের সীমান্তের কাছের এলাকাগুলোতে ছিল স্ট্রবেরির বাগান। তখন ইসরায়েল বলে, হাজার হাজার হামাস যোদ্ধা লুকিয়ে আছেন ভবনগুলোর ভেতরে। তারা হামলা চালাল আবাসিক এলাকা, হাসপাতাল ও স্কুলের আশ্রয়কেন্দ্রে। এগুলো ছিল যুদ্ধের অন্যতম ভয়াবহ মুহূর্ত। এখন প্রায় এক বছর পর আবার উত্তর গাজায় একই জিনিস ঘটছে। গত পাঁচ সপ্তাহ ধরে হামলার নতুন কেন্দ্র উত্তর গাজা। 

গতকাল মঙ্গলবার দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে আসে। ইসরায়েল বলছে, উত্তর গাজায় হামাসের পুনরুত্থান হয়েছে। এ কারণে প্রতিদিন সেখানে সামরিক বাহিনী, ট্যাঙ্ক ও সশস্ত্র ড্রোন দিয়ে হামলা চালানো হচ্ছে। 

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, সম্প্রতি ইসরায়েলের হামলার জেরে ১ লাখের বেশি বাসিন্দা বাস্তুচ্যুত হয়েছেন; মারা গেছেন ১ হাজারের বেশি। 

স্থানীয় বাসিন্দা ও চিকিৎসকরা বলছেন, এত মৃতদেহ রাস্তার কুকুর এখন তাদের দেখলেও ধাওয়া করছে। 

উত্তর গাজার ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক ইসলাম আহমেদ জানান, গত চার সপ্তাহ ধরে এখানে জীবন কেমন– এটা এক কথায় বলতে গেলে বলতে হবে, লোকজনকে নির্মূল করা হচ্ছে। 

উত্তর গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ আবারও ফেরার মধ্য দিয়ে এটা প্রতীয়মান হয়, কীভাবে একটি যুদ্ধ এক রক্তাক্ত আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে; হামাসকে ধাওয়া করতে গিয়ে কীভাবে বেসামরিক মানুষ নিহত হচ্ছেন। ইসরায়েলের দু’জন নিরাপত্তা কর্মকর্তা এ প্রক্রিয়াকে ‘ঘাস কাটা’র সঙ্গে তুলনা করেন। এ বাগধারাটি গত কয়েক বছর ধরে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুসহ সামরিক বাহিনীর মধ্যে বেশ পরিচিত। তাদের বলতে শোনা যায়, যখনই হামাস আবার বাড়বে, তখনই ইসরায়েলি বাহিনী তাদের কাটতে আসবে।

গত ১৪ মাস ধরে চলা গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ চলছে মূলত এ পরিকল্পনায়। এখনও গাজার সিংহভাগ এলাকা ইসরায়েলের দখলে নেই। তাছাড়া যুদ্ধোত্তর কোনো পরিকল্পনাও নেই নেতানিয়াহুর। ইসরায়েলি বাহিনী বলেছে, উত্তর গাজায় তারা আরও এক মাস থাকতে পারে।

উত্তর গাজার অবস্থা এখন এক বছর আগের চেয়ে ভয়াবহ। সেখানে অবকাঠামো ভেঙে পড়ছে, মানবিক সহায়তা প্রবলভাবে সীমিত করা হয়েছে, অনেক জরুরি সেবাকর্মী ও ত্রাণ সংস্থা কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে। গত শুক্রবার জাতিসংঘ সমর্থিত একটি প্যানেল বলেছে, সেখানে দুর্ভিক্ষ অনেকটা সন্নিকটে। হামাস সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, চরম হামলার ঝুঁকির মধ্যে গত মাস থেকে তারা ওই এলাকায় উদ্ধার অভিযান আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ রেখেছে। তবে এখনও সেখানে সক্রিয় আছে ফিলিস্তিনের রেড ক্রস। উত্তর গাজায় অবকাঠামো এমনভাবে ধ্বংস হয়েছে, কোনো অ্যাম্বুলেন্স সেখানে প্রবেশ করতে পারে না।

 জাবালিয়ার বাসিন্দা হাসেম আল শরিফ বলেন, তারা এমন এক পর্যায়ে আছেন, যেখানে সামান্য আহত ব্যক্তির মৃত্যু হয় অবিরাম রক্ত ঝরে। হাসপাতালে মারা যাচ্ছেন চিকিৎসারত রোগীরা।

বিবিসি জানায়, সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গাজায় ‘গণহত্যার’ অভিযোগ করে এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। সোমবার মুসলিম ও আরব নেতাদের নিয়ে ওআইসি সম্মেলনে তিনি লেবানন ও ইরানে হামলার সমালোচনা করেন। পাশাপাশি তিনি পশ্চিম তীর ও গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনাদের পূর্ণাঙ্গ প্রত্যাহারের আহ্বান জানান। রিয়াদে এই সম্মেলনে ফাঁকে তিনি তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোয়ানের সঙ্গেও বৈঠক করেন।

লেবাননে ৫০ ও গাজায় ৪০ জন নিহত

ইসরায়েলের হামলায় গতকাল এক দিনে লেবাননে আরও অর্ধশতাধিক জন নিহত হয়েছেন। গাজায় প্রাণ গেছে ৪০ জনের। হতাহতদের অধিকাংশেই নারী ও শিশু। সেখানে হামাসের পাল্টা হামলায় ইসরায়েলের চার সেনা নিহত হন। এ অবস্থায় ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল ইসরায়েল জিভ বলেছেন, নেতানিয়াহু নিজের রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত ফায়দার জন্য গাজা ও লেবাননে যুদ্ধ জারি রেখেছেন।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button