এলডিসি থেকে উত্তরণে সাহসী সংস্কার দরকার
স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) কাতার থেকে উত্তরণের বহুমুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাহসী ও কার্যকর সংস্কার করতে হবে। বিভিন্ন পক্ষের বাধায় এ সংস্কার কার্যক্রম অত্যন্ত জটিলতার মুখে পড়তে পারে। তাই প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে কিংবা সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে বলিষ্ঠ নেতৃত্ব দিয়ে সংস্কার কাজ এগিয়ে নিতে হবে।
রোববার এক কর্মশালায় দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞরা এসব কথা বলেন। সাপোর্ট টু সাসটেইনেবল গ্র্যাজুয়েশন প্রকল্পের আওতায় মসৃণ উত্তরণ কৌশল (এসটিএস) সংক্রান্ত প্রতিবেদনের খসড়া উপস্থাপন উপলক্ষে এ কর্মশালার আয়োজন করা হয়। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) এবং জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক সম্পর্ক বিভাগ (ইউএনডেসা) রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ এতে প্রধান অতিথি ছিলেন। বক্তৃতায় তিনি বলেন, রপ্তানিতে খুব বেশি সমস্যা হবে না। কারণ শুল্কমুক্ত সুবিধা ছাড়াই যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ভালো করছে বাংলাদেশ। বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারের স্থিতিশীলতা ফিরেছে। রপ্তানি বাড়ছে। তবে ব্যবসায়ীদের আত্মবিশ্বাস এখনও ফেরেনি। সেটাও ফিরবে। সরকার রাজস্ব, ব্যাংক খাতসহ অর্থনীতির সব খাতের সংস্কার করছে। সব খাতের সংস্কারের একটা পথনকশা দিয়ে যাবে এ সরকার, যাতে পরবর্তী সরকার সে অনুযায়ী সংস্কার কাজ এগিয়ে নিতে পারে। এলডিসির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় সহায়তা দেবে সরকার। উৎপাদনশীলতা বাড়াতে উদ্যোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
এলডিসি থেকে মসৃণ উত্তরণ কৌশল সম্পর্কিত খসড়া প্রতিবেদনে বলা হয়, উত্তরণের পর অর্থনৈতিক এবং অর্থনীতিবহির্ভূত বিভিন্ন খাতে চ্যালেঞ্জ তৈরি হবে। বর্তমানে এলডিসি হিসেবে বাংলাদেশের ৭৫ শতাংশ রপ্তানি পণ্য শুল্কমুক্ত সুবিধা পেয়ে থাকে। এলডিসি থেকে উত্তরণের পর এ সুবিধা আর থাকবে না। দেশভেদে গড়ে ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ হতে পারে। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) পর্যবেক্ষণ, এতে প্রধান বাজারগুলোতে রপ্তানি কমবে অন্তত ১৪ দশমিক ৩ শতাংশ। এতে রাজস্ব, কর্মসংস্থান, ভোগ চাহিদা কমে যেতে পারে। বিপরীতে বাড়তে পারে দারিদ্র্য, যা সামষ্টিক অর্থনীতিতে চাপ তৈরি করবে। আগামী ২০২৬ সালের নভেম্বরে এলডিসি থেকে উত্তরণের চূড়ান্ত প্রক্রিয়ায় রয়েছে বাংলাদেশ।
খসড়া প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন এসটিএস সংক্রান্ত জাতীয় পরামর্শক অর্থনীতিবিদ ড. এম এ রাজ্জাক। এতে তিনি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় পাঁচটি স্তম্ভের ওপর গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলেন। এগুলো হচ্ছে– সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা, উত্তরণ-পরবর্তী সময়ে অগ্রাধিকারমূলক বিভিন্ন বাণিজ্যিক সুবিধা নিশ্চিত করা, রপ্তানিতে বহুমুখীকরণ, প্রতিযোগিতা ও উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ানো এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও অংশীদারিত্ব জোরদার করা। রপ্তানি বাণিজ্য সুবিধা অব্যাহত রাখতে বাংলাদেশের প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদারদের সঙ্গে নিয়মিত আলাপ আলোচনা চালাতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে প্রতিবেদনে। এতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিভিন্ন খাতে প্রয়োজনীয় সংস্কার কার্যক্রম ত্বরান্বিত করতে সরকারের
শীর্ষ পর্যায় থেকে সাহসী নেতৃত্ব দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
কর্মশালায় বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়সংক্রান্ত বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া, এসডিজিবিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ, বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি গুয়েন লুইস ও জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসির (ইউএন-সিডিপি) সদস্য তেফারে তেসফাচিউ। সভাপতিত্ব করেন ইআরডি সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের ছিদ্দিকী। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থার কর্মকর্তা এবং বেসরকারি খাত, গবেষণা সংস্থা ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন।